সরকার গঠন নিয়ে শীর্ষস্থানীয় তালেবান নেতাদের মধ্যে বিরোধ

ঢাকা (১৫ সেপ্টেম্বর): আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের নেতাদের মধ্যে বড় ধরনের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। তালেবানের সিনিয়র কর্মকর্তারা বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের সঙ্গে একজন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়েছে।

তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ চলছে বলে বেশ কিছুদিন ধরেই খবর পাওয়া যাচ্ছিল, যদিও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জনসমক্ষে দেখা যায়নি মোল্লা বারাদারকে।

তবে তালেবানের কর্মকর্তারা বরাবরই আনুষ্ঠানিক ভাবে এসব তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন।

গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটিকে 'ইসলামিক আমিরাত' বলে ঘোষণা করে। তারা যে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে, সেখানে সবাই পুরুষ এবং জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতারা রয়েছেন। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে গত দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব হামলার অভিযোগ রয়েছে।

তালেবানের একটি সূত্র বিবিসি পশতুকে জানিয়েছে যে, বারাদার এবং শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানির মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ বাক্য বিনিময় হয়েছে। তখন সেখানে থাকা তাদের অনুসারীরাও পরস্পরের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। খলিল উর-রহমান হাক্কানি আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

তাদের সাথে সম্পৃক্ত কাতার-ভিত্তিক একজন জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতা নিশ্চিত করেছেন যে, গত সপ্তাহেও একবার তর্কবিতর্কের তৈরি হয়েছিল।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, সেখানে বিতণ্ডার তৈরি হওয়ার কারণ হলো নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন নিয়ে সন্তুষ্ট নন বারাদার। তারা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়ে কৃতিত্ব কার হবে, সেই নিয়েই বিরোধের শুরু।

জানা গেছে,  বারাদার মনে করেন যে, তার মতো যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়েছেন, কৃতিত্ব তাদের। তবে তালেবানের অন্যতম জ্যেষ্ঠ একজন নেতা পরিচালিত হাক্কানি গ্রুপের সদস্যদের মত, যুদ্ধের মাধ্যমে তারা এই বিজয় পেয়েছেন।

প্রথম তালেবান নেতা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে বারাদারের। ২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে তিনি স্বাক্ষর করেন।

গুজব রয়েছে যে, গত সপ্তাহের শেষের দিকে বড় ধরণের বিরোধের তৈরি হয়েছিল, তখন বারাদার আড়ালে চলে যান। সামাজিক মাধ্যমে ধারণা করা হচ্ছিল যে, তিনি হয়তো মারা গেছেন।

তালেবান সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, বিতণ্ডার পর বারাদার কাবুল ত্যাগ করেছেন এবং কান্দাহারে চলে গেছেন।

এদিকে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক দাতাদের আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা পুনরায় সহায়তা কর্মকাণ্ড শুরু করেন। তিনি বলছেন, সহায়তা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজনীতিকে মেলানো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে না।

আফগানিস্তান বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করে দেয়ার পর সোমবার দেশের জন্য একশো কোটি ডলারের সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে।