সাত শিল্প এলাকায় বিশেষ নজরদারি
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

ছবি: সাত শিল্প এলাকায় বিশেষ নজরদারি করবে সরকার
ঢাকা (১৩ এপ্রিল): বুধবার থেকে পরবর্তী আটদিন কঠোর বিধি নিষেধে চলবে সারা দেশ। এসময় খোলা থাকবে কল কারখানা ও গার্মেন্টস শিল্প। এজন্য করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সাতটি শিল্প এলাকায় বিশেষ নজর দারি করবে সরকার।
শ্রমঘন গুরুত্বপূর্ণ এ সাত শিল্প এলাকার মধ্যে রয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা ও চট্টগ্রাম। সোমবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।
একই বৈঠকে শ্রমিকদের আনা নেওয়ার জন্য কারখানা মালিকদের পরিবহনের ব্যবস্থা করা, সরকারি কারখানার তিনজন শ্রমিকের পরিবর্তে দুজন শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো ও বদলি শ্রমিক না নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এসব নির্দেশনার চিঠি সংশ্লিষ্ট সরকারি বেসরকারি শিল্পকারখানাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও গার্মেন্টস মালিকদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচল থাকছে শিল্প-কারখানা। এসব কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ হচ্ছে কিনা তা বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে নিশ্চিতে উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও সরকার এতে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ-সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিক-কর্মচারিদের অবশ্যই নিজস্ব পরিবহন দিয়ে আনা-নেওয়া করতে হবে। সম্ভব হলে কারখানার মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।
শিল্পসচিব কে এম আলী আজম এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লকডাউনে’র মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজস্ব পরিবহনে আনা-নেওয়া না করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হবে। নিয়ম না মানলে এসব প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন করতে দেওয়া হবে না।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি কারখানায় সারা দেশে ৩২ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সব সরকারি কারখানায় চিঠি পাঠিয়ে শ্রমিকদের আনা-নেওয়াসহ অন্যান্য বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘লকডাউনে’ সরকারি কারখানার তিনজন শ্রমিকের পরিবর্তে দুজন শ্রমিককে দিয়ে কাজ করাতে হবে। বদলি শ্রমিক বাদ দিতে হবে। কারখানা থেকে দূরে থাকা শ্রমিকদের কারখানার মধ্যে অস্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তুলে বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের খাবার, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা সরবরাহ করতে হবে। আশপাশের শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সূত্র জানিয়েছে, শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি সোমবার একটি ভার্চুয়াল সভা করেছে। সরকার-মালিক-শ্রমিক পক্ষের সমন্বয়ে গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির ওই সভায় কারখানা সচল রাখলেও শ্রমিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনলাইন সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রাথমিক অবস্থায় শ্রমঘন গুরুত্বপূর্ণ সাত এলাকা-ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা ও চট্টগ্রাম নজরদারিতে অগ্রাধিকার পাবে।
সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে কারখানায় স্বাস্থ্যবিধির পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ সম্ভব হয় না। এর আলোকে এবার বিশেষভাবে কারখানায় প্রবেশের সময়সূচি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য বলা হয়েছে। উৎপাদন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পৃক্ত বিভাগগুলোর শ্রমিকদের প্রবেশের আলাদা সময়সূচি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। উৎপাদনের শুরুতেই কাটিং বিভাগের শ্রমিক প্রয়োজন হয়। তাই এ বিভাগের শ্রমিকদের কারখানায় ঢোকার সময় নির্ধারিত থাকবে সবার আগে। এরপর পর্যায়ক্রমে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের শ্রমিকরা কারখানায় ঢুকবেন। কারখানায় ঢোকার সময়ের সঙ্গে মিল রেখেই নজরদারি বাড়ানো হবে হবে।