Notice: Undefined index: HTTP_REFERER in /mnt/volume_sgp1_04/busine23n9s5der/public_html/common/config.php on line 2

Notice: Undefined index: HTTP_ACCEPT_LANGUAGE in /mnt/volume_sgp1_04/busine23n9s5der/public_html/common/config.php on line 14
আবাসনে উজার বন-টিলা, মারা হচ্ছে বিলুপ্ত প্রায় গুইসাপ-সাপ

শনিবার

১২ জুলাই ২০২৫


২৮ আষাঢ় ১৪৩২,

১৬ মুহররম ১৪৪৭

আবাসনে উজার বন-টিলা, মারা হচ্ছে বিলুপ্ত প্রায় গুইসাপ-সাপ

লতিফপুর (গাজীপুর) থেকে ফিরে হাসান আজাদ || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২৪ জুলাই ২০২১  
আবাসনে উজার বন-টিলা, মারা হচ্ছে বিলুপ্ত প্রায় গুইসাপ-সাপ

লতিফপুরের অন্যন্যা হাউজিং এলাকায় বিলুপ্ত প্রায় গুইসাপ মেরে ফেলা হচ্ছে, বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (২৪ জুলাই): এককালের বনভূমি এলাকা গাজীপুর এখন নগরায়নের কারণে বিরান হতে চলেছে। শিল্প-কারখানার পাশাপাশি বসতিও বাড়ছে সমানতালে। ফলে অতি দ্রুত কাটা পড়ছে গাছ, উজার হচ্ছে বন-জঙ্গল,হারাচ্ছে বন্যপ্রাণী। এমনই একটি এলাকা গাজীপুরের লতিফপুর এলাকা। 

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত লতিফপুর। সিটি করপোরেশনের ভেতরে হওয়ার কারণে এখানে অতি দ্রুত বিভিন্ন আবাসন সিটি গড়ে উঠছে। এর মধ্যে রয়েছে শাইনপুকুর হোল্ডিংস লিমিটেড, গ্রীণ সিটি, ডালাস সিটি, অন্যান্য হাউজিং ও ইস্টান হাউজিং। এ ছাড়া আরও ছোট ছোট বেশ কয়েকটি আবাসন এলাকা গড়ে উঠছে। এর পাশেই রয়েছে দেশের খ্যাতনামা একটি শিল্পগোষ্ঠীর শিল্প পার্ক। এই শিল্প পার্কের জন্য জন্যও রাস্তা তৈরি হচ্ছে অন্যন্যা হাউজিংয়ের ভেতর দিয়ে। 

গাজীপুরের লতিফপুরে বন জঙ্গল কেটে তৈরি হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। একটি আবাসন প্রকল্পের জন্য তৈরি হচ্ছে রাস্তা

গত বৃহস্পতিবার লতিফপুরের এসব আবাসন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এসব আবাসন এলাকা তৈরি করা হচ্ছে এই এলাকার ছোট ছোট লাল মাটির টিলা কেটে, সমান করে। ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব স্থানের কিছু কিছু জায়গায় এখনো বন জঙ্গল রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি কেটে সমান করা হয়েছে। এর ফলে অনেক স্থান নিম্নাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই এলাকায় এক সময় ছোট ছোট টিলা এবং ভাটির জমি (নিম্নাঞ্চলের জমি) ছিল। সেখানে চাষাবাদ করা হতো। এক সময় এই এলাকায় বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর দেখা মিলত। এরমধ্যে অন্যতম ছিল বাঘদাস, শিয়াল, বানর, বন বিড়াল, গুইসাপ, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও ব্যাঙ। এখন বাঘদাস, শিয়াল, বানর, বন বিড়াল একদমই দেখা মেলে না। এগুলো এই এলাকা থেকে বিলুপ্ত হয়েছে বা অন্যত্র চলে গেছে বলে মনে করে স্থানীয়রা। 

