Notice: Undefined index: HTTP_REFERER in /mnt/volume_sgp1_04/busine23n9s5der/public_html/common/config.php on line 2
১০টি দুর্বল ব্যাংক একীভূত হতে পারে

সোমবার

১৬ জুন ২০২৫


৪ আষাঢ় ১৪৩২,

১৯ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

১০টি দুর্বল ব্যাংক একীভূত হতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ৯ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৯:৩৪, ৯ এপ্রিল ২০২৪
১০টি দুর্বল ব্যাংক একীভূত হতে পারে

সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাংকিং খাতকে আরো শক্তিশালি করা লক্ষ্যে দেশের সব দুর্বল বা খারাপ ব্যাংকগুলোকে সবল বা ভালো ব্যাংকের সাথে একীভূত (মার্জ) করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে মূলধনের পর্যাপ্ততা, শ্রেণিকৃত ঋণের মাত্রা, ঋণ-আমানত অনুপাত এবং প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা স‌ঞ্চি‌তির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৪০টি ব্যাংক ভালো করলেও বাকিগুলো সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। একটি খাতে দুর্বল প্রতিষ্ঠান থাকলে তা সবল প্রতিষ্ঠানের জন্যও ক্ষতিকর। এর প্রভাব দীর্ঘকালীন সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়ে। তাই ব্যাংকিং খাতে কর্পোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার রোডম্যাপের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে কমপক্ষে ১০টি ব্যাংককে চাপ দিয়ে একীভূত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে নয়টি হল- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও এবি ব্যাংক। এছাড়াও তালিকায় জনতা ব্যাংকের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।

এসব ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের মাত্রা, মূলধনের পর্যাপ্ততা, ঋণ-আমানত অনুপাত ও প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা স‌ঞ্চি‌তির পরিমাণ- এই চারটি দিক বিবেচনায় নি‌য়ে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত সোমবার (৪ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) নেতৃবৃন্দকে এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকসহ মোট ৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে দুর্বল ব্যাংক মালিকদের প্রস্তুতি নিতে এবং তারা কোন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় তা ঠিক করতে নির্দেশে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘কোনও ব্যাংক যদি পিসিএর পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে না পারে, তখন মার্জারের মতো অপশন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে চলে আসবে।’

এর আগে ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক পিসিএ বাস্তবায়নে এ সম্পর্কিত একটি দিক নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে মার্জিংয়ের মত ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে রয়েছে বলে দিক নির্দেশনায় জানানো হয়।

দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি সবল বা ভালো ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে বৃহৎ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক গঠনের মাধ্যমে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে বলে সভায় ব্যাংক পরিচালকদের পরামর্শ দেন গভর্নর।

বৈঠকে অংশ নেওয়া ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দুই শক্তিশালী বড় বেসরকারি ব্যাংক সিটি ও ইস্টার্ন ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন বড় ব্যাংক গঠন করা যেতে পারে বলে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের কল্যাণে আমরা ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করব।’

পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান বলেন, বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর একীভূতকরণ আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী পরিচালিত হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। দুর্বল ব্যাংক কখনোই শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে চলতে পারে না। যেমন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমাদের ব্যাংক ভালো অবস্থানে আছে। আমাদের সঙ্গে একটি দুর্বল ব্যাংক চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ব্যাংক কোম্পানি আইন ২০২৩-এর সর্বশেষ সংশোধনীতে কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা আমানতকারীর স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকলে যেকোন ব্যাংককে চাপ দিয়ে একীভূতকরণ শুরু করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

দেশের ব্যাংকিং খাতে ২০২৩ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এ খেলাপি মোট ১৬ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের ৯ শতাংশ।

গত বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ৯৩ শতাংশ ছিল মাত্র ১১টি ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ১৪টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

ইতিমধ্যে পদ্মা ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি ব্যাংক সরকারের কাছে অন্য সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আবেদন করেছে।

যদি একটি দুর্বল ব্যাংক একটি সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়, তাহলে সরকার একটি অডিট ফার্মের মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকের ক্ষতির মূল্যায়ন করার পরে সবল ব্যাংকটিকে ক্ষতিপূরণ দেবে। কারণ সবল ব্যাংককে এই মন্দ সম্পদের বিপরীতে আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

‘এমন পরিস্থিতিতে দুর্বল ব্যাংকের মালিকানা থাকবে না। সম্পদ গ্রহণের ফলে যে ক্ষতি হবে, তা তাদের পেইড-আপ মূলধন থেকে বাদ যাবে। এরপরও যদি কিছু থেকে যায়, তবেই দুর্বল ব্যাংকের পরিচালকেরা সমতুল্য শেয়ার ধারণ করবেন,’ তিনি ব্যাখ্যা করেন।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আন্তর্জাতিক রীতি হচ্ছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে দেয়। যদি একটি সবল ব্যাংক অন্য একটি সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায়, তাও হতে পারে।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হয় ২০২৬ সাল থেকে একীভূতকরণ কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এরকম কোনও রেগুলেশন এখনো করা হয়নি। তবে মনে হচ্ছে এটি হবে।

তবে দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার ক্ষেত্রে চাকরি চ্যুতিকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

এবিষয়ে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘একীভূত করা হলে অনেক মানুষ তাদের চাকরি হারাবে এবং তখন এটি একটি মানবিক ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।’

তিনি আরো বলেন, মার্জ করাই বরং ভালো কারণ কোন ব্যাংক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে তা দেশের জন্য ভালো উদাহরণ তৈরি করে না।

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়