শনিবার

২৭ এপ্রিল ২০২৪


১৪ বৈশাখ ১৪৩১,

১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নে আগ্রহী সরকার

আসিফ শওকত কল্লোল || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ১৪ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৩:৫৪, ১৪ আগস্ট ২০২২
সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নে আগ্রহী সরকার

ছবি: বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (১৪ আগস্ট): বাংলাদেশ সরকার সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করতে প্রস্তুত। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে, তা বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কোনোপক্ষই প্রস্তুত হয়নি।

এদিকে, সেগুলো ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সর্বশেষ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ গত মার্চে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন এবং বিভিন্ন আকারের প্রায় দশটি প্রকল্পে প্রায় দশ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সৌদির ওই বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী। কারণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যেহেতু দেশটি তীব্র বিদ্যুতের ঘাটতির সম্মুখীন। দেশের চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে। এ কারণে সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুত প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন চায় সরকার। তাই, বিদ্যুৎ খাতে রিয়াদের বিনিয়োগকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ কমিশনের (জেসি) ১৪ তম বৈঠকের আগে কর্মকর্তারা কাগজপত্র তৈরি করছেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ইতোমধ্যে বৈঠকের কার্যক্রম চূড়ান্ত করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সৌদি একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে চায়।

এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ শুরু হলে চলতি অর্থবছরের মধ্যে প্রায় দশ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে আসবে বলে সূত্র জানায়।

এর আগে, ২০১৯ সালে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিগুলো কর্মে রূপান্তরিত হলে বাংলাদেশের সঙ্গে কেএসএর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আরামকো তেল শোধনাগার নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে আগ্রহ দেখিয়েছে। এতে প্রায় এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার থেকে দুই বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। কিংডমের ফার্ম ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন এলএলসি বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে খুবই উৎসাহী। কোম্পানিটি সাতটি প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রায় ১ দশমিক ৬৮৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে বলেন, এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সৌদি আরবের বিনিয়োগ বিশেষভাবে প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে যেসব কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে তাদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন অন্যতম। কিছু সৌদি বিনিয়োগ ইতোমধ্যে পাইপলাইনে রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের অধীনে রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালসহ পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, সৌদি বিনিয়োগ অনেকাংশে নির্ভর করবে 'আমরা পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলো কতটা সফলভাবে পরিচালনা করছি' তার ওপর।

এসিডব্লুউএ পাওয়ার, একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শক্তি কোম্পানি, যারা চট্টগ্রামে একটি ৭৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদিকে, আল-ফানার একটি যৌথ উদ্যোগের অধীনে ১০০ মেগাওয়াট আইপিপি সৌর প্রকল্প নির্মাণের জন্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে। আল বাওয়ানি কিছু নির্মাণ ও প্রকৌশল প্রকল্পের জন্য দক্ষ মানব সম্পদ নিয়োগের জন্য প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।

সৌদি আরব যেসব খাতে বিনিয়োগ করতে চায় তার মধ্যে রয়েছে জনশক্তি ও কর্মসংস্থান, দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নয়ন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ধর্মীয় খাত।

আগামী ৩০-৩১ অক্টোবর সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, জনশক্তি রফতানি এবং উৎপাদিত পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি, হালাল পণ্য বিশেষ করে মাছ ও মাংস রফতানি, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রফতানি এবং সার উৎপাদনে রিয়াদের সহযোগিতা চাইবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে যৌথ কমিশন বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ।

বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, ইতোমধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো এখনই বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। 

তিনি জানান, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) উৎপাদনের বিষয়ে পেট্রোবাংলা ও আরামকোর মধ্যে চুক্তি হবে। এতে দেশের এলএনজি সংকট দূর হবে।

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়