সাহেবেরা কামে নেয় না...
সজল সাইখ || বিজনেস ইনসাইডার

ছবি: সহযোগিদের নিয়ে কাজের প্রতীক্ষায় রাজমিস্ত্রি মোহাম্মাদ নীরব
ঢাকা (১৫ সেপ্টেম্বর): কাক ডাকা ভোর, রাজধানীর টাউনহল বাজারে বিক্রেতা ছাড়া তেমন কাউকে চোখে পড়ে না। টাউন হল বাজারের পাশেই আসাদগেট-মোহাম্মদপুর সড়কের পাশে, বটগাছের নিচে হতাশা দৃষ্টিতে কিছু লোক ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। তাদের চোখে মুখে রয়েছে হতাশা আর কপালে চিন্তার ভাঁজ। এদের সবাই পেশায় রাজ মিস্ত্রি।
তেমনি একজনের সঙ্গে কথা হয়। তার নাম মোহাম্মাদ নীরব। রাজমিস্ত্রির পেশায় আছেন দীর্ঘ ২৫ বছর। তার দীর্ঘ কর্মজীবনে, করোনাকালীন সময়ের মতো এমন দুঃসময় আগে কখনো কাটেনি।
ফজর নামাজ শেষে কাজের অপেক্ষায় এখানে বসে থাকা নীরবের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর, বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে জানান, গত একমাসে তিনি মাত্র তিনটি কাজ পেয়েছেন। অথচ করোনার আগে প্রতিদিন কাজ পেতেন। তখন মিস্ত্রিদের নিয়ে টানাটানি লেগে যেত।
মোহাম্মাদ নীরব আরও বলেন, ‘সাহেবেরা এখন কামে নেয় না, করোনার কারণে বাসা বাড়ির মালিকেরা কাজ কম করায়।’
রাজ মিস্ত্রিদের এই দলের দলপতি নীরব, নীরব ছাড়াও এই দলে আরও ৫ থেকে ৬ জন সদস্য রয়েছে। রাজ মিস্ত্রিদের টাকার হিসাব হয় রোজ হিসেবে। আনুমানিক ৫০ বছর বয়সী নীরব, প্রথম কাজ শুরু করেছিলেন ৮০ টাকা রোজে, তখন ছিলেন প্রধান মিস্ত্রির যোগালি। এখন প্রধান মিস্ত্রি হিসেবে পায় ৯০০ টাকা আর যোগালি হিসেবে অন্যরা পায় ৭০০ টাকা করে।
নীরব বলেন, ‘বাসা ভাড়া ৩ হাজার ৫শ, পরিবারের আরও ৪ জন সদস্যের দায়িত্ব আমার উপর। সব মিলিয়ে খুব কষ্টে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউনের সময় ধার করে চলেছি। কিস্তিতে লোন এনে এখনও পরিশোধ করতে পারিনি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৮৫ হাজার টাকা দেনা।’
তিনি আরও জানান, তাদের মতো এই পেশার অনেক মিস্ত্রি কাজ না পেয়ে এখন গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। বাসা ভাড়া না দিতে পারায় অনেককে বাড়িওয়ালা বের করে দিয়েছে।
নীরবের কথায় সুর মেলান তার সহযোগী হাশেম আলি। তিনি জানান, ২০২০ সালের লকডাউনের সময় ভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালা তাকে বাসা ছাড়তে বাধ্য করেছিল। পরে তার পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে গ্রামের বাড়ি ভোলা চলে যান। নীরবের অনুরোধে আবার ঢাকা ফিরে মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যানে ৩ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নেন।
হাশেম আলি বলেন, ‘করোনায় আমাদের কপাল পুড়েছে। ভোর থেকে বেলা ১টা ২টা পর্যন্ত বসে থাকি কাজ পাই না। কাজ না পেয়ে বাসায় ফেরত যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাজ বন্ধ থাকলে কি হবে হাত খরচ তো বসে থাকে না। প্রতিদিন দেড়শ’ থেকে ২শ’ টাকা হাত খরচ লাগে। বাসায় বাজার খরচ আছে, কাজ না থাকলে এই টাকা কোথায় পাবো।’
করোনার সময়ে শ্রম বিক্রি করে দু-মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকা খেটে খাওয়া এসব মানুষ চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। রাজধানী জুড়ে এমন হাজারো মানুষ আছেন যারা দিন আনে দিন খান। একদিন কাজ না করলে পরের দিন তাদের খাবার জোটে না। এসব অসহায় মেহনতি মানুষের চোখে মুখে অন্ধকার আর বুক জুড়ে শুধুই হাহাকার।