লতিফপুরের অন্যন্যা হাউজিংয়ের বাসিন্দা আবু নাসের এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি গত ৫ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন। প্রথম যথন এখানে বাড়ি করতে আসেন তখন প্রতিদিনই তিনি ছাই ও সোনালী রঙের দুটি প্রজাতির গুইসাপ দেখতে পেতেন। যা এখন আর তেমন একটা দেখেন না। এ ছাড়া এই এলাকায় বর্ষায় এক সময় বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর সাপও দেখা যেত। তা-ও এখন আর চোখে পড়ে না। 

একই এলাকার বাসিন্দা মোতালেব হোসেন জানান, গত দুই বছর ধরে এইখানে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আবাসন বাড়ছে। দালানকোঠা নির্মাণ হচ্ছে। এর ফলে আশেপাশের বনভূমি কেটে ফেলা হচ্ছে। তিনি জানান, এখানে প্রতি মাসেই একটি-দুটি গুইসাপ হত্যা করা হয়। কারণ হিসেবে তিনি জানান, এসব গুইসাপ খাবারের জন্য মানুষের বাড়ি ঘরে হানা দেন। পোষা প্রাণী খেয়ে ফেলে। এই কারণে অনেকেই অসচেতনভাবেই এই প্রাণীটিকে হত্যা করছে। 

অন্যান্য হাউজিং ও ডালাস সিটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। অন্যন্যা হাউজিংয়ের পাশে একটি ডোবাতে দেখা গেছে, ক্ষতবিক্ষত একটি প্রাপ্তবয়স্ক গুইসাপ মরে পরে থাকতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় কয়েকজন তরুণ সপ্তাহখানেক আগে গুইসাপটি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে এলে পিটিয়ে মেরে ফেলে। ওই একই সময় দুটি সাপও মেরে ফেলার তথ্য পাওয়া গেছে। 

একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, এখনো এই এলাকায় বিলুপ্ত প্রায় গুইসাপের তিনটি প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়। তবে এখনই এইসব বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে শিগগির এসব বন্যপ্রাণী হারিয়ে যাবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়াডের কাউন্সিলর মো. মোন্তাজ উদ্দিন আহমেদ এই প্রসঙ্গে বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে বলেন, লতিফপুরে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী আছে, এটাই তো জানি না। আপনার কাছে শুনলাম। তিনি বলেন, ঘটনা সত্যি হলে সবাইকে বলে দেব যাতে করে কেউ গুইসাপ বা সাপ না মারে। 

ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজল তালুকদার এ প্রসঙ্গে বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে বলেন, নগরায়নের কারণে ঢাকার অনেক এলাকা থেকে বন্যপ্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, আমরা বিলুপ্ত প্রায় গুইসাপসহ সকল ধরনের প্রাণী রক্ষায় কাজ করছি। গাজীপুরে এক সময় বন ছিল। অনেক বন্যপ্রাণী ছিল। এখন নেই। কারণ অত্যন্ত দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। 

গুইসাপ নামে সাপ হলেও এরা আসলে সাপ নয়। বর্তমানে দেশে গুইসাপের তিনটি প্রজাতি কোনো রকমে টিকে আছে। এগুলো হল— কালো গুইসাপ, সোনা গুইসাপ ও রামগদি গুইসাপ। কালো গুইসাপ লোকালয়ের বসতবাড়ির আশেপাশে বেশি দেখা যায়। গুইসাপ সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ ফুটের মতো লম্বা হতে পারে এরা। এদের গড় দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ১১ ইঞ্চির মতো। ওজন ২৫ কেজির মতো হতে পারে। 

গুইসাপ মূলত মাছ, সাপ, ব্যাঙ ও পাখি খায়। তারা ছোট কুমির, কুমিরের ডিম ও কচ্ছপও খায়। প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের অতি গুরুত্বপূণ এই প্রাণীটি এখন বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের একটি।

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়