বৃহস্পতিবার

২৫ এপ্রিল ২০২৪


১২ বৈশাখ ১৪৩১,

১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

কম্পিউটার এক্সেসরিজ বাজারে সরবরাহ সঙ্কট, বেড়েছে দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ১৬ জুন ২০২১   আপডেট: ১৮:৩৬, ১৬ জুন ২০২১
কম্পিউটার এক্সেসরিজ বাজারে সরবরাহ সঙ্কট, বেড়েছে দাম

ছবি: বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (১৬ জুন) করোনাকালে অফিস, ব্যবসা, পড়াশোনা ও দৈনন্দিনের কাজ অনলাইনে করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় কম্পিউটার ও ল্যাপটপের চাহিদা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশ বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কম্পিউটার এক্সেসরিজ সঙ্কটের কারণে সেসবের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।

দেশের বাজারে আমদানি করা কম্পিউটার এক্সেসরিজ এসেম্বেল করে বিক্রি করা হয়। এ জন্য চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানসহ বেশকিছু দেশ থেকে কম্পিউটারের এক্সেসরিজ আমদানি করতে হয়।

দেশের কম্পিউটার বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে কম্পিউটার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে একদিকে উৎপাদন কমেছে, অপর দিকে সরবরাহ কার্যক্রমে জটিলতা তৈরি এবং কয়েক দফা দামও বেড়েছে।

গ্রাফিক্স কার্ড
কম্পিউটারের যন্ত্রাংশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে গ্রাফিক্স কার্ডের। প্রকার ও মানভেদে বিশেষত গেমিংয়ের জন্য ব্যবহৃত গ্রাফিক্স কার্ডের দাম প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। এরমধ্যে নির্ধারিত কিছু গ্রাফিক্স কার্ডে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। 

একইসঙ্গে কম্পিউটারের অন্যতম প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজের মধ্যে র্যা ম, প্রসেসর ও মনিটরের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রসেসর
বাজারে ইন্টেল, এএমডি রাইজেনের বহুল প্রচলিত জেনারেশনের প্রসেসরগুলো বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার থেকে ১৪ হাজার ৫০০ টাকায়। যা এর আগে বাজারে বিক্রি হতো ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৫০০ টাকায়। এই হিসেবে প্রতি প্রসেসরে দাম বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে রয়েছে প্রকারভেদে দামের কিছুটা তারতম্য হতে পারে।

র‌্যাম
বাজারে চিপ সঙ্কটের কারণে প্রতি র্যাটমে দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বর্তমানে একটি ৮ জিবির র্যা্ম বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। যা মাস চারেক আগে বিক্রি হত ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। 

মনিটর
কম্পিউটারের অন্যান্য যন্ত্রাংশের থেকে মনিটরের চাহিদা বাজারে অনেক বেশি। তবে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পণ্য না থাকায় এই এক্সেসরিজের দামও ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে বহুল প্রচলিত ১৯ ইঞ্চির এইচপি ডেলসহ অন্যান্য মনিটরের দাম বেড়েছে। আগে একটি ১৯ ইঞ্চির মনিটর বিক্রি হতো ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায়, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা।

ক্লোন পিসি
সাধারণত বাজারে ব্র্যান্ড পিসি থেকে ক্লোন কম্পিউটারের দাম কম ছিল। কিন্তু এক্সেসরিজ সঙ্কটের কারণে এখন একটি ক্লোন কম্পিউটারের দাম ব্র্যান্ড পিসির পর্যায়ে চলে গেছে। বাজারে এক্সেসরিজ সঙ্কটের আগে একটি ক্লোন পিসি তৈরিতে ব্যয় হতো ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এখন গুনতে হবে ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, একটি ক্লোন পিসি তৈরিতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

ব্র্যান্ড পিসি
অফিসের কাজে ব্যবহৃত যেসব ব্র্যান্ডের ল্যাপটপগুলো বিক্রি হত ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায়। 

ল্যাপটপে
অফিসের কাজে ব্যবহৃত এইচপি, ডেলসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের পিসিগুলো ৪২হাজার থেকে ৫০হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা বিক্রি হত ৩৫হাজার থেকে ৪২হাজার টাকায়।

দাম বাড়ার প্রসঙ্গে স্টার টেক-এর সিনিয়র ডেপুটি ম্যানেজার সেলস ও মার্কেটিংয়ের কর্মকর্তা শাহাজাহান হোসেন ফাহিম বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে জানান, আমি পণ্যের জন্য অর্ডার দিয়েও তা পাচ্ছি না। যেখানে আমাদের দরকার ১০০ পিস সেখানেও পাচ্ছি ২০ পিস যে কারণে বেশি দামে পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে শিপমেন্ট খরচও বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরকেও বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে।

চাদিহা বাড়লে দাম কেন বাড়ে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সাপ্লাই না থাকায় দাম বাড়ার কারণ হচ্ছে শিপিং কস্ট অর্থাৎ খরচ বেড়ে যায়। এখন অনেক বেশি দাম দিয়ে পণ্য আনতে হচ্ছে কারণ জাহাজের পরিবর্তে আকাশপথে পণ্য আমদানিতে আমাদের খরচ বেড়ে গেছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য সংকটের কারণে বেশি দাম দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য এসব যন্ত্রাংশের দামও বেড়ে গেছে। তাই বেশি দাম দিয়ে কিনে বেশি দামেই ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে।

কম্পিউটার এক্সেসরিজের সঙ্কটের কারণ হিসেবে ‘কম্পিউটার ভিলেজে’র সেলস ও মার্কেটিং অফিসার বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে জানান, দেশে লকডাউনের কারণে অফিসের কাজে ও পড়াশোনায় ল্যাপটপসহ অন্যান্য এক্সেসরিজের চাহিদা বাড়লেও সেই অনুযায়ী যোগান দেওয়া যাচ্ছে না। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ নেই। কারণ বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকা উৎপাদন হয়নি তাই পণ্য সঙ্কট হচ্ছে। পাশাপাশি পণ্যের সঙ্কটের কারণে এ সবকিছুর দামও বেড়ে গেছে। এরমধ্যে র্যানম, গ্রাফিক্স কার্ড, মনিটর, প্রসেসর সঙ্কট রয়েছে দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে।

‘রায়ানস কম্পিউটার্সে’র বিক্রয় কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে জানান, করোনা শুরু পর থেকেই আমদানি কম হওয়ায় দাম বাড়ছে। মূলত, বৈশ্বিক বাজারে এই সময়ে কম্পিউটার এক্সেসরিজের চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু চিপ সঙ্কটের কারণে এসব পণ্যের পাশাপাশি ব্র্যান্ড পিসিগুলোর দামেও প্রভাব পড়তে পারে।   

কম্পিউটারের এক্সেসরিজ কিনতে আসা আসিফ জামান বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে জানান, সম্প্রতি তার বন্ধু ফাইন টেকের যে কী-বোর্ড কিনেছিল ১ হাজার ৬০০ টাকায় তা তিনি আজকে কিনেছেন ১ হাজার ৭০০ টাকায়। অর্থাৎ দুই তিন মাসের মাথায় ১০০ টাকা বেড়েছে।

প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার আরিফুল ইসলাম বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে আসা নতুন সবকিছুর দাম কিছুটা বেশি থাকে। বিশেষত করোনার কারণে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাই দামও কিছুটা বেড়েছে। তাই প্রয়োজনের তাগিদেই এখন আমাদের কিনতে হচ্ছে।

এই খাতে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সঙ্কট চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে এসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কবে নাগাদ কম্পিউটার বাজার স্থিতিশীল হবে বলা যাচ্ছে না।

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়