টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ প্রস্তাব
ডেস্ক রিপোর্ট || বিজনেস ইনসাইডার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২১ সেপ্টেম্বর): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য একটি বৈশ্বিক রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে জাতিসংঘে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন।
করোনা পরিস্থিতি থেকে স্থায়ীভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে এ সময় তিনি বলেছেন, আমাদের এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী বৈশ্বিক রোডম্যাপ প্রণয়ন করা প্রয়োজন-যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার টেকসই উন্নয়নের ওপর নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আর্থ ইনস্টিটিউট, গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক এ সম্মেলনের আয়োজন করে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে টেকসই উত্তরণের ওপরেই এখন এসডিজি’র সাফল্য নির্ভর করছে। এখন বিশ্বের সব স্থানে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা সময়ের দাবি এবং তা অতি জরুরি।
তিনি তাঁর দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় বলেন, ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাদের সম্পদের যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে, তা অবশ্যই কমাতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবনায় শেখ হাসিনা বলেন, চলমান বৈশ্বিক মহামারির অভিঘাতের কারণে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তার জন্য আমরা উদ্বিগ্ন।
তিনি আরও বলেন, অধিকন্তু, আমাদের পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনীর ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর চতুর্থ প্রস্তাবনায় বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে-কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধার পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের বিপর্যয় বা দুর্যোগ মোকাবেলায় জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণকে পূর্ণতা দেবে।
পঞ্চম প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে অবশ্যই পর্যবেক্ষণ জোরদার করা ও যান্ত্রিক সহায়তার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সমন্বয় বাড়ানো উচিৎ।
জরুরি পরিস্থিতি ও বিপর্যয় মোকাবিলায় যথাযথ ও সময়োপযোগী সহায়তা পদক্ষেপ নিশ্চিত করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী মহামারি ও অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রতিটি স্তরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তুতি বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।
২০৩০ এজেন্ডাকে একটি বৈশ্বিক চুক্তি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এটি সকলের অন্তর্ভূক্তিতে আমাদের টেকসই বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি ব্লুপ্রিন্ট। কোনো দেশ একা এই এজেন্ডা অর্জন করতে পারবে না। এই এজেন্ডা অর্জনে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সংহতি বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই ডিকেড অব ডেলিভারি এবং অ্যাকশন অব দ্য এজেন্ডাতে প্রবেশ করলেও, লক্ষ্য এখনো দূরেই রয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন কি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির আগেও অনেক দেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে ছিল না। এই মহামারি তাদেরকে সেই পথ থেকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্বকে হতাশ করেছে। এই বৈশ্বিক প্রাণঘাতী মহামারি বহু মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি এর কারণে অসংখ্য মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়েছে। মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে ও ক্ষুধার্ত রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মহামারির কারণে শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, বিশেষত শিশুদের শিক্ষা।
বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি এই মহামারিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে আমাদের উন্নয়নের অর্জন ও এসডিজিএস অগ্রগতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে অ্যাডাপটেশন ও মিটিগেশন প্রচেষ্টায় পথিকৃত। আমরা সম্প্রতি একটি উচ্চাভিলাষী ও আধুনিক এসডিজি পেশ করেছি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবুজ উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন, লবণাক্ততা সহিষ্ণুতা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিয়ে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করেছি।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২১-এর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এসডিজি সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে প্রথম পাঁচটি দ্রুততম অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশের মধ্যে অন্যতম এবং জিডিপিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশকে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমরা আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা ও নীতিমালায় এজেন্ডা ২০৩০ অঙ্গীভূত করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ২০১৭ এবং ২০২০ সালে দুটি ভিএনআর জমা দিয়েছি। আমরা আমাদের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট খাত ভিত্তিক মূল্যায়ন এবং সমন্বিত এসডিজি করেছি। আমাদের দ্বিতীয় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও এসডিজির সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।
নীতি নির্ধারক হিসেবে বিশ্ব উন্নয়ন আলোচনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিা বলেন, আমি ২০০০ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলনে, ২০৩০ সালের যুগান্তকারী এজেন্ডা গ্রহণ এবং ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি গ্রহণে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছি। এমডিজিতে আমাদের সাফল্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সাফল্যের জন্য একটি ‘অলৌকিক উন্নয়ন ’ হিসাবে স্বীকৃত দিয়েছে, বিশেষ করে দারিদ্রতা হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিঙ্গ অগ্রাধিকার, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, লিঙ্গ সমতা ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, গত এক দশকে আমাদের দারিদ্রতার হার ৩১.৫% থেকে কমে ২০.৫% হয়েছে এবং আমাদের মাথাপিছু আয় তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র: বাসস