নিজেদের প্রতিবেদন অস্বীকার করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকের অবস্থা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ রংয়ের তালিকা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গণমাধ্যমে সেই তালিকা প্রকাশের পরে এখন অস্বীকার করা হচ্ছে। কিন্তু, এরইমধ্যে আমনতকারীসহ পুরো আর্থিক খাতে বিভ্রান্তি আর অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সবল ব্যাংকের সাথে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
বাংলাদেশের রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালে লাল, হলুদ আর সবুজ রং এর নেই, তাই হয়তো দেশের ব্যাংকের মান নির্ধারণ করতে সেই রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও গণমাধ্যমে সংবাদের পর নিজেদের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, কিছু ব্যাংক রেড জোনে, কিছু ইয়েলো ও গ্রিন জোনে, এই তালিকা আমাদের প্রকাশিত বা নিশ্চিত কোনো পদ্ধতি নয়।
যে তথ্যের ওপর ব্যাংকগুলোর লাল, সবুজ আর হলুদ বাতি জ্বালিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তার সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এই প্রতিবেদনের কারণে ব্যাংকিংখাতে আস্থাহীনতা ও বিভ্রান্তি বাড়িয়েছে বলেও জানান বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, তাহলে এটা কেন করা হলো? যে তথ্যের ভিত্তিতে করা হলো, সে তথ্যগুলো কী সঠিক আছে? সেই প্রশ্ন চলে আসে, কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই এটাকে আর পাত্তা দিচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যেগুলো সবাই জানে, যেসব দুর্বল প্রতিষ্ঠান সেগুলোকে রেড জোনে রাখা হয়নি। এটা পুরো সিস্টেমে একটা আস্থার সংকট তৈরি করার মতো।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, এমন কি হতে পারে, যে ব্যাংকগুলো ভালো ছিলো তারাও মার্জারের পর দুর্বল হয়ে পড়বে। কারণ খারাপ ব্যাংকের সাথে যদি মার্জার হয়ে যায় তাহলে এটার প্রভাব তাদের ওপরও পড়বে। এ সম্বন্ধে যথাযথ বিশ্লেষণ করা হয়েছে কিনা জানা নেই। আদৌই এটি বাস্তবসম্মত হবে কিনা, কারণ যাদেরকে মার্জার করতে বলা হচ্ছে বা রেড জোনে বলা হচ্ছে, যেগুলো প্রাইভেট সেক্টরে আছে। তারা অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণের নামে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ ব্যাংকিংখাতের রোগ সারানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের। তাই চাইলেই সুবিধাভোগী উদ্যোক্তা পরিচালকরা দুর্বল ব্যাংকের সাথে সবল ব্যাংক একীভূত করবে না বলেও মত তাদের।
সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, যারা ব্যাংক ঋণ শোধ দিচ্ছে না, যারা ডিফল্টার তাদের কাছ থেকে কীভাবে টাকা আদায় করা যায় সেটা অগ্রাধিকারের বিষয়। এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক পারবে কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, লোন সাইজ বেড়ে গেলে অন্তত বাংলাদেশ ব্যাংককে অন্তত তথ্য দিতে হবে বা অনুমতি নিতে হবে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব তো বাংলাদেশ ব্যাংকের। অনেক সময় ওয়েভার দেয়া হয়, এটা অভ্যাসকে খারাপ করে দেয়।
বাংলাদেশের ব্যাংকের এ প্রতিবেদন ডেপুটি গভর্নরসহ নির্বাহী পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর রয়েছে, তাই প্রতিবেদনটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই বলেও জানান তারা।