থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) ব্যাংকক পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় । প্রধানমন্ত্রী ব্যাংককের ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুপুর ১টা ০৮ মিনিটে (স্থানীয় সময়) পৌঁছালে থাই উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল তাকে স্বাগত জানান।
বিমানবন্দরে তাকে স্ট্যাটিক গার্ড অব অনার এবং ১৯ বার গান স্যালুট দেওয়া হয়। থাইল্যান্ডের মিনিস্টার ইন অ্যাটেনডেন্স পুয়াংপেত চুনলাইয়েদ, বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদি সুমিতমোর এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল হাই বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফর উপলক্ষে গত সোমবার (২২ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় ধরনের সফর। এই সফর উভয় পক্ষের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এতে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের (বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড) মধ্যে সহযোগিতার নতুন জানালা উন্মোচিত হবে।’
গত জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর এটিই হবে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন এবং জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনার অভিপ্রায়পত্রসহ বেশ কিছু সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর করবে।’
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড সরকারী পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি, শক্তি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য পর্যটন খাতে সহযোগিতা এবং শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আরও দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই সফর বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনার সুযোগ তৈরি করবে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার জন্য বাংলাদেশের আবেদনের বিষয়টি ঢাকা জোরালোভাবে উত্থাপন করবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হিসেবে থাইল্যান্ডের প্রতি তার তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করবে।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার উভয়ই আসিয়ানভুক্ত, তাই রোহিঙ্গা ইস্যুটি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সফরে বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল ও সমুদ্র সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হবে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, বৌদ্ধ সার্কিট কর্মসূচি প্রচারের পাশাপাশি ভ্রমণ ও অবকাশ শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা বিনিময় করতে পারে। পর্যটন শিল্পে এই সহযোগিতা উভয় দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
আগামী ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন স্বাগত জানাবেন এবং তাকে একটি আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে একান্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন, নথিতে স্বাক্ষরে উপস্থিত থাকবেন, একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং এরপর সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে থাই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একটি রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী রাজপ্রাসাদে থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরাক্লাওচাওয়ুহুয়া ও রানি সুথিদা বজ্রসুধাবিমলালক্ষণের রাজকীয় দর্শকদের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৫ এপ্রিল ইউএনএসক্যাপ-এর ৮০তম অধিবেশনে যোগদান করবেন এবং সেখানে ভাষণ দেবেন। একই দিনে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল ও এসক্যাপের নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাবানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ‘লিভারেজিং ডিজিটাল ইনোভেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৮০তম অধিবেশনটি টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে অঞ্চলব্যাপী সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ জোরদার করার একটি সুযোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিজিটাল উদ্ভাবন কীভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে অবদান রাখতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সরকারি নেতা ও মন্ত্রী এবং অন্যান্য মূল অংশীজনদের এই অধিবেশনে একত্রিত করা হচ্ছে।