মঙ্গলবার

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


১ আশ্বিন ১৪৩২,

২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ধানবীজ সংরক্ষণ ও ছড়িয়ে দেওয়ায় বিচিত্রা চিছামের সাফল্য

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ৯ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ০১:২৭, ১০ এপ্রিল ২০২১
ধানবীজ সংরক্ষণ ও ছড়িয়ে দেওয়ায় বিচিত্রা চিছামের সাফল্য

ধানবীজ সংরক্ষণ ও ছড়িয়ে দেওয়া এবং রাসায়নিক মুক্ত সার উদ্ভাবনে কৃতিত্ব অর্জনকারী নারী বিচিত্রা চিছাম

ময়মনসিংহ (০৬ এপ্রিল): বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ধানবীজ সংরক্ষণ ও উৎপাদনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার দারুণ এক কৃতিত্ব অর্জন করেছেন ময়মনসিংহের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী বিচিত্রা চিছাম। কম খরচে বেশি উৎপাদন উপযোগী এ ধানবীজ ইতোমধ্যে কৃষকদের ভেতর আশার সঞ্চার করেছে। এদিকে দারিদ্র্য ক্লিষ্ট বিচিত্র বিছামের পরিবারেও লেগেছে স্বচ্ছলতার ছোঁয়া। 

শুধু তা-ই নয়, রাসায়নিক মুক্ত তিন প্রকারের সার উৎপাদন করে জেলার অন্যতম আলোচিত নারী হিসেবে উঠে এসেছেন তিনি। 

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়নের ছালুয়াতলা গ্রামের এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী উদ্যোক্তা বিচিত্র বিছাম। তিনি কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে আমন-বোরো ধানের বিলুপ্তপ্রায় সাত প্রকারের বীজ ‘বিজিতা’ নামে সংরক্ষণ এবং তিন প্রকারের কেঁচো ও জৈব সার উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন। 

ময়মনসিংহ জেলার শেষপ্রান্তে ছালুয়াতলা একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এই ছালুয়াতলা গ্রামের হুতেন্দ্র চিরানের স্ত্রী বিচিত্রা চিছামের সফলতার পেছনে থাকা অনেক কষ্ট, শ্রম ও আনন্দ ও সুখের গল্প এখন এলাকায় আলোচিত বিষয়।

নারী উদ্যোক্তা বিচিত্রা চিছাম তাঁর সফলতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় আমার বসবাস হওয়ায় এখানে প্রায় সব পরিবারেই দরিদ্রতাকে নিত্য সঙ্গী করে জন্ম নিতে হয়।’

তিনি জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের রীতি অনুযায়ী ১৯৮৬ সালে একই গ্রামের কর্মহীন হুতেন্দ্র চিরানের সাথে বিয়ে হয় তার। স্বামী হুতেন্দ্র চিরানের পরিবারও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় খেয়ে না-খেয়ে কোনো রকমে চলছিল তাদের জীবন। এভাবে দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করে চলতে গিয়ে এক সময় হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু দমে যাননি তিনি, কীভাবে আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায় এমন স্বপ্ন প্রতিনিয়তই দেখতে থাকেন তিনি। এক সময় তার এই সাফল্যের পথের আলোর দিশারী হয়ে আসে ‘কারিতাস’ নামক এনজিওটি।

বিচিত্রা চিছাম জানান, ২০০৯ সালে কারিতাসের উদ্যোগে ‘নিজ বাড়িতে ধানের বীজ ও সার উৎপাদনে পিলিপাইনের মি. ব্রং নামক বিজ্ঞানীর দেওয়া এক মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ নেন। এরপর শুরু হয় তার ধানের বীজ সংরক্ষণ ও নতুন সার উদ্ভাবনের লক্ষ্যে নিজের স্বপ্ন পূরণে গন্তব্যহীন পথচলা। এই কর্দমাক্ত পিচ্ছিল পথে প্রায় একযুগের অধিক সময় ধরে ঘাম ঝরানো চেষ্টার পর তিনি কম খরচে বেশি ধান উৎপাদনে ধানের বীজ সংরক্ষণ ও উৎপাদনে এবং রাসায়নিক মুক্ত সার উদ্ভাবনে সফলতার আলো দেখেন। 

এরপর প্রথমে নিজ বাড়ির আঙিনায় পারিবারিক ছোট জমিতে তার সংরক্ষণ করা উন্নতমানের ধানের বীজ রোপণ করেন। এতে ভালো ফল পান, অধিক ফসল উৎপাদন হয়। পরবর্তীকালে এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এভাবে কৃষকদের মাঝে তা বিক্রির মাধ্যমে তিনি তার দারিদ্র্যকে দূর করে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। সফল ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় আলোচিত হন। শুধু তাই নয়, এখন তিনি তার এক মাত্র মেয়েকে নার্সিং কলেজে লেখাপড়া করাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বিছিত্রা চিছাম সরকারি সহায়তার দাবি করে বলেন, ‘আমার দাবি ময়মনসিংহ-১ (ধাবাউড়া-হালুয়াঘাট) আসনের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য মি. জুয়েল আরেং এবং ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিম মহোদয় যদি চেষ্টা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে সরকারি সহযোগিতা ব্যবস্থা করার করেন তবে তা সকলের জন্য ভালো হয়। এর মাধ্যমে দেশের কৃষকদের মাঝে আমার সাত প্রকারের ‘বিজিতা’ নামের উন্নত ধানবীজ ও তিন প্রকারের কেঁচো ও জৈব সার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এতে দেশে খুব কম খরচে ধান উৎপাদনের মাধ্যমে রাসায়নিক মুক্ত খাদ্যের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব হবে।’  

ধোবাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হাসান এ ব্যাপারে বলেন, ‘বিচিত্রা চিছামের সফলতার কথা শুনে উপজেলা চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিমকে নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে তার উৎপাদিত ধানের বীজ দেখেছি, তাকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করলে আরও উন্নত বীজের আশা করা যায়।’

ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিম বলেন, বিছিত্রা চিছামের সাফল্যের জন্য আমি তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। পাশাপাশি তার উৎপাদিত ধানের বীজ আরও উন্নত করতে তার প্রতি আমার সহযোগিতা সব-সময়ই থাকবে।’

Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়