শুক্রবার

২৬ এপ্রিল ২০২৪


১৩ বৈশাখ ১৪৩১,

১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

২০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৭:০২, ২২ মে ২০২২   আপডেট: ১৮:৫৯, ২২ মে ২০২২
২০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা (২২ মে): আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। বিকল্প বাজেটে মোট ৩৩৮টি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ উৎস রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যেখানে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি কালো টাকা উদ্ধার ও পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে বাজেট ঘাটতি পূরণের কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি তাদের প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও ব্যাংক ঋণকে নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। 

আজ রবিবার সকালে অর্থনীতি সমিতির অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩: একটি জনগণতান্ত্রিক বাজেট প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর আবুল বারকাত এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। 

অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, প্রস্তাবিত জনগণতান্ত্রিক ২০ লাখ ৫০ হাজার ২৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করছি। যা বর্তমান বাজেটের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ গুণ বেশি। যেখানে ৩৩৮টি সুপারিশ রয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— সমাজ থেকে চার ধরনের বৈষম্য যথা: আয় বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য ক্রমাগত হ্রাস করে নির্মূলের দিকে যাওয়া। এ লক্ষ্যে আয় ও ব্যয় খাতে মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। এ ছাড়া রয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের সুপারিশ।

অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। শর্ত হল কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। সরকার মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দিচ্ছে তা বাস্তবসম্মত নয়। দ্বিতীয়ত খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোনো অবস্থাতে বাড়ানো যাবে না।

তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ নিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট যে যখন থেকে আমরা অন্তত ৪-৫টি মেগাপ্রকল্পের সুদ পরিশোধ শুরু করব, তখন থেকেই ঋণের ক্ষেত্রে সরাসরি রেড জোনে চলে যাব। যা আনুমানিক হিসাবে ২০২৭-২০২৮ সালে শুরু হওয়ার কথা। আর ২০৩২ সালে যখন ১২টি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের দিকে যাব, তখন বিপদ আরও প্রকট হওয়া আশঙ্কা রয়েছে। বৈশ্বিক মহামন্দা, বৈশ্বিক মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব ভবিষ্যতে আমাদের বৈদেশিক ঋণের রেড ঝুঁকিতে ফেলবে কি-না তা নিয়ে কঠিন চিন্তার প্রয়োজন রয়েছে।

আবুল বারকাত বলেন, আমরা প্রত্যক্ষ করে ওপর জোর দিতে বলেছি। কারণ পরোক্ষ করের কারণে মানুষে মানুষে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। আমরা প্রস্তাব করছি দরিদ্র অতি দরিদ্রদের আগামী কয়েক বছরে নেটের বাইরে রাখতে।

তিনি বলেন, আমাদের বাজেটের আকার, যা বর্তমান বাজারের ৩ দশমিক ৪ গুণ বেশি। বিকল্প বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। যা প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটের ৯২ শতাংশের বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয়ের ৭৭ শতাংশ আসবে প্রত্যক্ষ কর থেকে, বাকিটা পরোক্ষ কর। যেখানে প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে মাত্র ৪৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ৭ শতাংশ, যা সরকারের চলতি বাজেটে ঘাটতি তুলনায় অনেক কম।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন,  বাজেট ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণ কিংবা দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণের প্রয়োজন নেই। সমস্যাটা অর্থনৈতিক হলেও সমাধান তার রাজনৈতিক। বাজেট ঘাটতি পূরণে কালো টাকা ও বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরতের প্রতি জোর দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের আরেকটি বড় কষ্ট হল সবকিছু এককেন্দ্রিক ও ঢাকামুখী, যা উন্নয়ন সহায়ক নয়। তাই আমাদের প্রস্তাবে কোন মন্ত্রণালয় কোন বিভাগে যাবে এটি রয়েছে।

চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার বা মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭.৫ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয় ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয় ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

বিকল্প বাজেট সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও কনফারেন্সে দেশের ৬৪টি জেলা, ১০৭টি উপজেলা এবং ২১টি ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি যুক্ত করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়