মানিকগঞ্জে করোনায় ছাত্রীর মৃত্যু, গোপালগঞ্জ ও চাঁদপুরে আক্রান্ত ৫
ডেস্ক রিপোর্ট || বিজনেস ইনসাইডার

ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২৩ সেপ্টেম্বর): স্কুলে যাওয়ার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানিকগঞ্জ এক স্কুলছাত্রী মারা গেছে। এদিকে গোপালগঞ্জে দুই স্কুলছাত্রী এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় তিন কলেজ ছাত্রীর করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুবর্ণা ইসলাম রোদেলা নামে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার আনার পথে মৃত্যুবরণকারী রোদেলা মানিকগঞ্জ এসকে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। রোদেলা মানিকগঞ্জের বেউথার বশির উদ্দিন মোল্লা ও শামসুন্নাহার জ্যোৎস্নার মেয়ে।
বশির উদ্দিনের স্বজনরা জানিয়েছেন, গত ৩ দিন ধরে রোদেলা শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে ভুগছিল। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধও চলছিল। বুধবার দুপুরে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, এক পর্যায়ে রোদেলা অচেতন হয়ে যায়। এরপর তাকে দ্রুত মুন্নু জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষায় তার করোনা ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। ঢাকা নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় গাবতলী পৌঁছার পর সে অ্যাম্বুলেন্সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেছেন, মেয়েটি গত ১৫ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ স্কুলে গিয়েছিল। তখন তার কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না। গত ৩ দিন ধরে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এর আগে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হওয়ায় ওই শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে তার ৫৮ জন সহপাঠীকে করোনা পরীক্ষা করোনো হয়। তবে তাদের কারও দেহে করোনা শনাক্ত হয়নি। আক্রান্ত শিক্ষার্থী সুস্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ওই শ্রেণির পাঠদান শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরের কচুয়ার হাসিমপুরে ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান চিকিৎসক ও উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. সালেহউদ্দীন আহমেদ জানান, ২০ সেপ্টেম্বর ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের ৫০ শিক্ষার্থীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বুধবার তিন জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
এ ব্যাপারে ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম জানান, বুধবার তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্তের রিপোর্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিভাবকদের কলেজে ডেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিন শিক্ষার্থীকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দুই স্কুল ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এরপর স্থানীয় প্রশাসন স্কুলের ওই শ্রেণির পাঠদান ১৪ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে ওই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
বীণাপানি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ১৪ দিনের জন্য শ্রেণির পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন সুজাদ আহমেদ বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, বুধবার বীণাপানি স্কুলের ছাত্রীর করোনা পজেটিভ এসেছে। এরপর তাকে বাড়িতে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত দুই ছাত্রীই এখন সুস্থ আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
করোনায় আক্রান্ত হওয়া তিনা খানম নামের তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রী উপজেলার চার নম্বর ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সে গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার দিন স্কুলে আসে এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাস করে। পরে ঠাণ্ডা জ্বরে আক্রান্ত হলে ১৬ সেপ্টেম্বর ওই ছাত্রী ও তার মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ১৭ সেপ্টেম্বর তাদের দু’জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
কোটালীপাড়া উপজেলার সহকারি শিক্ষা অফিসার শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে আমরা ওই বিদ্যালয়টির তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান ১৪ দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়েই স্বাস্থ্য-বিধি মেনে প্রতিদিন পাঠদান চলছে। আমরা সব বিদ্যালয় প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। কোনো শিক্ষার্থীর মাঝে করোনা’র উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তার নমুনা পরীক্ষা করা হবে। রিপোর্ট পজিটিভ আসলে আমরা ওই শ্রেণি বা বিদ্যালয় বন্ধ করে দেবো বলে জানান এই কর্মকর্তা।