বৃহস্পতিবার

২৫ এপ্রিল ২০২৪


১২ বৈশাখ ১৪৩১,

১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের দায়িত্ব আছে, বেশী চীনের: ড. শ্রুতি পাটনায়ক

শাহাদাৎ হোসাইন || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২১:০৪, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ২১:০৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের দায়িত্ব আছে, বেশী চীনের: ড. শ্রুতি পাটনায়ক

গ্রাফিক্স: বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (০৫ সেপ্টেম্বর): রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে ভারতের কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন নয়া দিল্লির এম. পি ইন্সটিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড এনালাইসিসের রিসার্চ ফেলো ড. শ্রুতি পাটনায়ক। তিনি বলেছেন ভারত ইতোমধ্যে ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তুলনায় এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। তবে প্রত্যাবাসনই এই সংকটের সমাধান দিতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে চীনের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চারদিনের সরকারী সফর শুরুর প্রাক্কালে রবিবার বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।    

শ্রুতি পাটনায়ক বলেন, আমি মনে করি রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ভারত জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। এ ধরনের ইস্যুর কূটনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল তার কোন ইতিবাচক ফল আসেনি। মায়ানমার রাষ্ট্রের চিন্তার মধ্যে পরিবর্তন না আসলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন করা কঠিন। কারণ, রোহিঙ্গারা ফের দেশের অভ্যন্তরীণ আইনের ফাঁদে পড়বে। ফলে এই অঞ্চলের দেশগুলোর উচিত মায়ানমারকে অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য চাপ দেওয়া।

ভারত বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারে শ্রুতি পাটনায়ক বলেন, দুই দেশই এখন সবচেয়ে ভাল সময় পার করছে এবং এ সম্পর্ককে আরো গভীর করার এখনই উৎকৃষ্ট সময়। গত কয়েক বছরে নানা খাতে দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতি হয়েছে। যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সহযোগিতা, মানুষে মানুষে যোগাযোগ বেড়েছে। এছাড়া আন্তঃরাষ্ট্রীয় ট্রেন ও বাস যোগাযোগও বেড়েছে। সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড ও নৌ বাহিনীর মধ্যকার আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ দুই দেশের নিরাপত্তাকেও বৃদ্ধি করেছে।

যেকোন উচ্চ পর্যায়ের সফরই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে জোরদার করে উল্লেখ করে শ্রুতি পাটনায়ক বলেন, আঞ্চলিক সম্পর্ককে আমি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিকল্প মনে করিনা। আমাদের মাঝে আগে থেকেই দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক যোগাযোগের প্রকল্প রয়েছে। বিবিআইন তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়া এশিয়ান হাইওয়ে ও এশিয়ান রেল কানেক্টিভিটি প্রকল্প রয়েছে। ভারতের সঙ্গে থাইলান্ড ও মায়ানমারের ত্রিদেশীয় সড়ক যোগাযোগ আলোচনায় রয়েছে। এছাড়া বিমসটেকও এমন কিছু করতে চায়। প্রত্যেকটা উদ্যোগই এই অঞ্চলের কানেক্টিভিটিকে সমৃদ্ধ করবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। তাই, বাংলাদেশের যেকোন দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশে চীনের অনেক প্রকল্প বাংলাদেশ ও ভারতের যোগাযোগকেও সমৃদ্ধ করেছে। পদ্মা সেতু ও পদ্মা রেল সেতুর কারণে ঢাকা-কলকাতার যোগাযোগ আরও সহজ হবে। তবে চীনের দ্বিতীয় প্রধান অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে ভারতের কিছু নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশও এসব উদ্বেগকে আমলে নিয়েছে বলেই মনে হয়।

শ্রুতি পাটনায়ক মনে করেন আঞ্চলিক সম্পর্ককে একটি বা দুইটি সংগঠনের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত না। তিনি বলেন, একটি বা দুইটি সংগঠনের সফলতা বা ব্যর্থতাকে আমরা সমগ্র আঞ্চলিক সম্পর্কের সফলতা বা ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি না।

সার্ক নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, সার্ক শীর্ষ সম্মেলন না হলেও সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা পুলিশ প্রধানের সম্মেলন কিন্তু হচ্ছে। গণমাধ্যমের সবসময় শীর্ষ সম্মেলনে চোখ থাকে বলে আমরা এসব খবর জানতে পারি না।  

তিনি বলেন, বিমসটেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কোন সংকট না থাকলেও এর অগ্রগতি সামান্য। আমার কাছে মনে হয়,এই অঞ্চলে আঞ্চলিক সম্পর্কের চেয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই বেশী গুরুত্ব পাচ্ছে এবং রাষ্ট্রগুলোও তাই চাচ্ছে। কারণ, আঞ্চলিক সংগঠনগুলো কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক সম্পর্ক একসাথে চলতে পারে।

সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রশ্নে তিনি বলেন, একই সংস্কৃতি ও ইতিহাস শেয়ার করা মানে এই নয় যে মতের অমিল হবে না। আমাদের সংকটের বিষয়গুলো চিহ্নিত করা দরকার। দুই দেশই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সংকট গুলো সমাধানে আন্তরিক।

শ্রুতি পাটনায়ক বলেন, সীমান্ত সহযোগিতা নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত। আমরা সীমান্ত সহযোগিতা এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যাতে সীমান্তে কোন গুলি না ছোড়া হয়। তবে  অবৈধ  অনুপ্রবেশ, গরু পাচার ও ফেনসিডিল পাচার বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া  জরুরী। তবে একে অপরকে দোষারোপ সংকটের সমাধান বয়ে আনবে না।

ভিসা সহজীকরণ প্রশ্নে শ্রুতি পাটনায়ক বলেন, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি মতে নেপাল ও ভূটানের সাথে ভারতের মুক্ত সীমান্ত রয়েছে। দুই দেশের নাগরিকদের ভারতে থাকার অনুমতি ও সরকারী চাকরির আবেদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এমন কোনো চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নেই। তবে বর্তমান ভিসা ব্যবস্থা চালু রেখেই অন এরাইভাল ভিসা চালু রাখার একটা সুযোগ খোঁজা যেতে পারে। এছাড়া দুই দেশ স্থল বন্দরে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে আরও সহজ করা যেতে পারে। বিমানবন্দর গুলোতে ইমিগ্রেশন সহজে করা গেলে, স্থল বন্দরে কেন নয়?

 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়