বৃহস্পতিবার

২৫ এপ্রিল ২০২৪


১২ বৈশাখ ১৪৩১,

১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবগুলোর প্রতিফলন বাজেটে নেই: বেসিস

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ৫ জুন ২০২১   আপডেট: ২২:৫৫, ৫ জুন ২০২১
তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবগুলোর প্রতিফলন বাজেটে নেই: বেসিস

ছবি: বেসিস

ঢাকা (০৫ জুন): তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট যেসব প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছিল প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। তাই তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব বাজেটের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

শনিবার দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বেসিসের বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।

বেসিস সভাপতি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির সময়ে এবং বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতেও ছয় লক্ষাধিক কোটি টাকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে তার জন্য সরকারকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে আলিঙ্গন করতে তথ্যপ্রযুক্তি উদোক্তা ও বিদেশে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার (বিএনডিএ) প্ল্যাটফরম এর মাধ্যমে সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে ইন্টার-অপারেবিলিটির প্রতি বাজেটে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

একইসাথে ক্লাউপ সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্লাটফরম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও আইটি ফিন্যান্সিংকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এসময় বেসিস সভাপতি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে শর্তাদির প্রয়োজনীয় সংশোধনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে সিপিটিইউয়ের ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে প্রণীত সফটওয়্যার কেনায় একটি বিশেষায়িত আএফপি খসড়া দলিলটি অদ্যাবধি চূড়ান্ত না করায় সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বাংলাদেশী সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি এর সুফল পাচ্ছে না। আমাদের অনুরোধ থাকবে, বাজেটের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে বেসিস এবং আইসিটি ডিভিশনের সংশোধনী প্রস্তাবনাসহ সফটওয়্যার ক্রয়ে বিশেষায়িত আরএফপি দলিলটি দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে।

বেসিস মনে করে, সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে এসব উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হলে প্রকৃত অর্থে এগুলো সত্যিকারের সুফল বয়ে আনবে না। বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট যেসব প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছিল তার যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি বলে উল্লেখ করেন বেসিস নেতৃবৃন্দ।

বিশেষ করে আইটি প্রশিক্ষণ এবং ইন্টারনেট সার্ভিসের সংজ্ঞাভুক্ত করা হয়নি। আমরা সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যারের শুল্ক হার কমানোর প্রস্তাব করেছিলাম। তাছাড়া কোভিড পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতির অ্যাকশন আইটেম হিসেবে কর অব্যাহতির সময়সীমা আগামী ২০৩০ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। তাও বিবেচনা করা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্বাধীনতার ৫০তম বছরে বাংলাদেশকে একটি টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স (টিএ) প্রদানকারী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে ব্র্যান্ডিং এবং বাংলাদেশের বেসরকারি আইটি ইন্ডাস্ট্রির বাজার সম্প্রসারণে উন্নয়নশীর দেশগুলোতে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স (টিএ) প্রজেক্টের জন্য ৫০০ কোটি টাকা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৩০০ কোটি টাকার একটি তহবিল রাখার প্রস্তাব করেছিলাম যাতে নারী উদ্যোক্তাগণ দুই শতাংশ সুদে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। বাজেটে টিএ প্রকল্প সম্পর্কে বা আইটি উদ্যোক্তা সৃষ্টির কথা থাকলেও এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই।

অপরদিকে, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদিও এর মধ্যে কতখানি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ তা স্পষ্ট নয়। কোভিড পরিস্থিতিতে বেসরকারি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি বাজার সৃষ্টি এবং সরকারের ডিজিটাইজেশনে বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) তথা ডিজিটাল লেনদেন উৎসাহিত করতে যেখানে এ খাতকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা দরকার ছিল, সেখানে এ খাতে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়সাধ্য করে তুলবে। পাশাপাশি ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসাকে উৎস কর বা অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম মূসকের আওতামুক্ত রাখার জন্য জোর দাবি জানান বক্তারা।

অন্যদিকে আইটি/আইটিইএস এর করপোরেট ট্যাক্স ২০২৪ সাল পর্যন্ত মওকুফ থাকলেও এ খাতে রপ্তানি আয়ের ওপর সরকার প্রদত্ত নগদ প্রণোদণার উপর ১০ শতাংশ উৎস কর কর্তন করা হচ্ছে।

বেসিস সভাপতি আরো বলেন, দেশে বর্তমানে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, এয়ারপোর্ট টার্মিনালের মতো প্রচুর পরিমাণে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে, যেখানে স্থানীয় সফটওয়্যার খাতে খরচ দৃশ্যমান নয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নেও বাজেট বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় সফটওয়্যার বা আইটি পরিষেবার জন্য তেমন কোনো বাজেট বরাদ্দ রাখা হচ্ছে না।

অপরদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনাও বাজেটে দেখা যায়নি। বিশেষ করে ২৫টি প্রশিক্ষণকে আয়কর অব্যাহতির আওতায় আনা হলেও আইটি প্রশিক্ষণকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন বেসিস সভাপতি।

বেসিস সভাপতি বলেন, সরকার সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের প্রত্যাশিত উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তাবসমূহ বাজেট অধিবেশনে আলোচনার মাধ্যমে বিবেচনা করবে এবং সত্যিকার অর্থে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্যও একটি ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব বাজেট জাতিকে উপহার দেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে বিষয়টি তুলে ধরার ব্যাপারে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের ইতিবাচক ভূমিকা ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করি।  

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান, সহ-সভাপতি (প্রশাসন) শোয়েব আহমেদ মাসুদ, সহ-সভাপতি (অর্থ) মুশফিকুর রহমান, পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দন ও রাশাদ কবির।

 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়