‘করোনায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি’

ঢাকা (১৩ সেপ্টেম্বর): করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন আলোচকরা। 

ঢাকা আহছানিয়া মিশন তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের উদ্যোগে গতকাল রবিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হল ‘করোনায় তামাক ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ভূমিকা’ শীর্ষক ওয়েবিনার এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, এমপি।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ড ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিপার্টমেন্ট অব এপিডেমিওলজি এন্ড রিসার্চের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। 

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন— মাদক ও ধূমপানবিরোধী সংগঠন (মানস)-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক।

ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, এমপি বলেন, যুগের প্রয়োজনেই যেকোনো আইনকেও যুগোপযোগী করতে হয়। এক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটিরও প্রয়োজনীয় সংশোধন করা দরকার। বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বন্ধ করতে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের বিকল্প নেই। এ ছাড়া, তামাক কোম্পানিগুলোর ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’র আওতায় বিভিন্ন লোক-দেখানো কার্যক্রমও আইন করে বন্ধ করাটা জরুরি।

মানস-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, করোনায় আমরা সব চেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি মাস্ক পরার প্রতি। কিন্তু একজন ধূমপায়ী যখন পাবলিক প্লেসে ধূমপান করেন তখন তার পক্ষে মাস্ক পরাটা সম্ভব হয় না। এতে তিনি নিজে যেমন করোনা ঝুঁকিতে পড়ছেন, তেমনি তার আশেপাশের মানুষজনকেও ঝুঁকিতে ফেলছেন। উপরন্তু তার মাধ্যমে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির শিকার হচ্ছে অন্যরা। ধূমপায়ীদের করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি ৫০% বেশি।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তামাক ব্যবহারকারীরা করোনায় অধিক ঝুঁকিতে থাকেন এটা জেনেও করোনার এই অতিমারীর সময়ও তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচার-প্রসার থেমে নেই।  

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, করোনার সময়েও যেসব ক্যান্সার আক্রান্তগণ ধূমপান থেকে বিরত ছিলেন না তাদের ক্ষেত্রে অনেক ওষুধই কাজ করে না। উপরন্তু ধূমপায়ী ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদেরকে আইসিইউ পর্যন্ত যেতে হচ্ছে।

সমাপনী বক্তব্যে ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, করোনার এই ভয়ঙ্কর সময়েও তামাক কোম্পানিগুলো যদি তাদের প্রচার ও প্রসার অব্যাহত রাখে, তবে জনস্বাস্থ্যের জন্য তা মারাত্মক হুমকির কারণ হবে। এ ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক ব্যবহার নির্মূল করার জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন। এ জন্য বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫’-এর সংশোধন অতি জরুরি।