কৃষকদের ভারত বন্ধে জনজীবন ব্যাহত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ভারত বন্ধে পাঞ্জাবে কৃষকদের সড়ক অবরোধ। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২৭ সেপ্টেম্বর): ভারতে তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইনের প্রতিবাদে কৃষকদের ডাকা ‘ভারত বন্ধ’ এ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত পালিত এ অবরোধে কৃষকরা মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি রেললাইনের উপর অবস্থান নিয়েছিল। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার পত্রিকা।
পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় জাতীয় সড়ক, রাজ্য মহাসড়ক, সংযোগ সড়ক এবং রেলপথ অবরুদ্ধ করার ফলে সেখানকার সড়ক ও রেল চলাচল একেবারেই বন্ধ ছিল। পাঞ্জাবের ৩৫০ টিরও বেশি জায়গায় কৃষকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। পাঞ্জাবের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক (এজিডিপি) যেসব স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে, সেসব স্থানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে নির্দেশনা জারি করেছেন। কৃষকদের অবস্থান নেওয়া সব স্থানে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। হরিয়ানার জিন্দ জেলাতেই ২৫ টি স্থানে মহাসড়ক অবরুদ্ধ করা হয়েছিল।
পাঞ্জাবে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস বলেছে যে, তারা বিতর্কিত আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের ভারত বন্ধের আহ্বানের সঙ্গে তারা একমত। এ অবরোধে রাজ্য প্রায় সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছিল। অবরোধের সময় পরিবহন পরিষেবা বন্ধ থাকার পাশাপাশি বেশিরভাগ স্থানে দোকান এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বিক্ষোভকারীরা অমৃতসর, রূপনগর, জলন্ধর, পাঠানকোট, সাংগ্রুর, মোহালি, লুধিয়ানা, ফিরোজপুর, বাথিন্দাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় জাতীয় ও রাজ্য মহাসড়কগুলো অবরোধ করে রেখেছিল।
অবরোধ সমর্থকরা রাস্তা ও মহাসড়ক বন্ধ করে রাখায় ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু অংশে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে সরকারি অফিস এবং ব্যাংক বীমা যথারীতি খোলা ছিল। কৃষকরা প্রধান সড়কে র্যালির পাশাপাশি সভা সমাবেশ করেছেন।
মহারাষ্ট্র জুড়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল এবং কৃষকদের এ অবরোধে রাজ্যের জীবন যাত্রা প্রায় স্বাভাবিক ছিল। তবে কেন্দ্র সরকারের তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইনের প্রতিবাদে এ ভারত বন্ধের সমর্থনে বিজিপি জাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ ও মোটরবাইক নিয়ে সমাবেশ করেছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুনেতে একটি এপিএমসি বন্ধ ছিল এবং নাগপুরে কৃষকদের সমর্থক একটি দল রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিল। এসব বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে কয়েকটি স্থান থেকে আটক করা হয়েছিল। তবে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, কেন্দ্রের আনা কৃষি আইনের বিরোধিতায় সোমবার দেশ জুড়ে বন্ধের সোমবার সকাল থেকেই রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও পথ অবরোধ, তো কোথাও রেল লাইনে তারা বিক্ষোভ করেছেন।
বন্ধের সমর্থনে হুগলির বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরে জিটি রোড অবরোধ করেছিলেন বন্ধ সমর্থকরা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়েও বিক্ষোভ করা হয়েছে । হুগলি ও চুঁচুড়া স্টেশনের মাঝে রেল অবরোধ করে রেখেছিলেন বন্ধ সমর্থকরা। চুঁচুড়া বাস টার্মিনাসেও কোনও বাস চলেনি। পান্ডুয়া স্টেশনে রেল অবরোধ করা হয়েছিল। অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান সমর্থকরা। বৈঁচি, উত্তরপাড়াতেও জিটি রোডে বিক্ষোভ চলে। ডানকুনিতে রেলের ওভারব্রিজের সামনে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়।
কৃষক সংগঠনের ডাকা বন্ধের প্রভাব পড়েছে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি ও ডুয়ার্সে। সেখানে রাস্তায় নামেনি বেসরকারি বাস। বন্ধ ছিল অধিকাংশ দোকান। রাস্তায় মিছিল করেছেন বন্ধ সমর্থকরা। শহরে মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল পুলিশবাহিনী।
বন্ধের প্রভাব পড়েছিল কোচবিহারেও। সকাল থেকেই সেখানে দোকানপাট বন্ধ ছিল। বেসরকারি পরিবহণও সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তবে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস পথে নামানো হয়েছে। বন্ধের সমর্থনে এসইউসিআই ও সিপিএম মিছিল করেছে। বন্ধের বিরোধিতা করে পাল্টা মিছিল করেছে তৃণমূলও। তবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।