বুধবার

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫


২ আশ্বিন ১৪৩২,

২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

বাতাসেই ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস: রিপোর্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ০১:২৩, ১৮ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ০১:২৪, ১৮ এপ্রিল ২০২১
বাতাসেই ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস: রিপোর্ট

বাতাসেই ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা (১৭ এপ্রিল): করোনাভাইরাস বাতাসেই ছড়াচ্ছে এমন ‘জোড়ালো প্রমাণ’ পাওয়া গেছে বলে গবেষকরা দাবি করেছেন। শুক্রবার ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে তারা এ দাবি করেন। খবর পিটিআই, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস, ইনডিয়া টাইমস।

ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার ছয়জন বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে খোলা বাতাসে লোকজন অনিরাপদ থাকছে এবং এর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী নানা ধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার পরও এ ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের জোসে-লুই জিমেনেজ বলেন, ‘বাতাসে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পরার পক্ষে প্রমাণ বেশ জোরালো। আর ‘ড্রপলেট ট্রান্সমিশন’ এর পক্ষে তেমন কোন প্রমাণই মেলেনি।’

তিনি বলেন, ‘ এখন জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্য জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ সমৃদ্ধ তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যাতে বাতাসে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পরার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’     

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণাটি পর্যবেক্ষণ করে ১০ টি প্রমাণ চিহ্নিত করেছেন। এতে বলা হয়েছে বাতাসের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে।

গবেষকরা বাতাসে করোনা ছড়িয়ে পরার এ বিষয়টিকে ‘সুপার-স্প্রেডার ইভেন্ট’ বলে অভিহিত করে গেল বছরে যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্যাজিট কোয়ার প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ওই ঘটনায় আক্রান্ত একজনের কাছ থেকে ৫৩জন সংক্রমিত হয়েছিলেন।  

গবেষকরা তাদের সমীক্ষায় বলেছেন, স্টাডিতে দেখা গেছে ঘনিষ্ট যোগাযোগ বা স্পর্শ বা কোন বস্তু শেয়ার করার বিষয়গুলো এক্ষেত্রে ব্যাখ্যার জন্য পর্যাপ্ত নয়। তারা বলেছেন বাড়ির বাইরে থেকে ভেতরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের হার অনেক বেশি। ইনডোর ভ্যানটিলেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে এ সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তারা উল্লেখ করেন।   

গবেষকরা এক্ষেত্রে আগের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করেছেন, তাতে বলা হয়েছিল সরাসরি কারো হাঁচি বা কাশির সংস্পর্শে না এসেও মোট সংক্রমণের অন্তত ৪০ শতাংশ নীরব সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। এই পরিস্থিতিও করোনা যে মূলত বায়ুবাহিত ভাইরাস সেটিই প্রমাণ করছে। এই নীরব সংক্রমণের মাধ্যমেই কোভিডের ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।

গবেষকরা একে অন্যের সংস্পর্শে না আসা দূরবর্তী সংক্রমণের কথাও উল্লেখ করেছেন। যেমন, হোটেলের দুটি পাশাপাশি রুমে অবস্থান করা মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণ। তারা একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাত না করেও সংক্রমিত হতে পারেন।
গবেষকরা দেখেছেন বড় আকারের ড্রপলেট থেকে করোনভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তেমন উল্লেখযোগ্য কোন প্রমাণই তারা পাননি।

প্রধান গবেষক গ্রিনহাল্গ বলেন, জীবিত ভাইরাসের তরল প্রবাহ ও আইসোলেশনের বিষয়ে আমরা খুব জটিল ও বিশেষজ্ঞদের বহুমাত্রিক গবেষণা পর্যালোচনা করেছি। যদিও কিছু গবেষণা দুর্বল ছিল কিন্তু সর্বোপরি করোনা যে বায়ুবাহিত সেটির পক্ষে প্রমাণগুলো পর্যাপ্ত ও জোরালো। বিশ্বজুড়ে এমন সংক্রমণ ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে আর বিলম্ব করা উচিত নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গবেষকরা বলছেন, করোনা মহামারি প্রতিহত করতে সারা বিশ্বব্যাপী গৃহীত নানা পদক্ষেপের এ সমীক্ষার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তারা বলছেন, হাত ধোয়া এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বায়ুবাহিত প্রতিরোধ ব্যবস্থার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ।

সংক্রামক ভাইরাস যদি প্রাথমিক ভাবে বায়ুবাহিত হয়, তাহলে কোনও ব্যক্তি আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস, কথা বলা, চিৎকার, গান ও নাক পরিষ্কারের মাধ্যমে ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন।

তাই বায়ুবাহিত সংক্রমণ ঠেকাতে ভেন্টিলেশন, বায়ু ফিল্টার করা, জনসমাগম কমানো এবং ঘরের ভেতরেও মাস্ক পরার মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া মাস্কের মান ও ঠিকমতো পরাও গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষকরা বলেন, ভাইরাসকে বায়ুবাহিত বিবেচনা করে বিশ্বের অনেক এলাকাতে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে। তারা বেশ ভাল আছেন। তাই তাদের পরামর্শ সারা বিশ্বে যত দ্রুত সম্ভব তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়