’ফোর্বস ৩০ আন্ডার ৩০’ তালিকায় নয় বাংলাদেশি
ডেস্ক রিপোর্ট || বিজনেস ইনসাইডার

ফোর্বস ৩০ আন্ডার ৩০ তালিকায় নয় বাংলাদেশি। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২০ এপ্রিল): বাংলাদেশের নয়জন তরুণ-তরুণী প্রথমবারের মতো 'ফোর্বস ৩০ আন্ডার ৩০' এশিয়া তালিকায় স্থান দিয়েছে। মঙ্গলবার ফোর্বস তাদের ষষ্ঠ বার্ষিকীর সংখ্যায় এ তালিকা ঘোষণা করেছে।
২০১১ সালে প্রখ্যাত ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন ফোর্বসের চালু করা '৩০ আন্ডার ৩০' তালিকাতে ত্রিশ বছরের কম বয়সী উদ্ভাবনী তরুণ তরুণীকে তালিকাভুক্ত করা হয়ে থাকে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট নয়জন বাংলাদেশি তাদের অসামান্য কাজের জন্য এতে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আর এ বছর ত্রিশ জনের মধ্যেই নয় জন বাংলাদেশি এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। তারা মূলত তিন খাতে তাদের কাজের সাফল্য দেখিয়ে এতে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এগুলো হচ্ছে এন্টারপ্রাইজ প্রযুক্তি, সামাজিক প্রভাব ও খুচরা ও ই-বাণিজ্য।
এ তালিকাকে স্থানপ্রাপ্ত বাংলাদেশিরা হলেন, গেজ’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা শেহজাদ নুর তাউস প্রিয় (২৪) ও মোতাসিম বীর রহমান (২৬), ক্র্যামস্ট্যাক’র প্রতিষ্ঠাতা মীর সাকিব (২৮), অ্যাওয়্যারনেস ৩৬০ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা শমী চৌধুরী (২৬) ও রিজভী আরেফিন (২৬), অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ ইমতিয়াজ জামি (২৭), হাইড্রোকিউও প্লাস’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিজওয়ানা হৃদিতা (২৮) ও মোহাম্মদ জাহিন রোহান রাজিন (২২), এবং পিকাবু’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মরিন তালুকদার (২৭)।
ফোর্বস বলেছে যে এই ‘ট্রেলব্লাজার’রা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জিং পরিবেশকে সাহসিকতার সঙ্গে করেছে এবং নতুন পরিস্থিতিতে নতুন সুযোগ সন্ধান করেছে।
ফোর্বস ‘৩০ আন্ডার ৩০ এশিয়া ক্লাস অফ ২০২১’এর মধ্যে ১০ টি বিভাগের প্রত্যেকটির জন্য ৩০ জন তরুণ-তরুণীকে নির্বাচিত করেছে।
বিভাগগুলি হচ্ছে আর্টস; বিনোদন ও ক্রীড়া; ফিনান্স এবং ভেনচার ক্যাপিটাল; মিডিয়া, বিপণন ও বিজ্ঞাপন; রিটেইল ও ই-কমার্স; এন্টারপ্রাইজ টেকনোলজি; শিল্প, উৎপাদন ও শক্তি; স্বাস্থ্যসেবা ও বিজ্ঞান; সামাজিক প্রভাব এবং গ্রাহক প্রযুক্তি।
তালিকাভুক্ত নয় বাংলাদেশির একজন হলেন মীর সাকিব। তার ক্র্যামস্ট্যাক এআই ব্যবহার করে অগোছালো ডেটা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। সাকিব একটি অনুসন্ধান প্ল্যাটফর্ম তৈরির ধারণা পেয়েছিলেন ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থায় কাজ করার সময়। তিনি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছেন সেখানে সহজেই গুগলের মতো এন্টারপ্রাইজের ডেটা অনুসন্ধান করা যায়।
ক্র্যামস্ট্যাকে পিডিএফ এবং ছবি থেকে ডেটা সংগ্রহ করার সুুযোগ রয়েছে। করোনা মহামারি চলাকালীন এটি সংক্রমণের উপর নজরদারি করতে এবং নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ডেটা সংগ্রহ করে সহায়তা করেছে। এটি রকস্টার্ট (নেদারল্যান্ডস), গ্রামীণফোন (টেলিনরের ইউনিট) এবং অ্যাঞ্জেল বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছে।
শেহজাদ নুর তাউস প্রিয় ও মোতাসিম বীর রহমান হলেন গেজ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তাদের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান গেজ গত কয়েক বছর ধরেই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। গেজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ভিজুয়াল রিকগনিশন এপিআই তৈরি করে। এতে স্পুফ-প্রুফ ফেস রিকগনিশন, ওসিআর ও অবজেক্ট রিকগনিশনের মতো নানান ফিচার রয়েছে।
রিজওয়ানা হৃদিতা (২৮) এবং মোঃ জাহিন রোহান রাজিন (২২) হচ্ছেন হাইড্রোক্রো+ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা। এটি হচ্ছে ঢাকা কেন্দ্রিক একটি স্টার্টআপ। এটি পানি ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য এআই ব্যবহার করে কাজ করে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হাইড্রোকো+ একটি সিস্টেম এবং প্রযুক্তি তৈরি করেছে যা পানির গুনগত মান বিশ্লেষণ করতে পারে। সেপ্টেম্বরে হাইড্রোকো+ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিনকে টেকসই বিকাশের লক্ষ্যে জাতিসংঘের ১৭ তরুণ নেতৃত্বের একজন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আহমেদ ইমতিয়াজ জামি (২৭) হলেন অভিজাত্রিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১০ সালে দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, মানবাধিকার এবং পরিবেশ নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে জামি এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এক দশকে এটি ১০ লাখের বেশি মানুষকে সহযোগিতা করেছে এবং তিনটি বিদ্যালয়ের ৫০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে, সাত জেলার ৫৫০ পরিবারকে আর্থিকভাবে সক্ষম করে তুলেছে এবং ১০,০০০ রোগীর জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। মহামারি চলাকালীন সময়ে এ ফাউন্ডেশন দুই লাখ ব্যক্তির মাঝে বিনামূল্যে সবজি বিতরণ করেছে। পাশাপাশি ৬৫ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে মুদিসামগ্রী এবং ৯০ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করেছে। এই কাজের জন্য অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন সরকারের মন্ত্রণালয় এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতো কর্পোরেট দাতাদের কাছ থেকে ২ লাখ ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে।
রিজভী আরেফিন (২৬), শমী চৌধুরী (২৬) হচ্ছেন ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা। ডায়রিয়ায় জটিলতার কারণে ২০১৪ সালে মাকে হারানোর পর শমী চৌধুরী পরিষ্কার পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মানষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে কাজ শুরু করেন। অন্যের জীবন উন্নতি ঘটাতে চান এমন তরুণদের নিয়ে রিজভীর সঙ্গে তিনি ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’ প্রতিষ্ঠা করেন। কুয়ালালামপুর-ভিত্তিক এ এনজিওতে এখন ২৩ টি দেশে ১,৫০০ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনে পাশাপাশি জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিও ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’ কে স্বীকৃতি দিয়েছে।
মরিন তালুকদার (২৭) হচ্ছেন পিকাবুর সহপ্রতিষ্ঠাতা। পাঁচ বছর আগে তিনি ঢাকা-ভিত্তিক অনলাইন স্টোর পিকাবু প্রতিষ্ঠা করেন। পিকাবু হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান যারা মাসিক কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের পরিকল্পনার পাশাপাশি একই দিনে পণ্য সরবরাহ এবং কাস্টমারদের মেম্বারশিপ চালু করে। ২০২১ সালের শেষের দিকে পিকাবু সারা দেশে ১৫০টি ফিজিক্যাল স্টোর খোলার পরিকল্পনা করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পিকাবু ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছে। এর আগে মরিন তালুকদার ই-কমার্স সাইট ইহাটবাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেটা তিনি ২০১৬ সালে তার সহপ্রতিষ্ঠাতা কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।