বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনা: এই মাসে পরামর্শক নিয়োগ
হাসান আজাদ || বিজনেস ইনসাইডার

বর্তমান মহাপরিকল্পনায় কী আছে?
ঢাকা (১৯ এপ্রিল): দেশে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতায় এই মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য চলতি মাসেই পরামর্শক নিয়োগ করা হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানির মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে আমরা জাইকার সঙ্গে কাজ করছি। এ জন্য গত মাসে জাইকা পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও তারা পারেনি। তবে এই মাসে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে এটা নিশ্চিত করেছেন তিনি।
সরকারের এই কর্মকর্তা জানান, জ্বালানি খাতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব নয়। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছিল মোট বিদ্যুতের অর্ধেক উৎপাদন হবে কয়লা থেকে। এর মধ্যে দেশীয় কয়লা থাকবে অর্ধেক। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে কয়লা উত্তোলন করা দুষ্কর। এসব কারণে পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। যে কারণে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আগে বিদ্যুৎ খাত নিয়েই কেবল মহাপরিকল্পনা করা হতো। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ ও চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক জ্বালানির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনাই থাকত না।
পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান (পিএসএমপি)-২০১৬ অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে চাহিদা অনেক কম।
বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা গড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। আর দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ৭৭৮ মেগাওয়াট। অর্থাৎ গড়ে দৈনিক চার হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাচ্ছে না, রিজার্ভে থাকছে। বছরের বেশিরভাগ সময়ই এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকে। এ জন্য সরকারকে বাড়তি টাকাও গুনতে হচ্ছে। এই ধরনের অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও সংকট সমাধানে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পরিকল্পনা একসঙ্গে করা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে মোট ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্তত ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লা থেকে হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এখন সে পরিমাণ কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। এমন কি এই পরিকল্পনা করার আগে দেশের কয়লা খনিগুলোর চিত্র পর্যালোচনা করা হয়নি।
একইসঙ্গে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩০ ভাগ গ্যাস বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে আসার কথা। কিন্তু মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের চার বছর পরে এসে দেখা যাচ্ছে, দিন দিন দেশের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন কমে আসছে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়ছে। এসব বিষয় তখন আমলে নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বাকি ২০ ভাগ বিদ্যুতের মধ্যে ১০ ভাগ তরল জ্বালানি এবং ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রধানত নির্ভরশীল গ্যাসের ওপর। চলতি বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে গড়ে এক হাজার ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এতে সর্বোচ্চ ৬ হাজার মেগাওয়াটের কিছু কম বিদ্যুৎ উৎপান করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া বাকি বিদ্যুতের বেশিরভাগ উৎপাদন করা হচ্ছে জ্বালানি তেল ও কয়লা দিয়ে।
এখন প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান কমে যাওয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৫৪৬ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছর থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশে মোট ২০ হাজার ৭১১ মেগাওয়াট উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকারের টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) এই পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য খাতে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
বর্তমানে দেশে গ্যাসের উৎপাদন গড়ে আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কয়লা উত্তোলন হয় গড়ে সাড়ে তিন হাজার টন। আর এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট।