শনিবার

২০ এপ্রিল ২০২৪


৭ বৈশাখ ১৪৩১,

১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ভাষা, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাংলা

জাহেদ সরওয়ার || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ১৪ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ০৩:২৩, ২২ জুলাই ২০২১
ভাষা, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাংলা

ভাষা, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাংলা

গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লিটাস বলেছিলেন 'সবকিছু ক্রমাগত বদলে যায়'। ভাষার ব্যাপারে বিষয়টা সত্য। ভাষা বদলায় সময় নিয়ে। আজকের যে বাংলাভাষা এটা এক শ’ বছর আগে এ রকম ছিল না। আগামী এক শ’ বছর পরও এ রকম থাকবে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে একটা সর্বাত্মক শক্তির হুমকির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে অনেক ভাষাকে। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনৈতিক ও দুর্বল জাতির ভাষাকে। শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী ভাষার দু'কূল প্লাবি জোয়ারে হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে হামেশাই।

‘মাইক্রোসফট এনকার্টা ওয়ার্ল্ড ডিকশনারি’ যেদিন প্রকাশিত হয়, তার উদ্বোধনী ভাষণে খুব দম্ভভরে বিলগেটস বলেছিলেন, ‘এক পৃথিবী এক অভিধান।’ এরপর সভাসদদের হাততালি, হাসি আর শ্যাম্পেনের ছিপি খোলার যে শব্দ হয়েছিল সেই শব্দে পৃথিবীর ভাষাপরিবার কেঁপে উঠেছিল সন্দেহ নাই। ঐতিহাসিক ভাষা পরিবারের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় বিভিন্নভাবে একেকটি ভাষা অন্য একটি ভাষার ভেতর প্রবেশ করে থাকে। আধিপত্য, বাণিজ্য, যাযাবরবৃত্তির কারণে একেকটি ভাষা অন্য একটি ভাষার শব্দে নিজের স্থান করে নেয়। এতে গ্রাসকারী ভাষাটি সমৃদ্ধ হয় সন্দেহ নাই। বাংলা ভাষার ভিতর আরবি, উর্দু, ফারসি, ইংরেজি বহু ভাষার হানা আছে। বেশির ভাগ দস্যু যাযাবর লুটেরা বাংলায় সাম্রাজ্য বিস্তারের চেষ্টাকালে তাদের ধর্ম ও ভাষাকেও আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার বানিয়েছিল। ফলে অনেকটা ‘ধর্ষিতের সন্তানে’র মতোই অন্যান্য ভাষার শব্দসমূহ বাংলায় ঢুকে আছে। কিছু দিন আগেও পাকিস্তানিরা তাদের উর্দু ভাষাকে বাংলার ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল; যা টেনে এনেছে একাত্তর। 

তারা জানত না যে পঞ্চাশ হাজার লোক নিয়মিত কথা বললে সে ভাষা বিলুপ্ত হয় না। দুর্ভাগ্য বর্বররা প্রায়ই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। তবে আমাদের ওপর সর্বশেষ যে দুটো সাম্রাজ্যবাদী ভাষা আগ্রাসন চালাচ্ছে তা হচ্ছে ইংরেজি আর হিন্দি। এদের আক্রমণের উপায় ভিন্ন। এরা আমাদের কাছে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করতে আসে। 

পুঁজিবাদ শুধু পণ্যনির্ভর নয়, ভাষানির্ভরও। বড় পুঁজির যারা কারবার করে তাদের ভাষাও যে আধিপত্য বিস্তার করবে এটা পুঁজিবাদের ধর্ম। পণ্যায়ন মানুষকে নীতি, ভাষা ও সংস্কৃতিহীন করে তোলে। ক্রমশ মানুষকে ভোক্তা সাংস্কৃতিক শেকড়হীন করে তোলার ভেতর বাণিজ্য বিস্তারের রাজনীতি আছে। ‘বিশ্বায়ন’ এই ব্যবস্থার প্রকল্প। অন্যান্য ব্যবসার মতোই তারা ভাষা ও শিক্ষা ব্যবসায় নিয়েছে লাভজনক পরিকল্পনা। সারা পৃর্থিবীতে ইংরেজি এক ভয়াবহ দানবে পরিণত হয়েছে। এই বিশ্বায়নের যুগে মূল আধিপত্যই ভাষাভিত্তিক। একটা সময় ছিল লেখার সাথে বা কথা বলার ফাঁকে একটু-আধটু ফরাসি বা হিস্পানি বলাটা আভিজাত্যের পর্যায়ে পড়ত। রাশিয়ার গুরুতর লেখক তলস্তয় বা দস্তইয়েভস্কি বা অন্যান্য লেখকের লেখাতেও প্রচুর ফরাসি উদ্ধৃতি চোখে পড়ে। বিশ্বব্যাপী সেই জায়গাটা শুধু ইংরেজি দখলই করেনি, পুরোপুরি ইংরেজিতে লিখতে পড়তে চিন্তা ও জীবন যাপন করতে প্রলুব্ধ করছে, বিভিন্ন কায়দায় বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। 

