শুক্রবার

২৯ মার্চ ২০২৪


১৫ চৈত্র ১৪৩০,

১৯ রমজান ১৪৪৫

পরভাষা কাতরতার চাপে পিষ্টপ্রায় বাংলা ভাষা

মুহাম্মদ মাহবুব হোসেন || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৯:৫৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
পরভাষা কাতরতার চাপে পিষ্টপ্রায় বাংলা ভাষা

ছবি: বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

পরিবর্তন, নাকি বিকৃতি?
আমরা জানি ক্রমে ক্রমে স্বাভাবিকপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ভাষার ধর্ম। শুধু ভাষা কেন, সমাজ থেকে শুরু করে জীবন, সব কিছুরই যে এই নিয়ম। ভাষায় নানা মাত্রা, শব্দ, বাগধারা ইত্যাদি যোগ হয়, পুরনো কিছু কখনো কখনো বাদ পড়ে, আবার ক্রমেই নতুন কিছু কিছু যুক্ত হয়— এভাবেই ভাষা বেঁচে থাকে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, ‘স্বাভাবিক পরিবর্তন’ আর ‘বিকৃতি’ দুটো কি এক? একটা বেলুনের একটু বাতাস কমে গেল, পরিবর্তন হল; কিন্তু আমরা সুঁই দিয়ে বেলুনটাকে ফাটিয়ে দিয়ে সেটাকেও কি পরিবর্তন বলতে পারি? না, পারি না। কারণ, এতে আমরা বেলুনের অন্তর্বস্তুটাকে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করেই যে দিলাম।

বাংলা ভাষার এই অন্তর্বস্তুটা আজকালকার তথাকথিত ‘আধুনিক’ বাংলা সাহিত্য-শিল্প এবং ‘অত্যাধুনিক’ সাংবাদিকতার আগ্রাসনে যেভাবে বিনষ্ট হচ্ছে, তার বিশ্লেষণে একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করতে আমার এই বিনম্র প্রচেষ্টা।

সাম্প্রতিক একটি অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করি। কয়েক মাস আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সম্পূর্ণ বাংলায় একটি প্রবন্ধের খসড়া লিখেছিলাম, একটি দৈনিকের অনুরোধে। লেখাটা শেষ করে খেয়াল করলাম, লেখাটায় বাংলা ছাড়া ইংরেজি-বাংরেজি বা অন্যকোনো ভাষার শব্দের ব্যবহার একদমই করিনি! জ্ঞানত বা অজ্ঞাত যেকোনো কারণেই হোক না কেন। একবার পড়া শেষে কেমন যেন একটা আত্মতৃপ্তি বোধ করলাম! সম্পূর্ণ নিজের মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহারে একটা কিছু লিখে ফেলতে পারাটা অনেক স্বস্তির মনে হল, অন্তত আমার মতো বাংলায় মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে কোনোমতে পাস করা একজন অতি সাধারণ বাঙালীর জন্য তো ব্যাপারটা অনেকটা যুদ্ধজয়ের মতোই!

লেখাটা সেই জাতীয় দৈনিকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাকে জানানো হল— লেখার বিষয়বস্তু কিংবা প্রবাহ খুব ভালো হয়েছে, কিন্তু শব্দচয়নে বিরাট সমস্যা, বিকট গড়বড় আছে। “এত কঠিন বাংলার বাজার নেই, আজকালকার পাঠক এই ধরনের লেখা খুব একটা খায় (!) না।”

আমি আরও একবার পড়লাম লেখাটা এবং কিছুতেই লেখাটা দুর্বোধ্য হিসেবে মানতে পারলাম না। পত্রিকা অফিস থেকে আমাকে উপদেশ দেওয়া হল যেন আমি “আধুনিক লেখায়” প্রচলিত বাংরেজি ধাঁচের শব্দ ব্যবহার করি বেশী-বেশী! বলা হল ‘প্রকল্প’, ‘কারিগরি’, ‘সংশোধন’, ‘মূল্যায়ন’ ইত্যাদি নানাবিধ শব্দের বদলে ‘প্রজেক্ট’, ‘টেকনিক্যাল’, ‘রিভিশন’, ‘ইভ্যালুয়েশন’ ইত্যাদি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে সহজীকরণ (?) করে দিলে উনারা লেখাটা ছাপাবেন !!

