সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এলপিজির মূল্য নির্ধারণ
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

ছবি: এলপিজির মূল্য ঘোষণা করছেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল জলিল
ঢাকা (১২ এপ্রিল): দেশে প্রথমবারের মতো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি) মুল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারণ করা দাম অনুযায়ী সরকারি খাতে উৎপাদিত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজির মুল্য ৫৯১ টাকা এবং বেসরকারি খাতে ১২ কেজির এলপিজির মূল্য ৯৭৫ টাকায় বিক্রি করা হবে। অটোগ্যাসের লিটার প্রতি ৪৭ টাকা ৯২ পয়সা নির্ধারিণ করা হয়েছে। আজ সোমবার থেকেই এই আদেশ কার্যকর হবে।
সোমবার দুপুরে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির মুল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এই দাম ঘোষণা করেন কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল জলিল।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু ফারুক, সদস্য (গ্যাস) মোঃ মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, সদস্য (বিদ্যুৎ) মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও সদস্য (প্রেট্রোলিয়াম) মোঃ কামরুজ্জামান।
বিইআরসির চেয়ারম্যান জানান, প্রপেন বিউটেনের অনুপাত করা হয়েছে যথাক্রমে ৩৫ ও ৬৫ শতাংশ হারে। এই দর মানতে বাধ্য। না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোক্তারা সচেতন এর চেয়ে বেশি দামে ক্রয় করবেন না বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান।
তিনি আরও জানান, সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে প্রতি মাসের ভিত্তি মূল্য ধরা হয়েছে। মার্চের দও কেজি প্রতি ৫১ টাকা ৩৫ পয়সা ধরে ঘোষিত দর। অপরেশনার ব্যায় যুক্ত করে প্রতি কেজি ৭৬ টাকা ১২ পয়সা ও মুসকসহ খুচরা মূল্য ধরা হয়েছে ৮১ টাকা ৩০ পয়সা। সৌদির দর উঠা-নামা করলে ৫২ টাকা ৩৫ পয়সার স্থলে উঠা-নামা করবে। অন্যদর অপরিবর্তিত থাকবে।
প্রতিমাসে সৌদি সিপির ভিত্তিতে পুনঃনির্ধারণ করার জন্য বিইআরসির একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আরামকো ঘোষিত দর সংগ্রহ পুর্বক ২৫ তারিখের মধ্যে সুপারিশ প্রদান করবে পরবর্তী মাসের দরের। অন্যদিকে কোম্পানিগুলো প্রতি মাসের পনের তারিখের মধ্যে সৌদি সিপির দর লিখিতভাবে কমিশনে দেবেন।
অটো গ্যাসের আদেশে বলা হয়েছে, মার্চের সৌদি সিপি অনুযায়ী যথাক্রমে প্রোপেন ও বিউটেন দর ৬২৫ ও ৫৯৫ ডলার। ৮৪ টাকা ৮০ টাকা ডলার মূল্য বিবেচনায় অটোগ্যাসের ভিত্তি মূল্য (লিটার) ২৮ টাকা ৫২ পয়সা, এরসঙ্গে জাহাজ ভাড়া ৪ টাকা ৪৮ পয়সা, অন্যান্য চার্জ দশমিক ৩০ পয়সা, মজুদকরণ চার্জ ২ টাকা ৬৩ পয়সা, মুসক ২ টাকা ৭৪ পয়সা, পরিবহন চার্জ এক টাকা ২৫ পয়সা ও স্টেশন চার্জ ৮ টাকা বিবেচনায় ৪৭ টাকা ৯২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আইন অনুযায়ী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম এনার্জির মূল্যহার নির্ধারণ করার এখতিয়ার বিইআরসির। পেট্রোলিয়াম পণ্যের আপস্টিম ও ডাউনস্টিম দুটি বিষয় থাকে। আমরা ডাউনস্টিমের দর নির্ধারণ করি। ৩টি প্রবিধানমালা খসড়া করেছি,প্রবিধানমালা এখন চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের আইনি অধিকার বাস্তবায়নের জন্য ক্যাব একটি রিট দায়ের করে। কোটের আদেশের প্রেক্ষিতে গণশুনানি নেওয়া।
এখানে উল্লেখ্য, বেসরকারি খাতে এতদিন কোম্পানিগুলো নিরেজদের মতো করে দাম নির্ধারণ করতো। এতে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। মূল্য নির্ধারণের এখতিয়ার কার এ নিয়ে দীর্ঘদিন জ্বালানি বিভাগ, বিইআরসি ও বিপিসির মধ্যে রশি টানাটানি ছিলো। সর্বশেষ ক্যাবের এক রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোট এলপিজির দর নির্ধারণ না করায় বিইআরসিকে শোকজ করে। পরে আদালতের নির্দেশে গত ১৪ জানুয়ারি গণশুনানি করে বিইআরসি।
দেশে এলপি গ্যাসের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে চাহিদা ছিল ৪৪ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। কয়েক বছরে চাহিদা বেড়ে ১২ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। জাইকার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ও ২০৪১ সালে ৬০ লাখ টন চাহিদা হবে।