চলতি বছর রেকর্ড সাড়ে ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক; চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে চলতি বছর রেকর্ড সাড়ে ৫২ শতাংশ ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ। যা গত বছরের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। অভয়াশ্রম পরবর্তী গবেষণায় এমন চিত্র ধরা পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইলিশ গবেষকরা। অভিযানের সঠিক সময় নির্ধারণ আর অনুকূল পরিবেশ পেয়ে ডিম ছাড়ায় এমন রেকর্ড।
জেলে ও ব্যবসায়ীরা আগামী মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ অভিযানের ওপর জোর দিয়েছেন। তারা বলছেন, এই ইলিশের ডিম ও জাটকা রক্ষা করা গেলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, আশ্বিন মাসের অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে মা ইলিশ প্রচুর ডিম পাড়ে। প্রজননের এই প্রধান সময়টাতে পরিভ্রমণ স্বভাবের মাছ ইলিশ সাগর ছেড়ে মোহনা ও নদীর মিঠা পানিতে ছুটে আসে। ইলিশের ডিমের পরিপক্বতা ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে এবং পূর্বের গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিসুর রহমান বলেন, অভয়াশ্রমে এ বছর রেকর্ড সাড়ে ৫২ শতাংশ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। গত বছর যা ছিল ৫২ শতাংশ। কিছু অসাধু জেলে কর্তৃক ইলিশ নিধন সত্ত্বেও প্রচুর পরিমাণে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। জাটকা মৌসুমে সঠিকভাবে সুরক্ষা দিতে পারলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন পৌনে ৬ লক্ষ মেট্রিক টনে পৌঁছাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইলিশ গবেষকদের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে ৪৩.৪৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৪৬.৪৭ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৪৭.৭৫ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪৮.৯২ শতাংশ, ২০২০ সালে ৫১.২ শতাংশ, ২০২১ সালে ৫১.৭ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৫২ শতাংশ ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। আর চলতি বছর ৫২.৫ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। যা গত বছরের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার জেলে আবুল কাশেম ও হাবু ছৈয়াল বলেন, এবার চাঁদপুরের নদীতে অধিকাংশ ইলিশই ডিম ছেড়েছে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকা রক্ষা অভিযান কঠোরভাবে পালন করা গেলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
মৎস্য ব্যবসায়ী মো. সোহেল ও জাহাঙ্গীর বলেন, আগামী মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলবে। এই সময়টিতে নদীতে ইলিশের ডিম সংরক্ষণ ও জাটকা রক্ষা করা গেলে ইলিশ উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিসুর রহমান বলেন, সঠিক সময়ে অভয়াশ্রম পালিত হওয়ায় রেকর্ড পরিমাণে ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ। তবে সারা বছরই কম-বেশি ডিম ছাড়ায় কিছু ইলিশের পেটে এখনো ডিম পাওয়া যাচ্ছে। নদীতে ছাড়া মা ইলিশের এই ডিমের ১০ ভাগ টেকানো গেলেও আগামী মৌসুমে নতুন করে অন্তত ৪০ হাজার কোটি জাটকা জন্ম নেবে বলেও মনে করছেন এই ইলিশ বিজ্ঞানী।
মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩.৮৮ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩.৯৫ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪.৯৭ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫.১৭ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫.৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫.৫ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫.৬৫ লাখ টন এবং গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ৫.৬৬ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, অভয়াশ্রমের সময়টাতে চাঁদপুরের ৪৩ হাজার ৭৭২ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল সহায়তা প্রদান করা হয়। নিষেধাজ্ঞার ২২দিনে মোট ৫৪৬টি অভিযানে ৮৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩৭৪ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। একই সময় ২৪ লাখ ৮৯৫ মিটার কারেন্ট জাল এবং ২ দশমিক ২৯৮ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৮৩২ টাকা।
এই মৎস্য কর্মকর্তা জানান, ইলিশ অভয়াশ্রম কর্মসূচির আওতায় ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষাকল্পে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা রক্ষা অভিযান চলবে। এ লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।