Notice: Undefined index: HTTP_REFERER in /mnt/volume_sgp1_04/busine23n9s5der/public_html/common/config.php on line 2

Notice: Undefined index: HTTP_ACCEPT_LANGUAGE in /mnt/volume_sgp1_04/busine23n9s5der/public_html/common/config.php on line 14
উচ্চব্যয়ে ভোলায় কাজ শুরু করেছে গ্যাজপ্রম, টবগী সাইট হস্তান্তর

শুক্রবার

১১ জুলাই ২০২৫


২৭ আষাঢ় ১৪৩২,

১৫ মুহররম ১৪৪৭

উচ্চব্যয়ে ভোলায় কাজ শুরু করেছে গ্যাজপ্রম, টবগী সাইট হস্তান্তর

হাসান আজাদ || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৫:৩৩, ১৩ মে ২০২২   আপডেট: ১৬:১৬, ১৩ মে ২০২২
উচ্চব্যয়ে ভোলায় কাজ শুরু করেছে গ্যাজপ্রম, টবগী সাইট হস্তান্তর

গ্রাফিক্স:বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (১৩ মে): দেশের দ্বীপ জেলা ভোলায় উচ্চব্যয়ে গ্যাস কূপ খননের কাজ শুরু করেছে রাশিয়ান বহুজাতিক কোম্পানি গ্যাজপ্রম। এরই মধ্যে এই ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের টবগী-১ অনুসন্ধান কূপ খননের জন্য প্রকল্প সাইট কোম্পানিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।

গ্যাজপ্রম ভোলায় মোট দুটি অনুসন্ধান কূপ ও একটি উন্নয়ন কূপ খনন করবে। এগুলো হল, শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের অনুসন্ধান কূপ টবগী-১ এবং ভোলা নর্থের অনুসন্ধান কূপ ইলিশা-১ ও উন্নয়ন কূপ ভোলা নর্থ-২।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ৫ মার্চ ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের টবগী-১ অনুসন্ধান কূপ খননের জন্য প্রকল্প সাইট গ্যাজপ্রমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কূপ খননের স্থান সুনির্দিষ্ট করতে বাপেক্স থেকে গ্যাজপ্রমকে ভূ-তাত্ত্বিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি টবগী-১ অনুসন্ধান কূপ খননের স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এখন কূপ খননের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, গত মাসে প্রেট্রোবাংলা গ্যাজপ্রমের সঙ্গে একটি কৌশলগত চুক্তি (স্ট্যাটেজিক এগ্রিমেন্ট) করে। পাশাপাশি ভোলার তিনটি কূপ খননে বাপেক্সের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে গ্যাজপ্রম।

কূপ খননে বাপেক্স থেকে বেশি ব্যয় করছে গ্যাজপ্রম: দ্বিগুণেরও বেশি ব্যয়ে বাপেক্সের তিনটি গ্যাসকূপ খননের ঠিকাদারি পেয়েছে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম। বাপেক্সের প্রতিটি কূপ খনন করতে যেখানে সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ৮৫ কোটি টাকা, সেখানে গ্যাজপ্রমকে দেওয়া হবে ২ কোটি ১২ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১৮০ কোটি ২০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসেবে)।

এই হিসেবে তিনটি কূপ খনন করতে যেখানে বাপেক্সের ব্যয় হতো ২৪০ কোটি টাকা, সেখানে গ্যাজপ্রমকে দেয়া হবে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, বা ৫৪০ কোটি টাকা। কোন ধরনের টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় এই কাজ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গ্যাজপ্রম এই তিনটি কূপ খননের জন্য ৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দর প্রস্তাব করে। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করার জন্য একটি কারিগরি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এই উপ-কমিটি কয়েক দফা আলাপ-আলোচনা ও দর কষাকষি শেষে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার দর চূড়ান্ত করে তা প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির কাছে উপস্থাপন করে। গত বছরের ২৭ আগস্ট জ্বালানি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পিপিসির সভায় এই দাম সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়।

