মঙ্গলবার

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


১ আশ্বিন ১৪৩২,

২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

স্বাস্থ্যে অনিয়মের অভিযোগে আটকে থাকা বিল ছাড়

আসিফ শওকত কল্লোল || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৪ এপ্রিল ২০২১  
স্বাস্থ্যে অনিয়মের অভিযোগে আটকে থাকা বিল ছাড়

ছবি: ডিএমসিতে সিট না পেয়ে রোগীকে নিয়ে অন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন স্বজনরা, বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা(১২ এপ্রিল): স্বাস্থ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন চিকিৎসা সরজ্ঞাম কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে আটকে থাকা বিভিন্ন ঠিকাদারদের বিল ছাড় করেছে অর্থবিভাগ। ছাড়কৃত বিলের পরিমাণ তিনশ ৪৩ কোটি টাকার বেশি।

গত সোমবার অর্থ বিভাগের যুগ্নসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত অর্থ ছাড়ের চিঠি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।

ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০২০-২১ অর্থ বছরে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ঔষধাগাররে (সিএমএসডি) সংগৃহীত মালামালের বিল পরিশোধ বাবদ তিনশ ৪৩ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা অর্থ বিভাগের ‘করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব মোকাবেলায় তহবিল’ থেকে “চিকিৎসাা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহ’ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, অনিয়মের অভিযোগ থাকার পরেও এই টাকা ছাড় করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে চাপ ছিলো। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী শুরু হওয়ার প্রথমদিকেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিএমএসডি নানা চিকিৎসা ও সুরক্ষা সরঞ্জাম কিনে। গেল বছরের ৩ জুনের আগ পর্যন্ত এক  হাজার ২৮৫ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত মূল্যে ১৯৬টি প্যাকেজের আওতায় বিভিন্ন কোভিড-১৯ সামগ্রী কেনার পরিকল্পনা নেয়। এরমধ্যে ৩৪৪ কোটি ১১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে ৫৭টি প্যাকেজের দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঠানো হয়। আর ৫ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে দুটি প্যাকেজের দরপত্র মূল্যায়নের জন্য পাঠানোও হয়নি।

অন্যদিকে ৩৭১ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের ৫৮টি প্যাকেজের দর প্রস্তাব পাওয়া গেলেও সেগুলোর দরপত্র মূল্যায়ন করা হয়নি। এসব প্যাকেজের আওতায় কোন কোন মালামাল আংশিক বা সম্পূর্ণ সরবরাহ করা হয়েছে। সর্বমোট ৭২০ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা মূল্যের সুরক্ষা সামগ্রী ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়ে কোনো ধরনের নিয়ম মানা হয়নি।এমনকি পণ্য ক্রয়ে বরাদ্দের জন্য সম্মতিও চাওয়া হয়নি।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এসব অনিয়মের কথা জানিয়ে এবং বিল ছাড়ের জন্য ঠিকাদারদের চাপের বিষয়টি উল্লেখ করে সিএমএসডি থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা হয়। ওই চিঠিতে এসব কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়।

সিএমএসডির চিঠিতে বলা হয়েছিলো, পিপিআর-২০০৮ অনুসারে সরকারি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) প্রাথমিক প্রক্রিয়া যেমন- ক্রয়কারী কার্যালয় প্রধান কর্তৃক ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন, আনুষ্ঠানিক দর কষাকষি, দরপত্র বা প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির সভা করা এসব অনুসরণ করা হয়নি। বিপুল অংকের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকলেও পিপিআরের বিধান অনুসরণ করে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ আদেশ অনুযায়ী প্রযোজ্য যথাযথ ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও গ্রহণ করা হয়নি।

চিঠিতে আরো বলা হয়, চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে সে সময় কোন নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড জারি করা হয়নি। কার্য সম্পাদন জামানত গ্রহণ করা হয়নি। কোনো সরবরাহ চুক্তি সম্পাদন করা হয়নি। এমনকি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন ও চুক্তি স্বাক্ষর ব্যতীত সরবরাহ আদেশগুলোও বিধিসম্মত হয়নি। সরবরাহ আদেশে সরবরাহের নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সামগ্রীর পরিমাণ উল্লেখ করা হলেও নির্ধারিত কোনো একক মূল্য ও মোট মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।

জানা গেছে, সরঞ্জাম ক্রয়ের বিপরীতে বিল পরিশোধের বিষয়ে নির্দেশনার জন্য গত বছরের জুনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে পাঠানো এসব প্রস্তাবে নানা প্রক্রিয়াগত ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় সেগুলোর তদন্ত করছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। তবে এখনো এ-সংক্রান্ত বিষয়ে সিএমএসডিকে  কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

এদিকে, মহাখালী করোনা হাসপাতাল সম্পর্কে ডিএনসিসি’র মেয়র আতিকুল ইসলাম বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে জানান, হাসপাতালের চিকিৎসা সরজ্ঞামের চাহিদাপত্র সিএমএসডিতে (সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরস ডিপোর্ট) পাঠানো হয়েছে। ওইসব সরজ্ঞাম পাওয়ার পর হাসপাতালটি চালু করা হবে। 
 

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়