‘সানোফি’ বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছে, কর্মীদের একাংশ বুঝে পায়নি পাওনাদি
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

ছবি: রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনোমিক রিপোর্টাস ফোরামের মিলনায়তনে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন
ঢাকা (০৬ সেপ্টেম্বর): ফ্রান্সের বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ‘সানোফি’ বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছে। যা এখন কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোম্পানির বিক্রি করা টাকা তাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতিও পেয়েছে।
এ রকম পরিস্থিতিতে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মচারীদের একাংশ দাবি করছে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের পাওনা টাকা এবং ক্ষতিপূরপণ না দিয়েই তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনোমিক রিপোর্টাস ফোরামের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
তারা বলছেন, বাংলাদেশের শ্রম আদালতে সানোফি-র বিরুদ্ধে ৩৭৯ জন কর্মচারীদের করা মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় সানোফি-র বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে পারে কি?
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়ার্কার্স রিসোর্স সেন্টারের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি দেশ থেকে কোনো বহুজাতিক কোম্পানি চলে গেলে সাধারণত তারা কর্মীদের একটা ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। যদিও এ জন্য আইনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুজ্জামান রাজু বলেন, আমরা শুরুতেই মামলা করিনি। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং ফ্রান্সের দূতাবাসে গিয়েছি, কোথাও কোনো সমাধান পাইনি। ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে ১৭টি মিটিং হলেও কোনো উপায় না দেখে আমরা মামলা করেছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মামলায় আদালত কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি নির্দেশনা জারি করেন এবং ১৫ দিনের মধ্যে সেটি সমাধান করার জন্য সানোফিকে বলা হলেও এখনো কোনো সমাধান মেলেনি।
সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চক্রবর্তী বলেন, এটা আমাদের ন্যায্য পাওনা। এর জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি, তবুও তাদের টনক নড়েনি। ৩৭৯ জন শ্রমিকের কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, প্রফিট শেয়ারের কোটি কোটি টাকার পাওনা না মিটিয়েই সানোফি তাদের শেয়ার বিক্রির ৪০০ কোটি টাকা দেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের ফান্ড, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি ফান্ড প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে।
সঞ্জীব চক্রবর্তী বলেন, সানোফি থেকে প্রথমে এক বছর এবং পরবর্তীকালে তিন বছর চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে, আমাদের কর্মীদের মধ্যে অনেকের এখনো ২০ থেকে ২৫ বছর চাকরির বয়স আছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সানোফির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত প্রায় এক হাজার কর্মী রয়েছে। এদেরমধ্যে প্রায় ৭০০ জন তাদের পাওনা বুঝে পেয়েছেন, যারা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। কারণ নিয়ম অনুযায়ী প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুয়িটির টাকা পেতে হলে একজন কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যহতি নিতে হয়।
ওই কর্মকর্তাদের জানান, ৩৭৯ জন কর্মচারী চাকরি থেকে অব্যাহতি না নিয়েই তারা যে ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। যা আইনসম্মত নয়। এই মামলাটি যেহেতু এখনো বিচারাধীন আছে তা কিছু বলা যাচ্ছে না। যারা মামলা করেছেন তাদের কেউই চাকরি থেকে অব্যহতি নেননি, তাহলে কোম্পানি কীভাবে তাদের পাওয়া পরিশোধ করবে।
প্রসঙ্গত, সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড ফ্রান্স বাংলাদেশে ১৯৫৮ সালে যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ ৬২ বছর ব্যবসা করে এখন গুটিয়ে নিচ্ছে তাদের ব্যবসা।
সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড ফ্রান্স তাদের প্রায় ৪৫ শতাংশ শেয়ার বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের ও বিসিআইসির এবং বাকি প্রায় ৫৫ শতাংশ সানোফি গ্রুপের। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি তার প্রায় ৫৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই মোতাবেক এ বছরের ২০ জানুয়ারি তাদের শেয়ার বিক্রির জন্য বোর্ড সভায় চূড়ান্তভাবে ছাড়পত্র পেয়েছে।
সানোফির বক্তব্য: বিষয়টি সাব জুডিস বা বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। তাই, আমরা এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে পারছি না। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সানোফি এর কর্মীদের স্বার্থ ও কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে, যখন সানোফি, সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সানোফি বাংলাদেশ) সকল শেয়ার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের (বেক্সিমকো ফার্মা) কাছে বিক্রির সদিচ্ছা প্রকাশ করে, তখন আমরা ব্যাখ্যা করে জানিয়েছিলাম শেয়ার হস্তান্তরের পর, সানোফি বাংলাদেশ একটি পৃথক আইনি সত্ত্বা হিসেবে বিদ্যমান থাকবে। এবং আগেও প্রযোজ্য ছিল এমন নিয়ম ও শর্তাবলীর সাপেক্ষে সানোফি বাংলাদেশের কর্মীরা সেখানে তাদের চাকরি অব্যাহত রাখতে পারবেন।
আমরা আবারও জানাচ্ছি যে, ব্যবসায়ের ক্রমবর্ধমান প্রকৃতিকে অব্যাহত রাখার জন্যই বেক্সিমকো ফার্মাকে নির্বাচিত করা হয়েছে, যাতে দেশজুড়ে আরো অধিক সংখ্যক রোগী সানোফির পণ্য ব্যবহার করতে পারেন।