ওই সূত্র আরও জানায়, এই কূপ তিনটি খননে অস্বাভাবিক ব্যয়ের যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে যে ভোলাক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ (রিজার্ভার প্রেসার) বেশি, ৪৫০০ থেকে ৫০০০ পিএসআই থাকায় সেখানে কূপ খনন করা ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া, এই কাজের জন্য গ্যাজপ্রমকে ড্রিলিং কন্ট্রাক্টরসহ ৬টি ইঞ্জিনিয়ারিং সেবা (ডিএসটি, সিমেন্টিং, মাড লগিং, ওয়ারলাইন লগিং, টেস্টিং অ্যান্ড কমপ্লিশন) বিভিন্ন স্থান হতে সংগ্রহ করতে হবে। কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতির কারণে সমুদ্র ও আকাশপথে চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় মালামাল ও জনবল আনা-নেওয়ার ব্যয়ও বাড়বে।

বাপেক্সের কর্মকর্তারা বলেন, কূপ তিনটি বাপেক্স খনন করলেও ওই ইঞ্জিনিয়ারিং সেবাগুলো গ্যাজপ্রমের মতো একই প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করতে হয়। আর এই কাজের জন্য বিদেশ থেকে হাজার হাজার টন মালামাল আনা কিংবা শত শত লোক আনা-নেওয়ারও কোনো বিষয় নেই যাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় বেড়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় গ্যাসসমৃদ্ধ এলাকা দ্বীপজেলা ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২০০৯ সালের ১১ গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে ভোলায় দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (২২৫ ও ৩৫ মেগাওয়াট) গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকদেরও গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এই গ্যাস ক্ষেত্রের চারটি কূপ থেকে দৈনিক ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ভোলা নর্থ নামে এখানে আরেকটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিক রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স। দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্স সাশ্রয়ী ও সফল বলে স্বীকৃত। এরপরও বাপেক্সের ভোলার দুই গ্যাসক্ষেত্রের তিনটি কূপ খননের কাজ বেশি ব্যয়ে দেওয়া হচ্ছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমকে।

জানা গেছে, গ্যাজপ্রমকে এখন যে তিনটি কূপ খননের কাজ দেওয়া হচ্ছে সেগুলোও বাপেক্সের ভূ-তাত্ত্বিক কারিগরি নির্দেশনা (জিওলজিক্যাল টেকনিক্যাল অর্ডার বা জিটিও) অনুসরণ করে দেওয়া। অর্থাৎ, বাপেক্সের নির্ধারণ করে দেওয়া স্থানেই (লোকেশন) গ্যাজপ্রম খনন করবে।

এ ছাড়া, বাপেক্স ওই সব এলাকায় দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূ-কম্পন জরিপ করায় কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্যই তাদের কাছে রয়েছে। কূপ খননের জন্য রিগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবলও বাপেক্সের আছে। এর একেকটি কূপ খনন করতে বাপেক্সের ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ১ কোটি ডলার বা ৮৫ কোটি টাকা। (রিগ ভাড়া, জনবলের পিছনে ব্যয়, থার্ড পার্টির সেবাগুলোর ব্যয় প্রভৃতিসহ)।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্বের জ্বালানি খাতে গ্যাজপ্রমের অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও এ কোম্পানি বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করে। এতে মানসম্মত কাজ হয় না বলে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

গত ১০ বছরে গ্যাজপ্রম বাংলাদেশে অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মিলিয়ে ১৭টি কূপ খনন করেছে। এর মধ্যে ভোলার দু’টি কূপ রয়েছে। কূপপ্রতি রাশিয়ার কোম্পানিটি গড়ে ১৫২ কোটি টাকা করে নিয়েছে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে।

ভোলার গ্যাসক্ষেত্র বেঙ্গল বেসিনভুক্ত। সেখানে যে ভূ-কাঠামোয় গ্যাস পাওয়া গেছে, তার ভূ-তাত্ত্বিক নাম ‘স্টেটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার’। দেশের অন্যসব গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে সুরমা বেসিনে। এই বেসিনের ভূ-তাত্ত্বিক নাম ‘অ্যান্টি ক্লেইন স্ট্রাকচার’। ভোলার দুই গ্যাসক্ষেত্রে দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস রয়েছে। গ্যাসের মজুদ আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়