শুক্রবার

২৬ এপ্রিল ২০২৪


১৩ বৈশাখ ১৪৩১,

১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ণাঙ্গ বিচার হয়নি: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ১৫ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৫:৩৭, ১৫ আগস্ট ২০২২
বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ণাঙ্গ বিচার হয়নি: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা (১৫ আগস্ট): মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ণাঙ্গ বিচার হয়নি। খণ্ডিত বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে যারা ষড়যন্ত্রকারী তাদের বিচার হয়নি। পরিকল্পনায় যারা জড়িত ছিল তাদের বিচার হয়নি। যারা সুবিধাভোগী তাদের বিচার হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধ্বংস করেছে তাদের বিচার হয়নি। আবার নতুন করে তদন্ত করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারার ২ এর বি অনুসারে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট করে তাদের বিচার করার সুযোগ রয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন সময় এসেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারী, পরিকল্পনাকারী, সুবিধাভোগী এবং যারা সে সময়ে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছিল তাদেরও বিচার করতে হবে। একটা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, কারা সুবিধাভোগী, কারা ষড়যন্ত্রকারী, এমনকি যারা আদালত থেকে ছাড়া পেয়েছেন তাদের স্বরূপ উন্মোচন করা দরকার।
 
আজ ১৫ আগস্ট (সোমবার) সকালে রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনের যে কলঙ্ক বাঙালি জাতির ললাটে লেপন করা হয়েছিল, এ কলঙ্ক কোনোদিনই মুছে যাবে না। বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে জীবনের প্রায় ১৪ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু চাইলে পাকিস্তানিদের সাথে সমঝোতা করে পাকিস্তানের নেতা হিসেবে রাষ্ট্র ও সরকারে থাকতে পারতেন। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। পাকিস্তানিরা তাঁকে ফাঁসি দিতে পারেনি। কিন্তু কিছু কুলাঙ্গার বাঙালি তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি মুজিবের হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনার অবকাশ নেই। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করার চেষ্টা। 

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিতরা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করেছিল। স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে সে সময় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা দেওয়া হয়েছিল। এরশাদ সরকার, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সময়ে তারা পুনর্বাসিত হয়েছিল। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ১২টি রাষ্ট্রের হাইকমিশনে প্রতিষ্ঠা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যাবে না এ অর্ডিন্যান্সকে পার্লামেন্টে ১৯৭৯ সালে আইনে পরিণত করেছে জিয়াউর রহমান। এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে খুনিদের পার্লামেন্টে নিয়ে এসে বিরোধী দলে বসিয়েছে। এভাবেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের শেষ আকাঙ্ক্ষার জায়গা, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুসহ সব আদর্শকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

মন্ত্রী যোগ করেন, ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর আবার নতুন করে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ২১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগকে তিনি আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা হবে। খুনিদের বিচারের লক্ষ্য নিয়ে তিনি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করেন। জাতির দুর্ভাগ্য ৩৪ বছর অপেক্ষা করতে হয় জাতির জনকের খুনিদের বিচার করার জন্য। ৩৪ বছর পরও আমরা সব খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর করতে পারিনি।

‘একজন শেখ মুজিবের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না’ উল্লেখ করে শ ম রেজাউল করিম আরও বলেন, যে মানুষটি জীবনে কোনো সুখ ভোগ করেননি, যে মানুষটি আমাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের পরিশ্রম করা দরকার। তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এ অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার জন্য আবার একটি মহল সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তারা ১৯৭৫ এ মিথ্যাচার করেছিল, মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেশকে অস্থিতিশীল করেছিল। এখন সে জাতীয় একটি চক্র নানাভাবে মিথ্যাচার করছে। সে চক্রের অশুভ ষড়যন্ত্র, অশুভ পরিকল্পনা যাতে বাস্তবায়ন না হয় সে লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ শেখ হাসিনার কাছেই নিরাপদ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাতেই সৃষ্টি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান কাজী আশরাফ উদ্দীন, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। এ ছাড়া, এদিন দুপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন মন্ত্রী। 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়