হু হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম
হাসিবুল হাসান শান্ত || বিজনেস ইনসাইডার

ইনফোগ্রাফ বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ
ঢাকা (০৯ সেপ্টেম্বর): বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে অধিকাংশেরই আয় কমেছে। অনেকে হারিয়েছেন চাকরি। এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীর পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীর পণ্য চাল, ডাল, তেল, ডিম, দুধ, ও মুরগির দাম কয়েকদফা বেড়েছে। এখনও রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ছে। এই দামবৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্তরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এই দামবৃদ্ধির চিত্র দেখা গেছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কনজ্যুর্মাস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখন নিত্য পণ্যের দাম বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। এর ফলে দরিদ্র লোকের সংখ্যা বাড়বে। এমনিতেই করোনা মহামারীর সময় অনেক মানুষের আয় কমেছে। ’
তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার প্রণোদনা দিয়েছে। উচ্চবিত্ত ও ব্যবসায়ীদের প্রণোদনায় সরকার সফল হলেও , ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের জন্য দেওয়া প্রণোদনায় সফলতা পায়নি। এজন্য আমরা বলছি, করোনাত্তোর সময়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে হবে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার দরিদ্রদেরও উপকার করার চেষ্টা করেছে, এটা একটা ভালো উদ্যোগ। ’
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারীর কারণে আর্ন্তজাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশ্বের অনেক জায়গায় অনেক কৃষি পণ্যের উৎপাদন বন্ধ ছিল। আবার উৎপাদন হলেও শ্রমিকের অভাবে উৎপাদিত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করতে পারেনি। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। যার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। ’
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি ছোট দানার মশুর ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। গত সপ্তাহে ভারতের বড় দানার মশুর ডাল কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চলতি বছরে তিন ধাপে বেড়েছে তেলের দাম। বর্তমানে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৩ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো ঘোষণা দিয়েছে আরও প্রতি লিটারে ১০ টাকা বাড়বে।
কাওরান বাজারের চাঁদপুর ট্রেডার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি বাবলু হোসেন এই প্রতিবেদকে জানান, তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এখন আমরা যে তেল ১৫৩ টাকায় বিক্রি করছি তা ১৬৩ টাকায় বিক্রি করতে হবে বলে কোম্পানিগুলো ঘোষণা দিয়েছে।
তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতে তারা তেলের বেশি মজুদ করছেন যেন আগের দামেই ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করতে পারেন। কারণ তেলের দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলে ক্রেতারা কি করবে। এছাড়া খোলা তেলের দামও কেজিতে ৭ টাকা বেড়েছে।
বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৩ টাকা। আর কোম্পানিভেদে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়। খোলা সয়াবিন বা পামওয়েল তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়।
দেশে লকডাউন তুলে দেওয়ায় সবকিছুই এখন পুরোদমে চলছে। খাবার হোটেল, রেস্তোরাগুলোতে মুরগির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন,প্রতিদনই বেশি দাম দিয়ে মুরগি আনতে হচ্ছে। আর চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় মুরগির দাম বাড়ছে। মূল্য বাড়ার প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে, তাই দামও বেড়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালী মুরগি কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর লেয়ার মুরগি ২১০ এবং ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মুরগির পাশাপাশি ডিমেরও দাম বেড়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। যা গত দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। ফার্মের ডিমের ডজন প্রতি দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
এদিকে, গুড়া দুধ ও কনডেন্স মিল্কের দামও বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। এক মাসের মধ্যে গুড়া দুধের কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। আর কনডেন্স মিল্কের প্রতি কৌটায় ১০ টাকা বেড়েছে। বাজারে ডিপ্লোমা দুধ প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৬৫০ টাকা, মার্কস প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা এবং ড্যানিশ কনডেন্স মিল্কের কৌটায় ১০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কনডেন্স মিল্কের এক কার্টনে দাম বেড়েছে প্রায় ৪০০ টাকা।
করোনাকালীন সময়ে সবাইকেও বাড়তি সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজে ব্যবহ্নত পণ্য টিস্যুর দামও গত দুই মাসে বেড়ে গিয়েছে। টয়লেট টিস্যুতে ডজনে ২০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকা, ন্যাপকিন টিস্যু প্রতি প্যাকেটে ১৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা, বান্ডেল টিস্যুতে ১০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা, প্রতি টয়লেট টিস্যুতে ৩ টাকা বেড়ে ২০ টাকা এবং প্রতি বক্স ফেশিয়াল টিস্যুতে ৫ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মোঃ ফারুক হোসেন জানান, গত দুই মাস ধরে টিস্যুর দাম বাড়তি। শুরুতে একটি কোম্পানি দাম বাড়িয়ে দিলে অন্যরাও বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে, চালের দামও অল্পস্বল্প বাড়ছে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারত থেকে চাল আমদানি করা হয়। এসময় দাম কমলেও ভারত থেকে আসা চালের মান খারাপ হওয়ায় পুনরায় চালের দাম বাড়তে থাকে।
মিরপুর-১ তাইয়্যেবা রাইস এজেন্সির প্রধান আতিকুল ইসলাম জানান, চালের দাম কেজিতে ১ থেকে ২ টা বেড়েছে তবে এর প্রভাব তেমন একটা পড়েনি। কিন্তু প্রতি বস্তায় প্রায় সব ধরনের চালে ৫০ টাকা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বাজারে চালের সরবরাহ ভালো আছে কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট চাল স্টক করে দাম বাড়িয়েছে। গতমাসে ১৫ দিনের মাথায় সবধরনের চালের ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে।
তথ্যানুযায়ী, পাইজাম ৫০ কেজি চালের বস্তা ২৩৫০ টাকা, আটাশ ২৩৫০ টাকা, মিনিকেট ৩০০০ টাকা। খুচরা বাজারে পাইজাম কেজি প্রতি ৫০ টাকা, আটাশ ৫৫ টাকা এবং মিনিকেট ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাবু বাজার জুয়েল রাইস এজেন্সির মালিক রাজু আহসান এই বিষয়ে জানান, চালের বাজার ঠিকই আছে কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।