সোমবার

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫


৩১ ভাদ্র ১৪৩২,

২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

চীনের সঙ্গে চুক্তি ইরানের পরনির্ভরশীলতা বাড়াবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ৩ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ২২:৪১, ৩ এপ্রিল ২০২১
চীনের সঙ্গে চুক্তি ইরানের পরনির্ভরশীলতা বাড়াবে

ছবি: চীনের সঙ্গে চুক্তি ইরানের পরনির্ভরশীলতা বাড়াবে

ঢাকা (০৩ এপ্রিল): চীন এবং ইরান গত সপ্তাহেই একটি চুক্তিতে সই করেছে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, এ চুক্তির মাধ্যমে আগামী ২৫ বছর দুদেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় থাকবে। এ চুক্তির ফলে বেইজিং ইরানে ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। আর বিনিময়ে ইরান থেকে তারা তেল নেবে। 

চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইরানের তেল কিনবে চীন। পাশাপাশি ইরানে অর্থ বিনিয়োগও করবে চীন। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানে বিদেশি বিনিয়োগ অনেকটাই বন্ধ রয়েছে।

চীনের সুবিস্তৃত 'বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ' কর্মসূচিতে সর্বশেষ সংযোজন এ চুক্তি। বিশ্ব শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে এমন যোগাযোগ বাড়াতেই তৎপর বেইজিং। এ চুক্তির ফলে তেহরানের ওপর বেইজিংয়ের আধিপত্য বাড়বে। সেই সঙ্গে ইরানের সুবিধার চেয়ে বেইজিংয়ের ওপর এর পরনির্ভরশীলতা বাড়বে।   

গত বছর এই সহযোগিতা চুক্তির খসড়া ফাঁস হওয়ার পর অনেক ইরানি চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি এটি অনুমোদনের ইঙ্গিত দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ চুক্তিটি নিয়ে অগ্রসর হন। 

চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইরান কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পত্রপত্রিকা একে তেহরানের জয় হিসেবে দেখছে। কিন্তু এ থেকে ইরান ঠিক কতটা লাভবান হতে পারবে- এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চীনের সঙ্গে ইরানের এ চুক্তি স্বাক্ষরের নেপথ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।

প্রথমত, ইরান প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকে খাটো করে দেখতে চাইছে। তেহরানের প্রতি মার্কিন নীতি পুনর্বিচনায় চাপ প্রয়োগ এবং পরমাণু চুক্তির ব্যাপারে সমন্বিত কার্যপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় বসতে উদ্বুদ্ধ করতে ইরান এর আশ্রয় নিচ্ছে।

চীনও এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবেলার সুযোগ পেয়ে খুব খুশি। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং শি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ব্যাপারে বলেছেন, চীন বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের এক পাক্ষিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চীন এ ব্যাপারে নিজের অবস্থানও স্পষ্ট জানিয়েছে।     

দ্বিতীয়ত, ইরান সরকার প্রতিপক্ষদেরকে দেখাতে চায় যে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের মতে মিত্র তাদের পাশে রয়েছে। তেহরান এখন আর এ অঞ্চলে একা নয়। ইরান মনে করে চীনের সঙ্গে এ ধরণের চুক্তি তাদের খুব প্রয়োজন ছিল। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র নানা ভাবে ইরানকে চাপ দিচ্ছে। এছাড়া, ইরানকে মোকাবেলা রাখতে মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রতি একটি জোট গঠন করেছে। এসব নিয়ে ইরান শঙ্কায় ছিল।    

তৃতীয়ত, ইরান বাস্তবিক অর্থেই বেশ আর্থিক সমস্যায় রয়েছে। ইরান আশা করেছিল জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তেহরানের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে আনবেন। আগের প্রশাসনের নীতি বদলে পরমাণু আলোচনায় যোগ দেবেন এবং ইরানের ওপর থেকে সব ধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবেন।   

ইরানের ক্ষমতায় বহাল থাকার এবং এর মিলিশিয়া গ্রুপের নেটওয়ার্ক সচল রাখার জন্য তেহরান প্রশাসন এখন অর্থ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলের পর থেকে তেহরানের তেল রপ্তানি দৈনিক ২৫ লাখ ব্যারেলে নেমে এসেছে। চার দশকের মধ্যে ইরানে এখন সবচেয়ে বেশি বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়। এ ঘাটতির কারণে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে এবং মুদ্রার মানও কমছে।   

এ আর্থিক অবস্থার সরাসরি প্রভাব পড়ে ইরানে রেভ্যুলেশনারি গার্ড এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সর্বোচ্চ নেতার কার্যালয়সহ অন্যান্যদের। তিনিই ইরানের অর্থনীতি এবং অর্থ ব্যবস্থার আংশিক নিয়ন্ত্রণ করেন।  

ইরানের পত্রপত্রিকা বিভিন্ন সময়ে অর্থনীতি ধ্বসে পড়ার হুশিয়ারি দিয়েছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত দৈনিক মার্ডম স্যালারি গেল বছর লিখেছিল, আমাদের অর্থনীতি একেবারে ধ্বসে পড়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে মুদ্রা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বাংকের লুটপাট। দেশে লুটপাটের জন্য অনেকে অবরোধকে অজুহাত হিসেবে দেখাচ্ছেন। আমরা এখন দেশে এবং বিদেশে দুই দিকেই অবরোধের শিকার হচ্ছি।     

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, গেল সপ্তাহের চুক্তির কারণে চীন ইরানকে রক্ষা করবে না। এটি বরং ইরানের শাসকের ওপর একটি আঘাত বলে দেখা যেতে পারে। ইরান নিজেকে বিশ্বশক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত বলে দাবি করে। কিন্তু এখন তারা এ চুক্তির ফলে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। কেননা, এ চুক্তির ফলে ইরানের ওপর বেইজিংয়ের আধিপত্য বাড়বে। 

ফার্স নিউজ এজেন্সি এ ব্যাপারে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘দেশকে অবশ্যই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এ চুক্তির কারণে ইরানকে চীনের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে বেশ দ্রুত গতিতে দেশ বিশ্ব শক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে এমন দেশের প্রভাব কাম্য নয়।’

মূল কথা হচ্ছে, চীনের সঙ্গে এ চুক্তির ফলে ইরানের শাসক গোষ্ঠী অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভাবে কোন সুবিধা পাবে না। বরং এ চুক্তি হচ্ছে তেহরানের ওপর একটি চপেটাঘাত। কারণ এর ফলে ইরান বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।  

সূত্র: আরব নিউজ
 

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়