যৌক্তিক দাম নির্ধারণ না হলে এলপিজি ব্যবসা করা যাবে না : লোয়াব
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

সোমবার বিয়াম অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এলপিজির দাম নিয়ে গণশুনানী হয়, বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ
ঢাকা (১৩ সেপ্টেম্বর): যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা না হলে এলপিজির ব্যবসা করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন এলপিজি অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব) এর সদস্য বিভিন্ন কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, এখন যে কেজি প্রতি এক দশমিক ৭ শতাংশ লভ্যাংশ রেখেছে, এই লাভে ব্যবসা করা যাবে না। কারণ এলপিজিতে কোম্পানীগুলোকে অনেক ভর্তুকি দিতে হয়।
সোমবার রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে বিয়াম ফাউন্ডেশনের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত এলপিজির দর নির্ধারণে আয়োজিত গণশুনানিতে এলপিজি বিভিন্ন কোম্পানীর প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।
এখানে উল্লেখ্য, এর আগে দু’বার তারিখ ঘোষণা করা হলেও একবার লকডাউন ও আরেকবার হাইকোর্টের আদেশের কারণে স্থগিত হয়ে যায় গণশুনানি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমানে এলপিজি খাতে কোম্পানীগুলো ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। আর সরাসরি ১৩ লাখ শ্রমিক এই খাতের সঙ্গে জড়িত। এই অবস্থায় এই খাতকে বাঁচাতে হলে এলপিজির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। এসময় ব্যবসায়ীরার অভিযোগ করে বলেন, বিইআরসি মাঝারি ধরনের অপারেটরের (৮ হাজার মেট্রিক টন) আমদানি এবং বাজারজাতকরণ ধরে দাম নির্ধারণ করেছে। এতে করে এক থেকে দেড় হাজার টন এলপিজি আমদানিকারক কোম্পানিগুলো বেশি সংকটে পড়েছে। যা এখাতের ব্যবসার জন্য অশনি সংকেত।
শুনানিতে বেসরকারি এলপিজি কোম্পানীগুলোর সংগঠন লোয়াবের সদস্য বেক্সিমকোর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মুনতাসির আলম, বসুন্ধরা গ্রুপের সেলস হেড জাকারিয়া জালাল, ওমেরার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শামসুল হক আহমেদ, পেট্রোম্যাক্সের পরিচালক নাফিস কামাল, টোটাল গ্যাসের জেনারেল ম্যানেজার মজিবুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
গণশুনানিতে কোম্পানীর প্রতিনিধিরা বলেন, বিইআরসি এলপিজির যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাতে সৌদি সিপি (কন্ট্রাক প্রাইজ) মূল্যকে ভিত্তি ধরা হয়েছে। এলপিজি যেিেহতু আমদানি করা পণ্য, সেক্ষেত্রে এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।
তবে এলপিজি আমদানির পর পণ্যটি পরিবহন, বোতলজাতকরণ, মজুতকরণ, পরিচালন ব্যয়গুলো জন্য যে চার্জ কমিশন নির্ধারণ করেছে, তা অনেক কম। এর ফলে এখাতের ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ছেন। বড় কোম্পানিগুলো লোকসান করলেও ছোট কোম্পানিগুলো প্রায় বন্ধের পথে। বিইআরসি যে লাভ ধরে দিয়েছে, এই লাভে এই খাতে ব্যবসা করতে কেউ বিনিয়োগ করবে না।
ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন দেশে ছোট বড় মিলিয়ে ২৭টি কোম্পানী ব্যবসা করছে। প্রতিটি কোম্পানীরই বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর তা না হলে এসব কোম্পানী দীর্ঘ মেয়াদে টিকবে না। কারণ এই খাতে অনেক বিনিয়োগ দরকার। তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে এলপিজির দাম সর্বনিন্ম।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা প্রস্তাবণায় বলা হয়, এলপিজি মজুতকরণ ও বোতলজাতকরণ চার্জের ক্ষেত্রে কমিশন প্রতি কেজি ১১ টাকা ৯৩ টাকা হারে ১২ কেজির জন্য চার্জ মাত্র ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করেছে। যা অযৌক্তিক। কোনও অপারেটর যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা বিবেচনায় রেখে যে কোম্পানির চার্জ সর্বোচ্চ হবে তা সবার জন্য প্রযোজ্য করাটা যুক্তসঙ্গত।
একইভাবে ডিস্ট্রিবিউটরের ব্যয় ধরা হয়েছে কেজি প্রতি ২ টাকা হারে ১২ কেজির জন্য ২৪ টাকা এবং খুচরা বিক্রেতার ব্যয় ধরা হয়েছে কেজি প্রতি ২ টাকা ২৫ পয়সা হারে ২৭ টাকা। যা প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে অনেক কম। প্রকৃতপক্ষে এই ব্যয় যথাক্রমে ৫০+৮০= ১৩০ টাকা হওয়া আবশ্যক।
একইভাবে কোম্পানীগুলোর নিট মুনাফা, ঋণের সুদ, বিক্রয় ও প্রশাসনিক ব্যয়, সিলিন্ডারের আয়ুষ্কাল, বিক্রির পরিমাণ নিয়ে কমিশনের নির্ধারিত চার্জের সঙ্গে দ্বিমত কওে ব্যবসায়রিা বলেন, এসব চার্জ পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
এছাড়া গাড়িতে ব্যবহ্নত এলপিজি বা অটোগ্যাসের দাম প্রতিমানে নির্ধারণ হওয়ায় এই ক্রেতারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তারা অটোগ্যাস ব্যবহার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কারণ গাড়িতে ব্যবহ্নত অন্যান্য জ্বালানি যেমন সিএনজি, ডিজেল, পেট্রোলের দাম বাড়ে না। এজন্য অটোগ্যাসের দাম বছরে একবার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমানে সারাদেশে ৪’শ অটোগ্যাস স্টেশন আছে। প্রতিমাসে অটোগ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হলে আমাদের ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য অটোগ্যাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হোক। এসময় তারা প্রস্তাব করেন সিপি ৫শ হলে কেজি প্রতি এলপিজির দাম ৪৫ টাকা, সিপি ৫০১ থেকে ৬০০ হলে কেজি প্রতি ৫০ টাকা এবং সিপি ৬০১ থেকে ৭০০ হলে কেজি প্রতি ৫৫ টাকার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়।