মঙ্গলবার

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


১ আশ্বিন ১৪৩২,

২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

২০২১ সালের আলোচিত ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২০:২৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ২০:৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১
২০২১ সালের আলোচিত ঘটনা

ছবি: বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (২৮ ডিসেম্বর): আলোচিত বছর ছিল ২০২১ সাল। রাজনৈতিক, সামাজিক নানা আলোচিত ঘটনার মধ্যদিয়ে শেষ হচ্ছে বছরটি। বছরের মধ্য-সময়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫১ জনের প্রাণহানির ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন তোলে। আর বছর শেষে বির্ততিক কর্মকাণ্ডের কারণে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানও ছিলেন আলোচনার শীর্ষে। আলোচনায় ছিল দীর্ঘ ৫৪৪ দিন পর স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার বিষয়টি। এ ছাড়া, সারা বছরই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বাজে পারফম্যান্স ও করোনার ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি ছিল আলোচনায়। 

হাশেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫১ জনের মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫১ জন শ্রমিক মর্মান্তিকভাবে মারা যান। গত ৮ জুলাই বিকেলে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার ১৪ নম্বর গুদামের ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার শুরু। আগুনের শুরুতেই ভবন থেকে লাফিয়ে পরে তিনজন মারা যান এবং ১০ জন আহত হন। প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরদিন শুক্রবার বিকেলে আগুন নিভিয়ে ফেলার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৪৮ জনের পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেমসহ আটজনের নাম উল্লেক করে ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে নিরাপত্তা না থাকাসহ বিভিন্ন অবহেলার অভিযোগ এনে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এই ঘটনায় ১০ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডিসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা জামিনে বেরিয়ে আসে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। 

আপত্তিকর বক্তব্যে পদ হারালেন ডা. মুরাদ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে অশ্লীল, আপত্তিকর ও অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ার কারণে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারান জামালপুর থেকে নির্বাচিত তরুণ সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাতনি, তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে অশ্লীল ও আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করে। এরইমধ্যে এক নায়িকার সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথোপকথনের একটি অডিও প্রকাশ পায়। ওই অডিওতে নায়িকাকে হুমকি প্রদান ও অশ্লীল কথার বিষয়টি সরকারের ভেতরে অস্বস্তির তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন মহলের ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করে।

পরে ৬ ডিসেম্বর সকালে এক অনুষ্ঠানে ডা. মুরাদের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন বলে জানান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওইদিন রাতেই ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসানকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেন। 

একইদিন বিএনপির পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া কথা জানানো হয়। এদিন বিএনপির এক অনুষ্ঠানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ডা, মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দল পাল্টান। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন ৭ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে নিজ মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠান মুরাদ হাসান। সেদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে পাঠান ডা. মুরাদ। পরে বিকেল তিনটায় তার পক্ষে পদত্যাগপত্রটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে জমা দেন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। সচিবের পক্ষে তার একান্ত সচিব মাহমুদ ইবনে কাসেম পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো এ পদত্যাগপত্রে বলা হয়, ‘গত ১৯ মে ২০২১ স্মারকমূলে আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমি অদ্য ৭ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।’

‘এমতাবস্থায় আপনার নিকট বিনীত নিবেদন এই যে, আমাকে অদ্য ৭ ডিসেম্বর থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের লক্ষ্যে পদত্যাগপত্রটি প্রহণে আপনার একান্ত মর্জি কামনা করছি।’

পদত্যাগের পর এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তার কোনো ভুল হলে বা তার কথায় কষ্ট পেলে মা-বোনদের কাছে ক্ষমা চান সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরতœ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নেবো আজীবন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের পর বিতর্কিত রাজনীতিক সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান দেশত্যাগ করে কানাডা গিয়েছিলেন। কিন্তু দেশটিতে ঢুকতে না পেরে দুবাই ঢোকার চেষ্টা করেন। সেখানেও ব্যর্থ হওয়ার পর আর উপায় না পেয়ে ১২ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসেন বিতর্কিত মন্তব্য ও নারীদের নিয়ে অশোভন বক্তব্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো মুরাদ।

তবে দেশে ফেরার পরও একপ্রকার ‘আত্মগোপনে’ই আছেন ডা. মুরাদ। ১২ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। মুরাদ এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৬ ফ্লাইটে দেশে ফিরেন। বিমানবন্দরে নামার পর সাংবাদিকদের এড়াতে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ব্যবহার না করে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হন তিনি। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এখনো তিনি লোকচক্ষুর আড়ালেই আছেন। এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানের তার বিরুদ্ধে মামলার খবর পাওয়া গেছে।