ব্যাপারটায় আমি রীতিমত আতংকিত হলাম। আমি ভাবলাম, আমার বোধহয় বাজারটা একটু ভালো করে বোঝা দরকার ! যেই ভাবা, সেই কাজ। ঝটপট ইউটিউবে গিয়ে পূ্র্ব-পশ্চিম দুইদিকেই ঝাঁপিয়ে পড়লাম বাংলা ভাষায় তৈরি সমসাময়িক নাটক, গান, টিভি সিরিয়াল ইত্যাদি দেখার জন্য। বাংলাদেশের নাটক কিংবা পশ্চিমবঙ্গের টিভি সিরিয়ালগুলো আধুনিক বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি কিংবা সাংবদিকতায় যে ভীষণ রকম প্রভাব বিস্তার করে রীতিমত বাংলা ভাষার কায়া ও অন্তর্বস্তু পাল্টে দিচ্ছে তা খুবই উদ্বেগজনকভাবে লক্ষ্য করলাম এই যাত্রায়! যেমন ধরা যাক, পশ্চিমবঙ্গের টিভি সিরিয়ালে হরহামেশাই চরিত্রগুলোকে বলতে শোনা যায়— “খাবার লাগানো হয়েছে, খেতে এসো” অথবা “তুমি জানো, তোমার জন্য আমায় কতটা ইনসাল্ট হতে হয়েছে?” বা “একচ্যুয়ালি আমি তোমার সাথে অনেক রুড বিহেভ করেছি, তাই আমি ডিসাইড করেছি...” !, কিংবা আমাদের বাংলাদেশের হালের জনপ্রিয় নাটকের টাইটেল শুনে আঁতকে উঠতে হল। যেমন— ‘কেয়ার অব লাভ’ বা ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ অথবা ‘দি জেন্টেলম্যান’! চরিত্রগলো বলছে— “মাথার মধ্যে একটা জিনিস আসছে, বলতে চাই !” বা “আমার বোন তোমার উপর ক্রাশ খেয়েছে” ইত্যাদি! বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু সব মিলে একেবারে গাঁজাখুরী-জগাখিচুড়ি অবস্থা !

সমস্যাটা এই নয় যে, ওপরের উদাহরণগুলোতে বাংলা ভাষার ব্যবহারে ব্যাকরণগত বা প্রকরণগত ভুল হয়েছে, সমস্যাটা হল— বাংলা ভাষায় লেখার বা বলার সময় লেখকেরা আজকাল ইংরেজি বা হিন্দি বা উর্দু ইত্যাদি অবাংলা ভাষায় ভাবতে শুরু করেছেন, আর তারপর সেই খিচুড়িটাকে অলংকরণ করে বাংলা ভাষার পাঠক/দর্শকের পাতে পরিবেশন করছেন। আর বাঙালী পাঠক কিংবা দর্শকেরাও অবাংলা বা বিকৃত বাংলায় ভাবতে শুরু করেছে ! সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হল দর্শক, শ্রোতা বা পাঠক এমন কি প্রকাশক, সম্পাদকমণ্ডলী পর্যন্ত এই ব্যাপারগুলোতে আপত্তি করছেন না, উল্টা ক্ষেত্রবিশেষে উদযাপন করছেন ! সহমত হলে, ভাবুন তো কেন এমনটা হচ্ছে?

স্ব-ভাব হারিয়ে হীনম্মন্য বাঙালী
আমার মনে হয় বাংলা কে আমরা বাঙালীরাই একটা ‘নীচু স্তরের’ মানুষের ভাষা হিসেবে ভাবতে শুরু করেছি। কীভাবে? মিলিয়ে দেখুন তো একটু !

