প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

ছবি: চারুকলা অনুষদে প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়
ঢাকা (১৪ এপ্রিল): আজ পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির অত্যন্ত আনন্দের দিন। প্রতি বছর ভোর হতেই মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালি বরণ করে নেয় বাংলা বর্ষকে। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং লকডাউন বিবেচনা করে গেলবারের মতো এ বছরও আনুষ্ঠানিক ভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার বাংলা নববর্ষ সীমিত পরিসরে প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে চারুকলা অনুষদের শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন মুখোশ ও প্রতীক নিয়ে অনুষদ প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্তভাবে প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
প্রতীকী এই শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এতে আরও অংশগ্রহণ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়াসহ চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ উপলক্ষে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাইকে বাংলা নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন্ন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় অত্যন্ত সীমিত পরিসরে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করায় ভিসি চারুকলা অনুষদকে ধন্যবাদ জানান।
সব জায়গায় আজ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হচ্ছে একটু অন্যভাবে। করোনা এবং সারা দেশে লকডাউন শুরু হওয়ায় সরকারি নির্দেশনার কারণে এবারের বৈশাখে নেই শারীরিক উপস্থিতির কোনো আনুষ্ঠানিকতা। শারীরিক উপস্থিতিতে রমনার বটমূলে আয়োজিত হয়নি ছায়ানটের বর্ষবরণ, চারুকলায় ছিল না আনুষ্ঠানিক মঙ্গল শোভাযাত্রা।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে রমনার বটমূল, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, শিল্পকলা একাডেমি, হাতিরঝিল, বাংলা একাডেমিসহ উৎসবের রঙিন আঙ্গিনাগুলো ঢাকা রয়েছে স্বাস্থ্যবিধির চাদরে।
আর উদীচী, খেলাঘর, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, ছায়ানটসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোও গতবারের মতো এবারও উদযাপন থেকে নিজেদের বিরত রাখছে আনন্দ আর উদ্দীপনায়। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষ্যে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ছায়ানট তাদের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে বৈশাখ বরণ করেছে। ছায়ানটের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল দর্শকশূন্য অবস্থায় অথবা পরিস্থিতি আরও বেশি প্রতিকূল হলে পহেলা বৈশাখের ভোরের অনুষ্ঠান আগেই রেকর্ড করে নেওয়া। সে লক্ষ্যে সম্মেলক দলের নিয়মিত মহড়াও চলছিল।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতির ক্রমান্বয় অবনতি এবং সরকারের সতর্কতামূলক বাস্তবিক সিদ্ধান্তের কারণে তারা সেটা করতে পারননি। এছাড়া বেশ কজন শিল্পী ও কর্মীও করোনা-আক্রান্ত। দেশবাসী ও শিল্পীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিরুপায় হয়ে তারা তাই ডিজিটালি বৈশাখ উদযাপন করেছে। রেকর্ড করা এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানমালা পয়লা বৈশাখে সকাল ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রচার করেছে। একইসাথে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও অনুষ্ঠানটি দেখা গেছে।