মঙ্গলবার

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


১ আশ্বিন ১৪৩২,

২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

করোনা সংক্রমণে অবসরকালীন সঞ্চয়

বিআই ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ৯ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ২২:০৩, ১০ এপ্রিল ২০২১
করোনা সংক্রমণে অবসরকালীন সঞ্চয়

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা (০৯ এপ্রিল): আপনার বয়স ২০-এর কোঠায় হোক বা কর্ম থেকে অবসরের যাবার প্রাক্কালে হোক বর্তমান বৈশ্বিক করোনা মহামারি আপনার অবসর পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলেছে। 

এখন যেভাবে সঞ্চয় করবেন: বর্তমানে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে তাতে অবসরের জন্য অর্থ সঞ্চয় করাটা বেশ চ্যালেঞ্জের। এখন বেকারত্বের হার রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর শেয়ার বাজারের অবস্থাও টালমাটাল। তাই, এ সময়ে অর্থ সাশ্রয় ও অবসরকালীন সঞ্চয়ের প্রথাগত কোনো পরামর্শই খাটবে না। করোনা মহামারির এ সময়ে অবসরের জন্য অর্থ সঞ্চয়ের জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।

৬০ ভাগ সমাধানের চেষ্টা: অবসরের পথে আপনি কোন পর্যায়ে রয়েছেন সেটা কোনো বিষয় নয়, সঞ্চয়ের জন্য সিএনবিসির ইনভেস্ট ইন ইউ’র প্রধান কন্ট্রিবিউটর এবং পরসোনাল ফাইন্যান্সের সিনিয়র সংবাদদাতা শ্যারন অ্যাপারসন ৬০ ভাগ সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন। এ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ভাগগুলো হচ্ছে, আপনার মোট আয়ের ৬০ ভাগ ব্যয় করতে হবে খাদ্য, বাসস্থান, মুদিবাজার, ঋণ ও শুল্ক বা কর দেওয়ার মতো অত্যাবশ্যক খাতে। ১০ ভাগ ব্যয় করতে হবে জরুরি প্রয়োজন বা স্বল্পমেয়াদী সঞ্চয়ের জন্য। আর ২০ ভাগ ব্যয় করতে হবে দীর্ঘমেয়াদী বা অবসরকালীন সঞ্চয়ের জন্য। অবশিষ্ট বাকি ১০ ভাগ স্বাভাবিক সময়ে ব্যয় করা হতো ‘চিত্ত বিনোদনের’ খাতে। অর্থাৎ এ অর্থ বাড়ির বাইরে খাওয়া-দাওয়া, প্রমোদ ভ্রমণের খাতে ব্যয় করা হতো।

কিন্তু করোনাভাইরাস এখন সময় পাল্টে দিয়েছে। এখন আনন্দভ্রমণ বা বাইরে ডিনার করা নয়, ঋণমুক্ত থাকার বিষয়টি প্রকৃত মানসিক শান্তি এনে দিতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল থাকা এবং জরুরি প্রয়োজনে ব্যয় করার মতো ব্যাংকে পর্যাপ্ত অর্থ থাকাও মানসিক চাপ অনেক কমাতে পারে। তাই, অবশিষ্ট ১০ ভাগ সঞ্চয় হিসেবেই এ সময়ে ব্যাংকে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।  

সম্ভব হলে বিনিয়োগ করুন: করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করার মতো অবস্থা সবার থাকে না। তবে যাদের এখনো পর্যাপ্ত আয়ের সুযোগ রয়েছে, নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন এবং জরুরি প্রয়োজনের জন্য সঞ্চয় করতে পারছেন, কারো কাছে ঋণ নেই, তাহলে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সুযোগ তাদের রয়েছেÑ কথাগুলো বলছিলেন সান গ্রুপ ওয়েলথ পার্টনার্সের ম্যানেজিং পার্টনার উইনি সান।

পরিস্থিতি যদি আপনার বিনিয়োগের অনুকূলে হয় তাহলে এ সময়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দুইগুণ বা তিনগুণ বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন সান। এক্ষেত্রে এমন মায়ের উদাহরণ অনুসরণ করা উচিত যিনি প্রয়োজনের তিনটি জিনিস না কিনে ৫ হাজার ডলার বাঁচানোর চেষ্টা করেন।

স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় পরিকল্পনার সুযোগ গ্রহণ: ইকো ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা ইকো হুয়াং বলেছেন, অবসরের জন্য সঞ্চয় করতে সক্ষম অনেকেই জানেন, তাদের এ সঞ্চয়টা করা জরুরি। কিন্তু দৈনন্দিন ব্যয়ে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা সেটা করতে পারেন না। তিনি বলেন, সঞ্চয় না-করার জন্য এসব মানুষের অনেক অজুহাত দেখাতে পারেন। এসব অজুহাতের মধ্যে রয়েছে, এখন শেয়ার বাজার থেকে অর্থ উপার্জন বেশ কঠিন, পরিস্থিতি ভালো হলে সঞ্চয় করে পরে বিনিয়োগ করব ইত্যাদি। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আন্তনিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভর না করে তিনি সঞ্চয়ের জন্য ভালো কোনো পন্থা খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় পরিকল্পনার পরামর্শ দিয়েছেন।

অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নয়: নিউইয়র্কের বেটারমেন্ট ফর বিজনেসের ফাইন্যানসিয়াল প্ল্যানার এবং সিএফপি ফ্রেড এগলার বলেন, অবসরের জন্য সঞ্চয়ের জন্য যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন, বাজার মন্দা থাকলে তাদের অনিশ্চয়তায় ভোগা স্বাভাবিক। তবে পরিস্থিতি মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এগলার। তিনি বলেন, অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখেছি একজন বিনিয়োগকারী যখন বার বার তার বিনিয়োগের পরিমাণ পরিবর্তন করেন, তখন এ থেকে প্রাপ্ত আয়ের পরিমাণও কমে যায়। এগলার বলেন, অনবরত লোকসানের শিকার না হলে, পরিকল্পনা পরিবর্তন করা সাধারণত খুব ভালো সিদ্ধান্ত নয়। তবে যারা অবসরে যাওয়ার দ্বারপ্রাপ্ত রয়েছেন, তাদের ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।    

উচ্চ সুদের সঞ্চয়ী হিসাব: ওয়ালেটহাবের বিশ্লেষক জিল গঞ্জালেস বলেছেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে যারা অস্বস্তি বোধ করেন বা করতে পারেন না অথবা অচিরেই অর্থের প্রয়োজন হতে পারেÑ এমন মনে হলে উচ্চ হারে সুদ দিচ্ছে এমন সঞ্চয়ী হিসাবে অর্থ রাখাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রয়োজনে অবসর তহবিলের রাশ টানুন: পারিবারিক অর্থব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রেয়া ওরোচ বলেছেন, ২০ থেকে ৪০ বছরের কর্মীদের করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের এখনো সুযোগ রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় খরচ ও কর্মহীন হলেও চলার মতো পর্যাপ্ত সঞ্চয় থাকলে অবসরকালীন সঞ্চয় অব্যাহত রাখা যেতে পারে। অর্থাৎ জরুরি তহবিলের (সাধারণত ছয় মাস চলার মতো খরচ) জন্য যদি পর্যাপ্ত তহবিল না-থাকে, সেক্ষেত্রে শেষ উপায় হিসেবে অবসরের  সঞ্চয় হিসেবে অর্থ জমা আপাতত বন্ধ রেখে সেই অর্থ সঞ্চয় করা যেতে পারে।   

ওরোচ বলেন, অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হতে পারে সেটা আমাদের জানা নেই। এ ছাড়া এ অবস্থাতে চাকুরিরও নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থায় জরুরি তহবিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, তবে অবসরকালীন সঞ্চয়ে অর্থ জমা একেবারে বন্ধ রাখা ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে তিনি জমানোর পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।  

সময় বুঝে বিনিয়োগে সতর্কতা: আতঙ্কের কারণে উদ্বুদ্ধ বা ভালো বিনিয়োগের সুযোগ যে কারণেই হোক না কেন সুযোগ বুঝে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের চেষ্টা অত্যন্ত বিপজ্জনক। ডেলওয়ারের সোফির সিএফপি এবং ফাইন্যানসিয়াল প্ল্যানিং ম্যানেজার ব্রায়ান ওয়ালস বলেন, গড়পড়তার বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার বাজারে সুযোগ বুঝে বিনিয়োগের বিষয়টি খুব ভালো বিকল্প নয়। ওই সময়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নীতি পরিবর্তিত হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি পরামর্শ দেন এ সময়ে নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু করা উচিত।

প্রণোদনার অর্থ বিনিয়োগে সতর্কতা: স্বাভাবিক সময়ে নিজস্ব আয় বা অন্য কোনো খাত থেকে আসা অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ অবসরের জন্য সঞ্চয় করা শ্রেয়। তবে করোনা ভাইরাসের সময়েও আর্থিক প্রবাহ যদি আগের মতোই থাকে তাহলে আগের মতোই অবসরকালীন সঞ্চয় করা উচিত।

উইনি সান বলেন, অনেকে প্রণোদনা প্যাকেজ পাচ্ছেন। তাদের উচিত এ অর্থ অন্য কোথাও বিনিয়োগ না করে এমনভাবে রাখা যাতে যেকোনো সময় প্রয়োজনে একে কাজে লাগানো যায়। তিনি বলেন, পরিস্থিতি ভালো হলে, আয় নিয়মিত হবে। তখন আবার নিয়ম মেনে অবসরের জন্য সঞ্চয় করা যাবে।  

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়