রোহিঙ্গাদের অজ্ঞাতে মায়ানমারকে তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ: এইচআরডাব্লিউ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসার দ্বিতীয় বর্ষপূতিতে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আয়োজিত সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (১৫ জুন): জাতিসংঘ অনৈতিকভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর তথ্য সংগ্রহ করে সেটা মায়ানমারকে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। একই সঙ্গে সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। খবর আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন বছর ধরে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শত শত রোহিঙ্গাকে নিবন্ধন করেছে। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে পরিচয়পত্র তৈরীতে ঢাকাকে সহায়তা করার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়োিছল।
তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শরণার্থীদের কাছ থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের সময় তাদেরকে জানানো হয়নি যে, শরণার্থীদেরকে প্রত্যার্পনের লক্ষ্যে এসব তথ্য বাংলাদেশ সরকার মায়ানমারের কাছে হস্তান্তর করবে।
এইচআরডাব্লিউ’র ক্রাইসিস ও কনফ্লিক্ট বিষয়ক পরিচালক লামা ফাকিহ বলেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করছে সেটা সংস্থার নিজস্ব নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর মাধ্যমে শরণার্থীদেরকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।’
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে সংস্থার মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিক বলেছেন, শরণার্থী সংস্থার পরিস্কার নীতি হচ্ছে সারা বিশ্বেরই শরণার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব সংস্থার ওপরই বর্তায়।
এইচআরডাব্লিউ বলছে, তথ্য সংগ্রহের সময় শরণার্থীরা জানেন না বা বুঝতে পারেন না যে, তাদের কাছ থেকে সংগৃহীত ছবি, আঙুলের ছাপ এবং জীবন বৃত্তান্তের তথ্য মায়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ বিষয়টি বিশেষ ভাবে উদ্বেগের বলে এইচআরডাব্লিউ উল্লেখ করেছে।
এইচআরডাব্লিউ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মার্চের মধ্যে ২৪জন রোহিঙ্গার সাক্ষাতকার নিয়েছে। তাদের কাছে কক্স’বাজারের জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থায় নিবন্ধনের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এসব রোহিঙ্গার সঙ্গে ওই নিবন্ধনের সঙ্গে জড়িত ত্রানকর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছে এইচআরডাব্লিউ।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জোর দিয়ে বলেছে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে এসব তথ্য ব্যবহারের জন্য রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা আরো বলেছে এ তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য কি এবং কি কাজে ব্যবহার করা হবে সেটা প্রত্যেককেই আলাদা ভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। শরণার্র্থীরা বিষয়টি ‘পুরোপুরি জেনে এবং বুঝেই’ সম্মতি দিয়েছেন।
তবে ২৪ শরণার্থীর মধ্যে একজন ছাড়া বাকী সবাই এইচআরডাব্লিউকে বলেছেন যে, ত্রান সহযোগিতা ছাড়া অন্য কোন কাজে সংগ্রহ করা তথ্য ব্যবহার করা হবে এমন কোন কিছু তাদেরকে কখনোই জানানো হয়নি।
শরণার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য মায়ানমারের সঙ্গে বিনিময় করা হবে এবং এতে তারা সম্মত আছেন এ মর্মে একটি সম্মতির টিক দেওয়া রশিদ তথ্য সংগ্রহের পর তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর ভাষা ইংরেজি হওয়ায় ২৪ জনের মধ্যে মাত্র ৩জন সেটা বুঝতে পেরেছেন।
এইচআরডাব্লিউ’র সিনিয়র গবেষক বেলকিস উইলে এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যা স্পষ্ট হয়েছে, সেটা হলো আমরা যেসব রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছি, তথ্য বিনিময় করার ব্যাপারে তাদের সম্মতি নেওয়া হয়নি।’
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রয়োজনীয় তদন্ত করতে তিনি জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উইলে স্বীকার করেন এতো ছোট নমুনা থেকে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া বেশ কঠিন। তবে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ কমপক্ষে আট লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য মায়ানমারের সঙ্গে বিনিময় করেছে।
এসব রোহিঙ্গার মধ্যে প্রত্যেকেই যে তাদের তথ্য বিনিময়ের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন সেটা বিশ্বাস করা কঠিন বলে উইলে মন্তব্য করেন।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মায়ানমার ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। এদের মধ্যে এইচআরডাব্লিউ’র সাক্ষাতকার নেওয়া ২১জনও রয়েছেন। তারা বলছেন, মায়ানমারে তাদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানার পরই তারা বুঝতে পারেন যে, তাদের তথ্য মায়ানমারের সঙ্গে বিনিময় করা হয়েছে।
মায়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। তবে মায়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পূর্নাঙ্গ নাগরিক হিসেবে নয়, ‘ব্যুরোক্র্যটিক স্ট্যাটাস’ নিয়ে রোহিঙ্গারা ফিরতে চাইলে তাদেরকে স্বাগত জানানো হবে।
ইউএনএইচসিআর জোর দিয়ে বলেছে, শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার ইচ্ছের ওপর ভিত্তি করেই তাদেরকে মায়ানমারে পাঠানো হবে।
উইলেও বলেন, বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত কোন শরণার্থীকে জোর করে ফেরত পাঠানো হয়নি।
তবে তিনি বলেন, শরণার্থীরা এখন তালিকায় আছেন। মায়ানমার কর্তৃপক্ষ জানে যে, তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাই পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে, তাদের জন্য ঝুঁকিও বাড়বে।