মাস্কেও জীবাণুু ছড়ায়, যদি...
রেফায়েত হোসাইন || বিজনেস ইনসাইডার

মাস্ক হাতের কনুইতে রাখা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (১৬ এপ্রিল): করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতেই আমরা সবাই মাস্ক ব্যবহার করছি। এখন যেন এটি জীবনে অন্য দৈনন্দিন অনুষঙ্গেরই একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সঠিকভাবে এ মাস্ক ব্যবহার না করলে বা একটু সচেতন না হলে এর ব্যবহারই আমাদের সুরক্ষা না দিয়ে ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ। ভূমিকা রাখতে পারে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বাহক হিসেবে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত মাস্ক এখন আমাদের নিত্য সঙ্গী। তাই এর সঠিক ব্যবহার আমাদের সবার জন্যই জানা জরুরি।
আমাদের সবার মাঝে অল্প-বিস্তর বদ অভ্যাস রয়েছে। এ অভ্যাসগুলো বদলাতে পারলে আমরা নিজেরা যেমন নিরাপদে থাকতে পারি, তেমনি আমাদের চারপাশের অন্যরাও থাকতে পারেন নিশ্চিত। আমাদের জীবনের নতুন অনুষঙ্গ মাস্ক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই সচেতনতা অবলম্বন করি না। যেমন মাস্ক ব্যবহারে নিয়মিত হলেও অনেকেই প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে খাবার বা পানি পানের সময় মাস্কটাকে থুতনিতে নামিয়ে রাখি বা টুকটাক কাজের সময় মাস্কটাকে হাতে গলিয়ে দেই।
এ দুইভাবেই কিন্তু আমরা মাস্ক ব্যবহারের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছি। এর মাধ্যমে করোনার জীবাণু আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ধরনের আচরণকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মাস্ক ব্যবহারের বদ অভ্যাস বলেই উল্লেখ করেছেন।
থুতনিতে মাস্ক নামিয়ে রাখা: আমাদের ব্যবহার করা মাস্কের উপরিভাগে জীবাণু থাকে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালের সংক্রমক রোগ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. ক্যাথরিন অনং বলেন, সংক্রমিত কোনো ব্যক্তির মাস্কের উপরিভাগে ভাইরাসের জীবাণু খুব সহজেই বিস্তার ঘটে। এ ছাড়া ব্যবহৃত মাস্কে শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে কিছুটা আর্দ্র থাকে। তাই মাস্কের উপরিভাগের চেয়ে ভেতরের অংশে জীবাণুর বেঁচে থাকার জন্য সহায়ক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডা. হুয়াং বলেন, মাস্কের উপরিভাগে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং বাহ্যিক পরিবেশের ময়লায় আবৃত থাকে বলে সেটা কোনোভাবেই ভালো কিছু নয়। তিনি বলেন, থুতনিতে মাস্ক নামিয়ে রাখার মনে হচ্ছে মাস্কের বাইরের অংশ আমাদের মুখের সংস্পর্শে আসতে পারে। ঠোঁটের সংস্পর্শে এসে ওই জীবাণু সরাসরি আমাদের মুখের ভেতর ও মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হাতের কনুইতে মাস্ক রাখা: ক্ষণিকের জন্য সুবিধাজনক হলেও ব্যায়াম বা অন্যকোনো কাজ করার সময় ব্যবহৃত মাস্ক হাতের কনুইতে রাখা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ডা. হুয়াং বলেন, কোভিড ১৯ সংক্রমণের বিস্তারে ঘামের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। আর ঘর্মাক্ত অবস্থায় আমরা নিজের অজান্তেই মুখমণ্ডল স্পর্শ করি। এভাবে হাত থেকে চোখ, নাক এবং মুখের মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, মাস্কের উপরিভাগের মাধ্যমে আমাদের মুখে আরও বেশি জীবাণু ঢুকে যেতে পারে। ডা. হুয়াং বলেন, হাত দিয়ে আমরা অনেক কিছু স্পর্শ করি, ধরি। এভাবে অন্য কিছু স্পর্শ করার পর নাক, মুখ স্পর্শ করার মাধ্যমে সহজেই জীবাণু ছড়িয়ে দিতে পারি।
তাহলে জগিং বা ব্যায়াম করার সময় মাস্ক নিরাপদে রাখার উপায় কী? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, এ সময় বাহ্যিক পরিবেশ থেকে মাস্ককে নিরাপদে রাখার জন্য একটি ছোট ক্যারিয়ার ব্যবহার করতে পারি। ডা. হুয়াং বলেন, আমরা যদি সঙ্গে করে মোবাইল ফোন, ব্যাঙ্ক কার্ড বয়ে বেড়াতে পারি, তাহলে একটি জিপলক ব্যাগ বহন করা তো কেবলই অভ্যস্ততার ব্যাপার। এটা সহজেই ফোনকেস বা পকেটে ঢুকিয়ে রাখা যায়।
মাস্ক ভাঁজ করে পকেটে রাখা: সরাসরি টেবিলে না রেখে ব্যবহৃত মাস্ক যদি ভাঁজ করে পকেটে রাখাকে নিরাপদ ভেবে থাকেন তাহলে সেটাও ভুল। ডা. হুয়াং বলেন, আমাদের সঙ্গে থাকা সবচেয়ে নোংরা বস্তু হচ্ছে আমাদের ফোন ও ওয়ালেট। আমরা বাইরের বিভিন্ন জিনিসপত্র স্পর্শ করি। তারপর ফোন বা ওয়ালেট ধরি। এভাবে সেখানে জীবাণুর সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তাই এক্ষেত্রেও নিরাপদ উপায় হচ্ছে একটি ক্যারিয়ার বা মাস্ক হোল্ডার ব্যবহার করা। তাই ভাঁজ করে মাস্ক পকেটে রাখা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
মাস্ক কীসের তৈরি সেটা কি গুরুত্বপূর্ণ: কাপড়ের তৈরি পুনরায় ব্যবহার উপযোগী মাস্ক তরল-বস্তু প্রতিরোধী নয়। এটি সহজেই ঘাম বা কোনো তরল জাতীয় পদার্থ শুষে নিতে পারে। তাই এ ধরনের মাস্ক স্পঞ্জের মতো কাজ করে। এগুলো হাত বা থুতনি থেকে আর্দ্র জাতীয় পদার্থ শুষে নিয়ে মুখ এবং নাকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে দিতে পারে।
ডা. হুয়াং বলেন, ‘ডিসপোজ্যাবল সার্জিক্যাল মাস্ক তরল পদার্থ প্রতিরোধী এবং বার বার ব্যবহার উপযোগী সুতি মাস্কের চেয়ে ভালো ফিল্টার করতে পারে। তবে ডিসপোজ্যাবল কাগজের মাস্কের কার্যকারিতা সমান নয়।’
সিএনএ লাইফস্টাইল অবলম্বনে