মঙ্গলবার

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫


২৫ ভাদ্র ১৪৩২,

১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট মিন্ট গ্রেপ্তার

মিয়ানমারে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৬:১৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৬:৩৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
মিয়ানমারে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি

সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লাং। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা (১ ফেব্রুয়ারি): মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দলের নেত্রী অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ এনএলডির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার ভোরে বাড়িতে রেইড দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতারের পর সামরিক বাহিনী  মিয়ানমারে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। খবর বিবিসি, ব্রিসবেন টাইমস ও স্কাই নিউজ।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সোমবার সকালে বলা হয়েছে সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লাংয়ের কাছে দেশের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে। রাজধানী নেপিডো ও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় রাস্তায় সেনারা টহল দিচ্ছে।

অং সান সু চি গ্রেফতারের খবর রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনএলডি’র মুখপাত্র মিয়ো নিউন্ট। মিয়ো নিউন্ট এই ঘটনার পর দেশের জনগণকে মাথা গরম করে কোনো কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আইন অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমারে এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

মূলত গেল বছরের ৮ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সু চি’র দলের আজ সোমবার সংসদ আহ্বান করার কথা ছিল। সেনাবাহিনী সমর্থিত প্রভাবশালী বিরোধীদল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কদিন আগে সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লাং বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে সংবিধান বাতিল করা হতে পারে। তারপর থেকেই অভ্যুত্থানের গুঞ্জন শুরু হয়। এরপর অভ্যুত্থানের আশঙ্কা প্রকাশ করে এর নিন্দা জানায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। তবে এ আশঙ্কাকে ভুল বলে বিবৃতি দেয় সেনাবাহিনী। এর দু'দিন পরই গ্রেফতার হলেন সু চি, মিন্টসহ দেশের নির্বাচিত শীর্ষ নেতারা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী নেপিডো ও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় রাস্তায় সেনারা টহল দিচ্ছে। প্রধান প্রধান শহরে মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলছে, কারিগরি জটিলতায় সম্প্রচার কার্যক্রম থেমে গেছে। বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিবেদক জনাথন হেড বলেছেন, দেখে মনে হচ্ছে এটা স্পষ্টত একটা অভ্যুত্থান। তিনি মনে করছেন, সংবিধানের আওতার মধ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করার ক্ষমতা রাখে। তবে সু চির গ্রেফতার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।  

সোমবার ভোরে এনএলডির মুখপাত্র মিয়ো নিউন্ট রয়টার্সকে বলেন, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা, প্রেসিডেন্ট ও অন্য শীর্ষ নেতাদের ভোরেই অভিযান চালিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ো নিউন্ট মিয়ানমারের ইরাবতীকে বলেছেন, ‘এটা একটা সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা, তবে সামরিক বাহিনী বলতে পারে যে এটা অভ্যুত্থান নয়। তারা প্রেসিডেন্টকে জরুরি জাতীয় নিরাপত্তা বৈঠক ডেকে তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বলতে পারে।’

মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, একমাত্র প্রেসিডেন্টই জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে পারেন।

১৯৬২ সালের এক অভ্যুত্থানের পর দেশটি টানা ৪৯ বছর সামরিক বাহিনীর হাতে শাসিত হয়েছে। ২০১৫ সালে ঐতিহাসিক এক নির্বাচনে সু চি’র দল ৭৭ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে প্রায় পাঁচ দশকের সামরিক শাসনের অবসান ঘটায়। এরপর ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে অং সান সু চি’র দল এনএলডি ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার ক্ষেত্রে তার নীরব সমর্থনের কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সু চি ও তার দলের ভাবমূর্তির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় ২০১৯ সালে তাকে আন্তর্জাতিক আদালতেও (আইসিজে) হাজির হতে হয়েছিল।

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়