আর বলাই বাহুল্য এই শিক্ষা ব্যবসার প্রধান বাহন হচ্ছে ইংরেজি। অন্য একটি ভাষায় দক্ষতা থাকা মোটেই অযোগ্যতা নয়। অন্য একটি ভাষার যোগ্য না হলে আমরা অনেক মৌলিক নতুন ধরনের লেখক পেতাম না। কিন্তু আপত্তিটা সেখানেই যে বিনোদন, বাণিজ্যিক প্রয়োজন, শিক্ষার ছদ্মবেশে যেখানে ভাষাটা রাক্ষসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ভাষার আধিপত্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ সম্পর্কে কেনিয়ার লেখক নগুগি ওয়া থিয়াঙ্গো তার ডিকলোনাইজিং দ্য মাইন্ড পুস্তকে চমৎকার কিছু তথ্য জ্ঞাপন করেন, ‘ইংরেজিকে রক্ষার স্বার্থে সবকিছুকে, সবাইকে মাথা নত করতে হবে। মাতৃভাষায় কথা বলা অবস্থায় ধরা পড়লে কঠিন শারীরিক শাস্তি ভোগ করতে হতো; লেখা থাকত আমি আহম্মক কিংবা আমি গাধা। মাঝে মাঝে অপরাধীকে জরিমানা গুনতে হতো। জরিমানার টাকা বেশিরভাগ অপরাধীর পক্ষে জোগাড় করা কঠিন ছিল। শিক্ষকগণ অপরাধীদের ধরতেন কীভাবে? একজন ছাত্রের হাতে দিয়ে দেওয়া হতো একটি বোতাম। মাতৃভাষায় কথা বলার অপরাধে যে ধরা পড়ত তার হাতে আগের ছাত্রটি দিয়ে দিত সেই বোতাম। দিনের শেষে যার হাতে পাওয়া যেত সেই বোতাম তাকে ধরলেই বের হয়ে পড়ত সারা দিনে কে কে মাতৃভাষায় কথা বলার অপরাধ করেছে। এভাবেই শিশুদের মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো নিকটজনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে কতখানি মজা পাওয়া যায়।’ 

এভাবে তৃতীয় বিশ্বের মননের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভাষা তথা সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ। অর্থনীতিতে দুর্বল আর অসাবধানী দেশের ভাষাকে ক্রমে গ্রাস করছে ইংরেজি নামের সাদা তিমিটি।

ডেভিট ক্রিস্টাল তার ‘ভাষার মরণ’ গ্রন্থে একটা চমৎকার তথ্য সন্নিবেশিত করেছেন। ‘এই পৃথিবীর ছয় হাজার ভাষা ইংরেজির প্রভাবে এই শতাব্দীতেই ধ্বংস হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ইউনাইটেড আরব আমিরাতের দুবাই শহরটির আরবী ভাষা নষ্ট হয়ে গিয়ে ইংরেজি ভাষাভিত্তিক এক নতুন শহরে পরিণত হবে। আমরা এসব কথা বলছি, তার মূল কারণ হল শিক্ষার মাধ্যম হল ভাষা। যদি বিশ্বেজুড়ে একটি ভাষার আধিপত্য বিস্তার করা যায়, তাহলে শিক্ষার যে ট্রিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, তা গগনচুম্বী হতে পারে।’

ইউনেস্কো স্ট্যাটেসটিক্যাল ইয়ারবুক ১৯৯৬ সালে একটা চিত্র দেখায়। এই পরিসংখ্যানে দেখা যায় মাত্র এগারটি ভাষা এখন তাবৎ জাহানের মাতৃভাষা। এদের মধ্যে শীর্ষে আছে ম্যান্ডোরিন চায়নিজ। সেখানে দেখা যায়—

