নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা (২০ সেপ্টেম্বর): যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আসা প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট স্থানীয় সময় রবিবার  সন্ধ‌্যা সোয়া ৬টার দিকে (বাংলাদেশ সময় ভোর সোয়া ৫টা) জন এফ কেনেডি  বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. সহিদুল ইসলাম এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে মোটর শোভাযাত্রা পরিবেষ্টিত হয়ে সরাসরি ম্যানহাটনের লোট গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলে যান। জাতিসংঘের অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে অবস্থান করবেন। অন্যান্য দেশের বেশিরভাগ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরাও নিউইয়র্কের অভিজাত ওই হোটেলে অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে।

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে যাত্রাবিরতী শেষে স্থানীয় সময় রবিবার বিকেলে নিউইয়র্কের পথে হেলসিঙ্কি ত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি চাটার্ড ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে হেলসিঙ্কি-ভ্যানটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ফিনল্যান্ডে বাংলাদেশের অনাবাসী রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান।

গত শুক্রবার ৭৬তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে হেলসিঙ্কি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। নিউইয়র্কে যাওয়ার পথে  প্রধানমন্ত্রী হেলসিঙ্কিতে দুইদিনের যাত্রা বিরতি করেন।

১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বাংলায় তার ভাষণ দেবেন। এটি হবে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৮তম ভাষণ।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রেস উইংয়ের দেওয়া তথ্যমতে, নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের একটি ছোট দলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি একটি গাছ লাগাবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার সম্মানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর লনে ইউএন গার্ডেনে একটি বে উৎসর্গ করবেন।

২১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ বিতর্কের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কর্তৃক আয়োজিত ‘বিজনেস গোলটেবিল: ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’-অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন।

২২ সেপ্টেম্বর বুধবার প্রধানমন্ত্রী ডারবান ডিক্লারেশন অ্যান্ড প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন গ্রহণের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সাধারণ পরিষদের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন।

এ ছাড়া, তিনি ‘হোয়াইট হাউস বৈশ্বিক কোভিড-১৯ শীর্ষ সম্মেলন: মহামারির সমাপ্তি এবং আরও ভালো অবস্থা গড়ে তোলা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন এবং বক্তৃতা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এদিন বিকেলে শেখ হাসিনা ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট: একটি টেকসই সমাধানের জন্য করণীয়’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং সেখানে পূর্বে-রেকর্ড করা বক্তৃতা দেবেন বলে জানা গেছে।

২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সুইডিশ মিশন আয়োজিত ‘জাতিসংঘের সাধারণ কর্মসূচি: সমতা ও অন্তর্ভুক্তি অর্জনের পদক্ষেপ’ শীর্ষক নেতাদের নেটওয়ার্কের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তিনি জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক আহ্বান করা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দশক কর্মসূচির অংশ হিসাবে খাদ্য ব্যবস্থা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন, বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিস মিয়া আমোর মোটলি কিউসি, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, নেদারল্যান্ডের রানী ম্যাক্সিমা, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এনগুয়েন জুয়ান ফাইক।

এদিকে জাতিসংঘ অধিবেশন এবং নিউইয়র্কে অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রীর ২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি সফরের কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে শেখ হাসিনা ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এবং হেলসিংকিতে যাত্রা বিরতির পর ১ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে জেএফকে বিমানবন্দরে জড়ো হন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল নেতা-কর্মী ও সাধারণ প্রবাসীরা। নিরাপত্তার স্বার্থে এয়ারপোর্টের ৪ নম্বর টার্মিনালের বাইরে পার্কিং লটে তাদের জন্য বেষ্টনী গড়ে দেওয়া হয়।  

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরের দেড় বছর পরে এটি তার প্রথম বিদেশ সফর। সূত্র: বাসস