২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেন তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। পরদিন ৭ জানুয়ারি শপথ নেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। ওই মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানকে। অন্যদিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয় ড. হাছান মাহমুদকে। তবে, ওই মন্ত্রণালয়ে কোনো প্রতিমন্ত্রী দায়িত্বে ছিলেন না। নানা কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্ধ তৈরি হলে সেই বছরের ১৯ মে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ডা. মুরাদকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দীর্ঘ ১৮ মাস পর খোলে স্কুল-কলেজ
করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর বা ৫৪৪ দিন বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর রবিবার দেওয়া হয় দেশের স্কুল-কলেজগুলো। তবে, করোনার সংক্রমণ রোধকল্পে সরকারের সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক পদক্ষেপ শর্ত হিসেবে যুক্ত করা হয়। 

এর আগে দুই দফা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি ওঠে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। প্রথম দফায় চলতি বছরের ৩১ মার্চ ও পরে ২৩ মে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসায় তা সম্ভব হয়নি।

যদিও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ২০২০ সালের এপ্রিল থেকেই টেলিভিশনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাস প্রচার শুরু হয়। এরপর বড় স্কুল-কলেজগুলো এবং পরে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও অনলাইনে ক্লাস শুরু করে। কিন্তু মফস্বল এবং দরিদ্র পরিবারের ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় বহু শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে পারেনি। এর ফলে, শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি হয়।  ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হলেও সতর্কতা-স্বরূপ বলা হয়, দেশে সংক্রমণ বাড়লে ফের বন্ধ হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

মেকি আত্মবিশ্বাসে বিশ্বকাপে সুপারফ্লপ
২০২১ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটহারের বৃত্তে ঘুরপাক খেয়েছে। পরাজয়ের একেকটি গল্প বছর শেষে রূপ নিয়েছে ব্যর্থতার মহাকাব্যে। কালেভদ্রে সাফল্য এলেও সেগুলো চাপা পড়েছে ব্যর্থতার নিচে। হতাশা ও দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে এই দশকের প্রথম বছর। বিতর্কিত হয়েছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট ২০২১ সাল মনে রাখতে চাইবে না।

অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে ২০২১ এর যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের জয় ৪-১ ব্যবধানে। অবিশ্বাস্য সিরিজে সাকিব আল হাসান সিরিজ সেরা। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাংলাদেশে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার কথা ছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু এ সফর স্থগিত করে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস (ইসিবি) ক্রিকেট বোর্ড। তবে সিরিজটি বাতিল হচ্ছে না। ২০২৩ সালে মার্চের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে আসবে ইংলিশরা। তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলবে দুই দল। দুই সপ্তাহে ছয়টি সীমিত পরিসরের ম্যাচ আয়োজন করা হবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। মূলত ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের আইপিএলে অংশগ্রহণের জন্যই সিরিজ স্থগিত করা হয়।

অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হারাতে যে রণকৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল নিউ জিল্যান্ডেরও বিপক্ষেও সেই পরিকল্পনায় মাঠে নামে বাংলাদেশ। ফলাফল বাংলাদেশের সিরিজ জয় ৩-২ ব্যবধানে। নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়ে দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ দেয়। যেমন সিরিজে শেষ ম্যাচে ১৬১ রানের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ১৩৪ রানে। প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ে ম্লান সিরিজ জয়ের আনন্দ।

এই অবস্থায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ কেমন করবে তা আগাম ধারণা পাওয়া গিয়েছিল ঘরের মাঠেই। বার বার বলা হচ্ছিল, ঘরের মাঠে ধীর গতির উইকেটে খেলে মেকি আত্মবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। তখন সংশ্লিষ্টরা কেউই মাথা খাটাননি। ফল বিশ্বকাপে সুপার ফ্লপ বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের কাছে বাছাইপর্বে হারের পাশাপাশি মূল পর্বে জিততে পারেননি কোনো ম্যাচ। মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল যায় বিশ্বকাপে। যেখানে মাহমুদউল্লাহ, সাকিব ও মুশফিকের ছিল সবকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা। অথচ, বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচেই হোঁচট। স্কটল্যান্ড প্রায় ঘোষণা দিয়ে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশকে।

