আইসিটি, জ্বালানি ও নীল অর্থনীতিতে মার্কিন বিনিয়োগ আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ডেস্ক রিপোর্ট || বিজনেস ইনসাইডার

ভার্চুয়াল ব্যবসায়িক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি
ঢাকা (২২ সেপ্টেম্বর): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইসিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ, নীল অর্থনীতি, পর্যটন ও হাইটেক পার্কের মতো বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিশীল খাতে মার্কিন বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার নিউ ইয়র্কের লোট নিউইয়র্ক প্যালেস থেকে ভার্চুয়ালি এক ব্যবসায়িক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান। খবর বাসস।
বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আইসিটি, নবায়নযোগ্য জালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, নীল অর্থনীতি, পর্যটন, জ্ঞানভিত্তিক হাই-টেক শিল্পসহ অন্যান্য লাভজনক খাতে মার্কিন বিনিয়োগের আমন্ত্রন জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে আরো উচ্চ পরিসরে উন্নীত করতে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে। শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং মার্কিন বাজারে অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার হতে পারে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বৈঠকে মূল-প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি সঠিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ)-র বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানী, ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের কারণে অবশ্যই বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি শুধুমাত্র আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশের ২৮টি হাই-টেক পার্কে মার্কিন বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অব্যহতভাবে আমাদের শারীরিক, আইনী ও আর্থিক অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাচ্ছি এবং এছাড়াও পদ্মা সেতু ও ঢাকা মেট্রো-রেলের মতো বিভিন্ন সড়ক ও রেল যোগাযোগও বৃদ্ধি করছি।’
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেরই সবচেয়ে মুক্ত বিনিয়োগ-নীতি রয়েছে, যার ফলে বিদেশী বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ পার্লামেন্টের আইন ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি দ্বারা সুরক্ষিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানী খাত সহযোগিতা ও বিনিয়োগের স্বীকৃতি দিচ্ছে- এই সাহায্যের ফলেই আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বক্ষমতা এখন ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এখন আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে মার্কিন বিনিয়োগ কামনা করছি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত-বর্ধিষ্ণু আইসিটি খাত এখন ৬০টি দেশে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের আইসিটি পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের আইসিটি শিল্প ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৬ লক্ষাধিক ফ্রি-ল্যান্স আইটি প্রফেশনালদের কারণে বাংলাদেশ এখন আইসিটি খাতে বিনিয়োগের জন্য আদর্শ স্থান।
শেখ হাসিনা বলেন, বিনিয়োগকারীরা যেন প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতেই দক্ষ জন-সম্পদ পেতে পারেন, সেজন্য আমরা জনশক্তিকে দক্ষ করার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক উত্তরণের ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি। আমাদের দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নীতি গ্রহণের জন্য বিজনেস কাউন্সিল মার্কিন সরকারকে রাজি করাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই কাউন্সিলকে আমাদের জনগণের জীবন-মান উন্নয়নের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছি। এডিবি আউটলুক ২০১৯ এর বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দ্রুততম অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এডিবি এই সাফল্যের জন্য বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সুশাসন, সরকারের স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শক্তিশালী ম্যাক্রো-ইকোনোমিক নীতি ও সঠিক উন্নয়ন প্রাধান্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘দ্রুত নগরায়ন, বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি, দারিদ্রতার সীমা থেকে উত্তরণ করে ব্যাপক মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে প্রবেশ, বিশাল আঞ্চলিক বাজারগুলোর সাথে ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি বাংলাদেশকে বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশকে এলডিসি স্টেটাস থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত জাতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের অনেক চলমান প্রকল্প রয়েছে, বিশেষত ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’।
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে ‘বাংলাদেশ ফরওয়ার্ড: দ্য ফ্রন্টিয়ার ফর গ্রোথ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল গোলটেবিল আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি নিশা বিসওয়াল, গোলটেবিল পরিচালনা করেন এবং উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দও এতে অংশ নেন।