গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা না থাকলে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়: দেবপ্রিয়
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক: গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা না থাকলে বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। দারিদ্র্য কমলেও বৈষম্য বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। আজ বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ অসুবিধাগ্রস্ত মানুষেরা যা পেল’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনের বছর উপলক্ষে যে জনতুষ্টিমূলক বাজেট দেওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। নির্বাচনী বাজেট বলা হলেও এটি নির্বাচনী বাজেট নয়। আমি বলব এখানে পরিসংখ্যান নিয়ে খেলা হয়েছে। আমি ছলনা বললাম না। ভর্তুকি, কর রেয়াত সব একসঙ্গে করে ফেলা হয়েছে, যাতে অঙ্কটা বড় দেখায়।
তিনি বলেন, প্রত্যেক বাজেটে আমরা গৎবাঁধা সমালোচনা করি। কিন্তু, আপনি একই রোগের জন্য ডাক্তারকে তো ভিন্ন ওষুধ দিতে বলতে পারবেন না। আমাদের সমস্যা তো একই। ২০০৬ সালে বাজেট প্রক্রিয়ায় ১০০টি দেশের মধ্যে আমরা ৩৮তম ছিলাম। আর এখন যদি দেখেন, আমরা ৯৫ নম্বরে চলে এসেছি। এই র্যাংকিং নির্ধারণ করা হয় বাজেট প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সঠিক সময়ে বাজেটের অর্থ পাওয়া গেল কি না, দলিল আছে কি না, জনগণের অংশগ্রহণ আছে কি না ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, যারা দাবি করেন, রাজনৈতিক কল্পকথা হিসেবে, আমরা যে বাজেট দিই, তা আমরা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করি, তথ্য-উপাত্ত তো তা সমর্থন করে না। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বড় ফারাক থেকে যাচ্ছে। যেটুকু আমাদের উন্নতি হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, তাও তুলনীয় দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে নিতান্তই কম।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্য হার কমছে, কিন্তু বৈষম্য বাড়ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ আগামী দিনে এগিয়ে যেতে চায় কি না, এতে আমাদের প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। ২০২২ সালে সম্পদ নিয়ে যে জরিপ হয়েছে, তাতে বৈষম্যের ফল কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি। গ্রাম থেকে খাদ্য, নিরাপত্তা, উন্নয়নের জন্য মানুষ শহরে আসছে। এটি কি টেকসই উন্নয়ন হবে কি না, সেই প্রশ্ন আমাদের থাকবে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে বড় বাজেটে ১৪৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৭তম। বড় বাজেটের মধ্যে সরকার খরচ করে ৩২ দশমিক ২ শতাংশ। আর বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করে ১৫ বা ১৬ শতাংশ। ২০২২ সালে ১৫ দশমিক ০২ শতাংশ জিডিপি করার কথা থাকলেও হয়েছে ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। এই যে বাকি ২ শতাংশ, তা কে দেবে?
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে কর আহরণের যে গতি ছিল, তা পড়ে গেছে। একইভাবে ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর আবারও একইভাবে কমে গেছে। এটা আমরা বলি, গণতান্ত্রিক জবাবদিহির ঘাটতি হলে পরে সরকারের কর আহরণ, উন্নয়ন ব্যয় উভয়েই এর মাধ্যমে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে কর আহরণের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ কর হলো পরোক্ষ কর। এখানে নিম্নবিত্তরা যা কর দেয়, উচ্চবিত্তরাও একই হারে কর দেয়। তাহলে প্রত্যক্ষ কর কি বাড়ল? একই রকম ভ্যাটের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশে এক তৃতীয়াংশ মানুষ ভ্যাট দিচ্ছে। এটি কোনোভাবেই আপনি আয়করের তুলনায় কমাতে পারলেন না। এটিকে মৌলিক বৈষম্যের একটি বড় অংশ হিসেবে দেখছি। এখনো উন্নয়ন কাজের ৪০ শতাংশ বিদেশি সাহায্যে হয়। একদিকে বলা হচ্ছে বিদেশি সাহায্য দরকার নেই, অন্যদিকে আমরা দেখি অনেক উচ্চমূল্যে আমরা বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছি।
সিপিডির এই ফেলো বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিবিএস এক ধরনের কথা বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয় আরেক পরিসংখ্যান দিচ্ছে। তাহলে কি ডান হাত-বাম হাত একসঙ্গে কাজ করছে না? এ রকম হলে কিন্তু বাজার বেত্তমিজি করবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে গত বছর ২০ শতাংশ আপনি প্রাক্কলন করলেন, অথচ বাস্তবায়ন হলো ৭ দশমিক ১ শতাংশ। এ বছর আবার আপনি ১২ শতাংশ দিলেন। ডলার রেট আপনি প্রাক্কলন করছেন ১০৪ টাকা। অথচ এখনই বাজারে এটি ১০৮ টাকা হয়ে গেছে।
জলবায়ু ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, অন্য সব মন্ত্রণালয়ের মতো জ্বালানি ও জলবায়ু নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাস্তবায়নের ফারাক থেকে যায়। আমরা বাজেট বিশ্লেষণের সময় বলেছি, বাজেট এমন এক সময়ে দেওয়া হয়েছে, যখন আমরা আইএমএফের ঋণের আওতায় রয়েছি। সেই শর্ত অনুযায়ী, ১১টি খাতে সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে জলবায়ু খাতে সংস্কারের একটি শর্তও রয়েছে। কিন্তু, বাজেটে আমরা সেটির প্রতিফলন দেখতে পাইনি।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে ড. দিবালোক সিংহ স্বাস্থ্য, সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল হক সামাজিক সুরক্ষা খাত নিয়ে আলোচনা করেন। আর ব্যক্তি খাতে বাজেটের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি ড. আসিফ ইব্রাহিম।