এরপর স্বাগতিক ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জিতে গ্রুপ পর্বের রানার্সআপ হয়ে বাংলাদেশ যায় সুপার টুয়েলভে। এর আগে, বাংলাদেশ মূল পর্বে কেবল একবারই জিতেছিল ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর কোনো ম্যাচ জেতেনি। এবারো সেই রেকর্ডের পরিবর্তন হয়নি। শ্রীলঙ্কার কাছে হারে শুরু। এরপর ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে খালি হাতে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়। পুরো টুর্নামেন্টে দলের ব্যাটিং-বোলিং ছিল হতশ্রী। সঙ্গে দশটি ক্যাচ ছেড়ে কড়া মাশুল দিয়েছে বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের কাছে হার কোনোভাবেই মানতে পারেননি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। দলের হারে ব্যাটিং অ্যাপ্রোচকে দায়ী করেছেন তিনি। বিশেষ করে তিন সিনিয়র সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মন্থর ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। নাজমুল হাসানের সেই সমালোচনা গায়ে মাখান ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে তিন সিনিয়র। বিশ্বকাপ চলাকালে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন পাল্টা জবাব দিতে।

সাকিব সংবাদ সম্মেলনে এসে ‘কড়া’ জবাব দেন। মুশফিক বলেন, সমালোচকদের আয়নায় মুখ দেখতে। মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, সমালোচনা হবেই। এটা কাম্য। কিন্তু সুস্থ সমালোচনা হলে সবার জন্য ভালো।

বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে শুরু মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব, ডমিঙ্গোর কোচিং এবং সার্বিকভাবে দলের পরিকল্পনা, লক্ষ্য এবং খেলোয়াড়দের মানসিকতা, পারদর্শিতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এবারের বিশ্বকাপের পাফরম্যান্স চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দিব কোথা?’

খালেদা জিয়া চিকিৎসা ও মুক্তি
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চলতি বছরের ১১ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরে তাকে ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি। পরে ৯ মে তিনি করোনা থেকে মুক্ত হন। সব মিলিয়ে তখন প্রায় পৌনে দুই মাস হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়ে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন তিনি। গত ১২ অক্টোবর পুনরায় শারীরিক অবস্থান অবনতি ঘটলে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এরপর ২৫ অক্টোবর তার ছোট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর হয় বায়োপসি পরীক্ষা। এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পেতে তা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়। প্রায় এক মাসের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে গত ৭ নভেম্বর বিকেল পাঁচটায় ছাড়পত্র নিয়ে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ ফিরেন খালেদা জিয়া। পুনরায় ১৩ নভেম্বর আবারও হাসপাতালে ভর্তি হন।

বর্তমানে হাসপাতালের সিসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনকে। তিনি ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, ফুসফুস, কিডনি এবং চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এ ছাড়া, বেগম খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বলেও জানিয়েছেন তার চিকিৎসার জন্য গঠিত হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড।

এদিকে, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া ও মুক্তি দাবিতে লাগাতাল কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এরইমধ্যে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সরকারের কাছে আবারও আবেদন করেছে পরিবার। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন আইন যাচাইয়ের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আইনের বাইরে গিয়ে উনার ব্যাপারে কিছুই করার নেই।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার যতটুকু ক্ষমতা ততটুকু আমি করেছি, তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

সর্বশেষ গত ২০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুস আলী আকন্দ। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ‘জনস্বার্থে মামলা’ হিসেবে রিট আবেদনটি জমা দিয়েছেন বিএনপিপন্থী ওই আইনজীবী। 

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজা হলে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এরপর দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনে তাকে গত বছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এতে শর্ত ছিল, তাকে দেশেই থাকতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগার থেকে বেরিয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ওঠেন।

করোনাভাইরাসের বুস্টার ডোজ শুরু
দেশের করোনা ভাইরাসের বুস্টার ডোজ প্রদান শুরু হয় চলতি বছরের ১৯ ডিসেম্বর। এদিন ফাইজারের টিকা দিয়ে এই কার্যক্রমের শুরু করা হয়। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সেবিকা রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়। দেশে করোনার টিকাও প্রথম নেন তিনি। গত ২৭ জানুয়ারি তাকে দিয়েই দেশে করোনার টিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।

এদিন মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান'স অ্যান্ড সার্জন'স (বিসিপিএসএ) মিলনায়তনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা টিকার বুস্টার ডোজের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপর রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে এই ডোজ দেওয়া হয়। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বয়স্ক ও সম্মুখসারির যোদ্ধাদের বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই ডোজ নিতে আসাদের প্রত্যেককেই ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। আগে যেকোনো ডোজ নেওয়া ব্যক্তিরাই বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজার নিতে পারবেন।
 

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়