এক. মাতৃভাষার দিক দিয়ে চায়নিজ ম্যান্ডোরিন ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ৮০ কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে চায়নিজ ম্যান্ডোরিন ভাষাভাষীর সংখ্যা ১০০ কোটি। 
দুই.  মাতৃভাষার দিক দিয়ে ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ৩৫ কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে ইংরেজি ভাষাভাষীর সংখ্যা ১৯০ কোটি।
তিন.  মাতৃভাষার দিক দিয়ে হিন্দি ও উর্দু ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ৩৫ কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে হিন্দি ও উর্দু ভাষাভাষীর সংখ্যা ৫৫ কোটি।
চার.  মাতৃভাষার দিক দিয়ে হিস্পানি ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা  ৩১  কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে হিস্পানি ভাষাভাষীর সংখ্যা ৪৫ কোটি।
পাঁচ.  মাতৃভাষার দিক দিয়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ১৭ কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা ১৭ কোটি।
ছয়.  মাতৃভাষার দিক দিয়ে রাশিয়ান ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ১৬ কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে রাশিয়ান ভাষাভাষীর সংখ্যা ২৯ কোটি।
সাত.  মাতৃভাষার দিক দিয়ে আরবী ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ১৬ কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে আরবী ভাষাভাষীর সংখ্যা ১৮ কোটি।
আট.  মাতৃভাষার দিক দিয়ে পর্তুগিজ ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ১৬ কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে পর্তুগিজ ভাষাভাষীর সংখ্যা ১৮ কোটি।
নয়.  মাতৃভাষার দিক দিয়ে জাপানিজ ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ১২ কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে জাপানিজ ভাষাভাষীর সংখ্যা ১৪ কোটি।
দশ.  মাতৃভাষার দিক দিয়ে জার্মান ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ৯ কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে জার্মান ভাষাভাষীর সংখ্যা ১২ কোটি।
এগার.  মাতৃভাষার দিক দিয়ে ফরাসি ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি এবং একই সময়ে ব্যবহারিক দিক দিয়ে ফরাসি ভাষাভাষীর সংখ্যা ১৩ কোটি।

—এই হিসাবটি এক ভাষা অন্য ভাষাকে গিলে খাবার চিত্র তুলে ধরে। ইংরেজি নিয়েছে সাদা তিমির ভূমিকা। ইউনেস্কোর এই পরিসংখ্যানে দেখা যায় ইংরেজির সাথে পাল্লা দিয়ে সব ভাষাই মোটামুটি তাদের অবস্থান পাল্টিয়ে নিতে সচেষ্ট। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কেবল বাংলা ভাষা তার নিজস্ব স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের কথা বলতে গেলে হিন্দি আর ইংরেজি আমাদের বেডরুমে ঢুকে আছে। অথচ, ভারতীয় উপমহাদেশে এই ভাষা আলাদা সমীহ পেত এক সময়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ভাষাই দক্ষিণ এশিয়ার মুখ উজ্জ্বল করেছিল। আর ‘বাঙলা’ শব্দটাই মূলত একটা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা একান্তই ভাষাগত।

কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাত্রাকালে বাসের ভেতর একদঙ্গল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীর সহযাত্রী হওয়ার সুযোগ ঘটে। স্বভাবতই তারা খুব উচ্ছ্বল ছিল। গাড়িতে ওঠার পর মনে হল, যেন ভুল জায়গায় এসে পড়েছি। অদ্ভুত এক বাংলা ভাষায় কথা বলছে তারা। বাংলা-ইংরেজি-হিন্দির মিশেলে এক জগাখিচুড়ি ভাষা। যেন বাংলা ভাষায় কথা বলতে না হলেই তারা বাঁচে। ভয় পেয়ে গেছি। এই তো আমাদের তরুণ প্রজন্ম, যারা অত্যাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত জীবন যাপন করে! এদের বিচরণ ইন্টারনেট, এদের চোখে হলিউড, এদের কানে বিবিসি, সিএনএন।

বাংলাদেশের মতো দারিদ্র্য জর্জরিত, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলযোগপূর্ণ, ভঙ্গুর, আগাগোড়া দুর্নীতিগ্রস্ত একটা দেশের জন্য এটা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক তথা প্রাইভেট স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাষাই ইংরেজি। অন্তত একজন দু’জন শিক্ষক বিদেশ থেকে আমদানি করা, যারা দেশি তারাও বিদেশ থেকে আত্মা বেচার ডিগ্রি অর্জনকারী। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের পোশাক-আশাক পশ্চিমী, এরা খায় পশ্চিমী, এদের জীবনাচার পশ্চিমী, তথাকথিত বিবিএ বা এমবিএই এদের প্রধান পছন্দের বিষয়। এদের ব্যক্তিগত জীবন কেড়ে নিয়ে কর্পোরেট বিশ্ব এদের করে তোলে ভোগের মাল। অর্থ আর যৌনতাই এদের জীবন। শোবার ঘরে তো আছেই এইচবিও, স্টার মুভি, সনি, বিবিসি, জিটিভি, সিএনএন। এরপর রাস্তাঘাটে গজিয়ে উঠেছে ইংরেজিতে দখল দেওয়ার এজেন্সি। শিশুদের ইংলিশ মিডিয়ামে সেদ্ধ করার প্রয়াস চলছে নিরন্তর। অভিভাবকরা পারলে শিশুদের ইংরেজি রান্না করে খাওয়ায়। 

