কোভিড মুক্ত রোগীদের রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি: গবেষণা প্রতিবেদন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার

ছবি: সংগৃহীত নতুনা বিশ্লেষণে ব্যস্ত গবেষকদল।
ঢাকা (১৩ এপ্রিল): কোভিড ১৯ থেকে সেরে উঠেছেন এমন রোগীরা রক্তে জমাট বাঁধার ঝুঁকি থাকতে পারেন বলে এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই হৃদযন্ত্রের নানা সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এ ঝুঁকি আরো বেশি। সিঙ্গাপুরের এক স্টাডির প্রেক্ষিতে গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর চ্যানেল নিউজ এশিয়া।
নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (এনটিইউ) মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এনটিইউ গবেষকদের নেতৃত্বাধীন স্টাডিতে কোভিড ১৯ এর সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাব্য সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন। এর ফলে করোনায় আক্রান্তদের মধ্য মেয়াদী বা দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব কি হতে হতে পারে সে ব্যাপারে আভাস পাওয়া যাবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসায় সেরে উঠেছেন এবং হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে গেছেন এমন রোগীদের সেরে ওঠার একমাস পর ৩০ জনের রক্তের নমুনা সংগহে করে গবেষক দল বিশ্লেষণ করেছেন।
বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ইলাইফে মার্চে প্রকাশিত এ গবেষণায় দেখা গেছে নমুনা সংগৃহীত ৩০ রোগীরই রক্তবাহী শিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ কারণে তারা সবাই রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এনটিইউ জানিয়েছে, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও অনেকে রক্ত জমাট বাঁধার মতো জটিলতার শিকার হন কেন সে বিষয়ের ব্যাখ্যা হিসেবে এ স্টাডির তথ্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। রক্ত জমাট বেঁধে যখন প্রধান শিরার রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটায় তখন কোন কোন ক্ষেত্রে সেরে ওঠা ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা যে কোন অর্গান অকার্যকর হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
এ স্টাডির নেতৃত্বে থাকা এটিইউ’র সহযোগি অধ্যাপক ক্রিস্টিন চেউং বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আমরা জেনেছি কোভিড থেকে সেরে উঠে বাড়ি ফিরে গেছেন এমন অনেকেই রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগ নিয়ে আবার ক্লিনিকে ফিরে আসছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ কারণে আমরা কোভিড সেরে ওঠা ব্যক্তিদেরকে পর্যবেক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। বিশেষ করে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই যারা হাইপারটেনশন এবং ডায়াবেটিসের মতো নানা জটিলতাসহ কার্ডিওভাসকুলারের সমস্যায় ভুগছিলেন, তাদের এক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি।’
গবেষকরা দেখেছেন কোভিড থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের ক্ষতিগ্রস্থ রক্তবাহী শিরা থেকে নির্গত সার্কুলেটিং এন্ডোথেলিয়াল সেলস (সিইসিস) এর সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুন। এই বেড়ে যাওয়া সিইসিসের মাধ্যমেই প্রতীয়মান হয় করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠলেও রক্তবাহী শিরার ক্ষত এখনো রয়েছে।
কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরে শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি না থাকলেও রোগীর শরীরে উচ্চ মাত্রার সাইটোকিনস (ইমিউন সেলস থেকে উৎপাদিত প্রোটিন) উৎপন্ন হতে থাকে। এছাড়া টি সেল খ্যাত করোনা ভ্যাইরাস ধ্বংসকারী বিপুল সংখ্যক ইমিউন সেল সেরে ওঠার পর রোগীর শরীরে থাকে বলে এনটিইউ জানিয়েছে।
সাইটোকিনস এবং বিপুল সংখ্যক ইমিউন সেলের উপস্থিতি ইঙ্গিত করে যে, করোনভাইরাস মুক্ত হওয়ার পরেও রোগীর শরীরে এখনো সেই ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় রয়েছে।
এসব ইমিউন সিস্টেম অব্যাহত ভাবে সক্রিয় থাকার ফলে কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীর রক্তবাহী শিরা আক্রান্ত হতে পারে। এতে পরবর্তীতে রক্ত জমাট বাধার মতো আরো নানা ধরণের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
রক্তবাহী শিরা ক্ষতিগ্রস্থ হলে কিভাবে রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যা হতে পারে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করে এনটিইউ’র গবেষণা সহযোগি ফ্লোরেন্স চিওহ বলেন, কোভিড মূলত শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য কার্যকর অংশকে আক্রান্ত করে। এ ভাইরাস রক্তবাহী শিরার আস্তরণকেও আক্রান্ত করতে পারে। এ ফলে সেখানে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে বা অন্য সমস্যাও হতে পারে। এসব ক্ষতিগ্রস্থ শিরা ফুটো হয়ে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এর ফলে রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়েও নানা জটিলটা দেখা দিতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এনটিইউ জানিয়েছে, গবেষকরা এখন কোভিড আক্রান্তের পর সেরে ওঠা ব্যক্তিদের দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন।