কাবুলে তালেবান নির্যাতনের শিকার দুই সাংবাদিক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার

ছবি: আফগানিস্তানের অনেক এলাকাতে বুধবার নারীরা বিক্ষোভ করেন
ঢাকা (০৯ সেপ্টেম্বর): কাবুলে পাকিস্তান ও আইএসআই বিরোধী নারীদের বিক্ষোভ সমাবেশের খবর সংগ্রহ করার অপরাধে সাংবাদিকদের আটক করে তালেবান প্রশাসন নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার কাবুলে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে নারীদের বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা এ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। খবর বিবিসি।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাংবাদিক শরিফ হাসানের টুইটারে প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা যাচ্ছে দুই সাংবাদিক মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের পিঠ ও পায়ে তালেবান প্রশাসনের নির্মম নির্যাতনে চিহ্ন। এ ছবি টুইট করে শরিফ লিখেছেন, ‘কাবুলে দুই সাংবাদিককে আটক করে বেধড়ক মারধর ও অত্যাচার করা হয়েছে।’
আফগানিস্তানের অনেকের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে তালেবান প্রশাসন সবার মাঝে ভয় ঢুকিয়ে দিতে চাইছে। ভবিষ্যতে কেউ তালেবানের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে তাঁদের জন্যও হয়তো একই শাস্তি অপেক্ষা করছে।
নারীদের বাড়িতে থাকার ব্যাপারে তালেবানদের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হলেও আফগানিস্তানের অনেক এলাকাতে বুধবার নারীরা বিক্ষোভ করেছেন। কাবুলে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে একদল নারী সববেত হয়ে বিক্ষোভ করতে চাইলে তালেবান বন্দুকধারীরা গুলি করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন। কাবুলের পাশাপাশি পারওয়ান এবং নিমরুজ প্রদেশের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
বুধবারের এ বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েই দুই সাংবাদিক তালেবান প্রশাসনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কাবুল থেকে তাদেরকে আটকের পর নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে ফটোসাংবাদিক নেমাতুল্লাহ নাগদি বলেন, ‘তালেবানের এক সদস্য পা দিয়ে দেয়ালের সঙ্গে আমার মাথা চেপে ধরে লাথি মেরেছে। আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবে।’
স্থানীয় ইতিলাট রোজ পত্রিকার সহকর্মী তাকি দারিবাইকে সঙ্গে নিয়ে নাগদি একটি পুলিশ স্টেশনের সামনে নারীদের বিক্ষোভের ছবি তোলার দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন তালেবানরা তাদের দুজনকে আটক করে।
আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া তালেবান প্রশাসন মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
বুধবার সকালে বিক্ষোভকারীরা আফগানিস্তানের পতাকা হাতে কাবুলে পাকিস্তান দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ বিক্ষোভ মিছিলে পুরুষরা থাকলেও নারীদের সংখ্যাই বেশি ছিল। মিছিলে সবাই আফগানরা ‘স্বাধীনতা চাই’ থেকে শুরু করে ‘পাকিস্তান দূর হও’, ‘আইএসআই দূর হও’ বলে স্লোগান দেন। ওই বিক্ষোভের এক ভিডিওতে এক আফগান নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘পাকিস্তান বা তালেবান, পানশির দখল করার অধিকার কারও নেই। এই প্রতিবাদ চলবে। আমাদের স্বাধীনতা দিতেই হবে।’
বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার পর তা থামাতে শূন্যে গুলি চালানো শুরু করেন তালেবানরা। এতে বেশ কয়েক জন হতাহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আফগানদের এই বিক্ষোভের খবর করতে যে সব সাংবাদিক গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেককে তালেবান প্রশাসন আটক করেছে নির্যাতন চালিয়েছে।
কাবুলের পাশাপাশি পারওয়ানেও বিক্ষোভ দমাতে তালেবান গুলিবর্ষণ করেছে বলে আমাজ নিউজ জানিয়েছে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, ‘অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কেউ আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। পাকিস্তান নিপাত যাক, যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক।’
এদিকে পুরুষদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রতিবাদে কাবুল এবং উত্তপূর্বাঞ্চলীয় বাদাশান প্রদেশে নারীরা বিক্ষোভ করেছেন। ওই বিক্ষোভে কিছু নারী সরকারে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করায় তাদেরকে মারধোর করা হয়েছে বলে বিবিসি রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।