বাংলাদেশের সাহিত্যেও ইংরেজিকেন্দ্রিক এক ধরনের হীনম্মন্যতা লক্ষ্য করা যায়। এখানে ইংরেজিতে বই পড়তে না পারলে যেন জাতে ওঠা যায় না। এটা একটা হীনম্মন্য ধারণা মাত্র। বিশেষ কোনো ভাষায় আছে জ্ঞান অর্জনের নির্দিষ্ট পথ —এ ধরনের বক্তব্য রাজনীতি ও হীনম্মন্যতা প্রসূত। যেকোনো ভাষাতেই জ্ঞান অর্জন সম্ভব। ইংরেজি না-জানা সত্ত্বেও একধরনের সাহিত্য চর্চাকারীকে দেখা যায় ইংরেজি বই হাতে নিয়ে ঘুরতে। কথায় কথায় তারা বলে, এ দেশের সাহিত্যে কিচ্ছু নাই। কিছু হচ্ছে না। এ ধরনের বিদ্ঘুটে ধারণা অন্তদারিদ্র্যের পরিচয় বহন করে। এরা নিজেদের অজান্তেই প্রায় সংক্রামিত। বাংলাদেশে সম্প্রতি প্রাইভেট রেডিওতেও অদ্ভুত ধরনের একটা বাংলা-ইংরেজি মিশেল ভাষা বলার চেষ্টা হচ্ছে। এর পেছনে কারা আছে খুঁজে বের করা জরুরি। কেন তারা এ ধরনের আজগুবি ভাষা প্রচারে মেতে উঠেছে তা ভেবে দেখা দরকার। এখন কথা হচ্ছে, ইংরেজির এই দানবীয় আচরণে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার প্রয়োজন আছে কিনা? নাকি ইংরেজি টাইফুনে ঘুমের মধ্যে ভেসে যাওয়াই বাংলা ভাষার নিয়তি?

ফ্রেঞ্চ লেখা পত্র অনুবাদ করার জন্য ইংল্যান্ডে আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে। বিভিন্ন ভাষা থেকে সাহিত্য অনুবাদ করার জন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের এ তাবৎ সব সরকারই অশিক্ষিত মানসিকতার। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য আকাদেমিতে মূল ফেঞ্চ, হিস্পানি, রুশ থেকে অহরহ বই বাংলায় অনুবাদ হচ্ছে। অথচ বাংলা আমাদের পুরো দেশের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আক্রান্ত ঢাকার বাংলা একাডেমি সরকারি আমলা, সুযোগসন্ধানী আর বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের হাবিজাবি ছাপাতে ব্যস্ত। বাংলা ভাষাকেও বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। হয়তো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে, অন্যান্য বড় দুর্ধর্ষ ভাষার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সমস্ত জারিজুরি অর্জন করতে হবে। নয়তো নীরবে বিলীন হয়ে যেতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দ্রুতই চলে যাচ্ছে যে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে টিকে থাকা স্বাধীন বাংলা ভাষা বেঁচে থাকবে কিনা। সেই প্রস্তুতি বাংলার আছে কিনা। নাকি ইংরেজির মতো দুর্ধর্ষ সাম্রাজ্যবাদী ভাষার নীরব গ্রাসে পরিণত হওয়াই বাংলার নিয়তি!

বাংলাভাষা নিয়ে দুই বাংলাতেই নানা একাডেমি আছে। এবং ভাষার উন্নয়নের জন্য জাতীয়তাবাদী চেতনার দরকারও আছে। এখন প্রয়োজন বাংলা ভাষার সমৃদ্ধ সাহিত্যকে ক্রমাগত বৈশ্বিক অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা। আরও নানান চলমান কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে প্রায়োগিক ও প্রান্তিক বাংলাভাষাকে মূল ভাষার সাথে সমন্বয় করে এর আরও শাখা-প্রশাখার সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখা দরকার। তিরিশ কোটি মানুষের ভাষিক  এই বিশাল সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখতে গেলে, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জকে জয় করতে গেলে, আরও গতিশীলতা আনতেই হবে। এ জন্য সার্বিকভাবে ভাষা বিজ্ঞানীদের সমন্বয় করাটাও জরুরি।

জাহেদ সরওয়ার: কবি ও সমালোচক
[email protected]


 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়