মঙ্গলবার

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


১ আশ্বিন ১৪৩২,

২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

অ্যাফোডেবল বিদ্যুতের জন্য কয়লা বিদ্যুৎ জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ০৩:১৩, ১২ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ০৬:২১, ১২ এপ্রিল ২০২১
অ্যাফোডেবল বিদ্যুতের জন্য কয়লা বিদ্যুৎ জরুরি

‘বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওই আলোচনায় অংশগ্রহণকারীগণ

ঢাকা (১১ এপ্রিল): উচ্চ আয়ের দেশের কাতারে যাওয়ার জন্য দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখার কোনো বিকল্প নেই। আর এটা নিশ্চিত করার জন্য অ্যাফোডেবল এনার্জি সরবরাহ পাওয়া খুব জরুরি। কেবলমাত্র দেশী ও আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমেই আগামী ৪ দশক পর্যন্ত অ্যাফোডেবল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। 

এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’ ম্যাগাজিন আয়োজিত ‘ইপি টকস’-এ অংশ নেওয়া জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়িক নেতা, সাবেক কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদরা।

এ সময় তারা পরামর্শ দেন, এ বিষয়ে জন্য উন্নয়ন অংশীদার ও ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করতে না চাইলে নিজস্ব বিনিয়োগের মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন ও কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হোক। 

‘বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওই আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোমার প্রেসিডেন্সির স্পেশাল এনভয় আবুল কামাল আজাদ, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পলিসি রির্সাস ইনটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর আহসান মনসুর। আলোচ্য বিষয়ের ওপর উপস্থাপনা পেশ করেন ইঞ্জিয়ার আবদুস সালেক। 

আলোচনায় অংশ নেন বিজনেস ইনশিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট-এর চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান, সাবেক বিদ্যুৎ সচিব ডক্টর সুলতান আহমেদ, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুরুল আলম, বিপিডিবির চেয়ারম্যান ইঞ্জিয়ার বেলায়েত হোসেন, অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর ফিরোজ আলম ও খনি প্রকৌশলী ডক্টর মুশফিকুর রহমান। 

আলোচনায় আবুল কামাল আজাদ বলেন, কার্বন নিউট্রাল মানে কয়লা বিদ্যুৎ থেকে সরে আসার ধারণা সঠিক নয়। বরং অ্যাফোবেডল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি যথাযথ জ্বালানি মিশ্রণ খুব জরুরি। এতে কয়লাকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। কারিগরি এবং অর্থনৈতিকভাবে নিজস্ব কয়লা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে আহরণ যথাযথ হলেও বিশেষজ্ঞরা তা যথাযথভাবে রাজনীতিবিদদের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং কয়লার জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ না পেলে এটার জন্য নিজস্ব অর্থায়ন করতে হবে। আর এই সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। 

ডক্টর আহসান মনসুর এ সময় বলেন, মোট ক্ষমতার শতকরা ৫০, ৩৫ বা তার চেয়ে কম হলেও কয়লা বিদ্যুৎ থেকে সরে আসার সুযোগ নেই। অর্থনীতির প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে আসার জন্য নিজস্ব কয়লা ব্যবহার করে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে, আর নয়। কয়লা ব্যবহারে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নইলে তা আর কখনো ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। 

আবুল কাসেম খান বলেন, কয়লা আমাদের জাতীয় সম্পদ। ১৭ কোটি মানুষের স্বার্থেই এটার উত্তোলন ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর সেটার জন্য কয়েক লক্ষ্য মানুষকে স্থানান্তর ও পুনর্বাসন কোনো সমস্যা নয়। কেননা কেবল কয়লা ও কয়লা বিদ্যুৎ পারে আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত জ্বালানি নিরাপত্তা এবং সহনীয় দামে বিদ্যুৎ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে। কারণ যারা কয়লা থেকে সরে আসার কথা বলছে তাদের অর্থনীতির উচ্চমূল্যের জ্বালানি ব্যবহারের সক্ষমতা আছে। আমাদের নেই। 

ডক্টর সুলতান আহমেদ বলেন, কয়লার বিরুদ্ধে আমাদের সবচেয়ে বড় যুক্তি হচ্ছে আমরা দূষণ করছি খুব সামান্য। তারপরও দূষণ কমাতে আমরা বিনিয়োগ করছি। ফলে আমাদের অ্যাফোডেবল বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য বৈশ্বিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে কয়লা বিদ্যুতের জন্যও তাদেও সাপোর্ট দিতে হবে।

নূরুল আলম বলেন, কয়লা বিদ্যুৎ থেকে সরে আসার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আছি। ফলে নতুন পরিকল্পনা কয়লাকে নতুন করে মূল্যায়ন করতে হচ্ছে।

ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন বলেন, জ্বালানি খরচের বিবেচনায় কয়লা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সাশ্রয়ী। অর্থায়ন ও প্রযুক্তি পাওয়া আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ হবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বৈশ্বিক কয়লা ব্যবহার কমে আসার কারণে আগামী তিন চার দশক কয়লার দাম স্থিতিশীল থাকবে। এমন কি তা কমেও আসতে পারে। তাই কীভাবে কয়লা ব্যবহারে থাকা যায় তার কৌশল চূড়ান্ত করতে হবে।

ডক্টর ফিরোজ আলম মনে করেন, উন্নত দেশগুলোর ২০৫০ সাল পর্যন্ত কয়লার ওপর নির্ভরশীল থাকবে। কেবলমাত্র ইউরোপ রাশিয়ার পাইপ গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার কারণে দ্রুত কয়লা থেকে সরে আসতে শুরু করেছে। ফলে বাংলাদেশের কয়লা বিদ্যুৎ থেকে সরে আসার সুযোগ নেই।

ডক্টর মুশফিকুর রহমান বলেন, ভুল নীতির কারণে বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলন একটি জাতীয় লোকসান। কেননা এটার কারণে খনি মুখে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে এবং ঐ কেন্দ্রের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গিয়ে প্রতি দিনে ১২০ ডলার ব্যয়ে কয়লা তোলা হচ্ছে। আগামী দিনে এই খরচ আরও বৃদ্ধি পাবে। অথচ আমদানি করা কয়লা পারাতে খরচ প্রতিটন সার্বেচ্চ ৮৫ ডলার। 

ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আবদুস সালেক বলেন, জ্বালানি নিরপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশের কয়লা থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। আবার এককভাবে আমদানি করা কয়লা ওপর নির্ভরশীল থাকলেও তা হবে না। পরিকল্পনা নিয়ে এখনই দেশীয় কয়লা উন্মুক্ত পদ্ধতি উত্তোলন ও খনিমুখে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে হবে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
 

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়