আমাদের একটা শ্রেণী ইংরেজি ভাষার সাথে বিত্তময়, ঝলমলে জীবনের একটা সপ্রতিভ, স্থায়ী সম্পর্ক খুঁজে পান বলে আমার বিশ্বাস। বলিউড আর টিভি সিরিয়ালের কল্যাণে হিন্দিও আজকাল কোনো কোনো মহলে ‘অভিজাত’ ভাষা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে হীনম্মন্যতায় ভোগা বহু বাঙালীর মনে। পক্ষান্তরে বাংলা ভাষাকে এই শ্রেণীটাই আবার স্যাঁতসেতে, ধূসর জীবনের প্রতিচ্ছবি মনে করেন ! বাংলাকে মনে করেন একটা অসম্মানের (?) ভাষা, অনভিজাত (?)  ভাষা।

আজকাল প্রায় সব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বাংলায় কথা বলা রীতিমত অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে, এমন কি শিক্ষার্থীদের খাবার বিরতির সময়ে শিশুরা কোন ভাষায় কথা বলছে সেটাও পারলে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

কোনো ‘অভিজাত’ হোটেলে বা রেস্তোরাঁ বা বিপণী-বিতানে যান, দেখবেন কর্মচারীরা আপনি বাঙালী জেনেও আপনার সাথে ভাঙ্গা-ভাঙ্গা ইংরেজিতে কথা বলছে। আপনি বাংলায় জবাব দিলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তারা ইংরেজি চালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। কেন? কারণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে যেন এই রকম অভিজাত (?) জায়গায়, যেখানে বিত্ত-বৈভব আর উচ্চাকাঙ্ক্ষার উদযাপন হয়, সেখানে যেন বাংলার মতো ভাষা ব্যবহার করা না হয়। কারণ, তারা মনে করে— ইংরেজি হল ‘অভিজাত মনোভঙ্গীর’ ভাষা, বাংলার মতো ‘গরীবের’ ভাষা নয় !

আজকাল টেলিভিশনে অনেক ইংরেজি বা হিন্দি বিজ্ঞাপনকে বাংলায় ভাষান্তর করে চালানো হয়। এই বিজ্ঞাপনগুলো খেয়াল করে শুনলে দেখবেন, ভাষান্তরে যে বাংলা ব্যবহার করা হয়, তা প্রায় বেশীরভাগ সময়ই নড়বড়ে, ভাঙ্গা-চোরা এবং লক্ষণীয় পরিমাণে অবাংলা মিশ্রিত ! যিনি বলছেন তিনি যেন বাংলা বলতে খুবই অসাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন, এমনটা শ্রোতাকে বোঝানোর একটা দারুণ চেষ্টা দেখা যায় এই ঝলমলে বিজ্ঞাপনগুলোতে।

আবারও প্রশ্ন আসে মনে, কেন এমনটা করা হয়? আমার ধারণা এর কারণটা হল মূলত ইংরেজি-বাংরেজি, ভাঙ্গা-বাংলা কিংবা হিন্দির মতো তথাকথিত ‘উঁচু জাতের’ ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে, এর মাধ্যমে যে পণ্য আমার বা আপনার কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করা হচ্ছে তা এই ভাষার মতোই আপনার উচ্চাকাঙক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উঁচু জাতের, উঁচু দরের পণ্য !

যে ভাষাকে ইউনেস্কোর মতো প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর মধুরতম (সুইটেস্ট) ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই ভাষাভাষী বাঙালীর একটা সুবিশাল অংশ যেন ডায়াবেটিস বা বহুমূত্ররোগে আক্রান্ত, তাই পৃথিবীর মধুরতম বাংলা ভাষাই আজ তাদের কাছে পরিত্যাজ্য, সম্ভাব্য অসুস্থতার (?) অনুঘটক হিসেবে পরিগণিত !

পরভাষা চর্চায় নেশাতুর বাঙালী
আমার নিজের সন্তানদেরও অবস্থাও খুব একটা বেশী ব্যতিক্রম নয়, যা ভাবতে গেলে আমি প্রায়ই মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে পড়ি। পরিস্থিতির ব্যাপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা ছোট্ট ঘটনা বলে ফেলি। পরিবারসহ তিন-চার দিন কক্সবাজার ঘুরে এসে আমার বারো বছর বয়সী মেয়ে আর দশ বছর বয়সী ছেলেকে আমি বললাম, তোমরা দু’জন যার যার মতো করে কক্সবাজার ঘুরে আসা নিয়ে বাংলায় তোমাদের অভিজ্ঞতা লিখে ফেল, চারদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে আমাকে পড়ে শোনাবে। আমি ভেতরে ভেতরে বেশ আগ্রহ এবং উচ্ছ্বাসের সাথে বৃহস্পতিবার রাতের অপেক্ষা করলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ কিছুটা আঁচ করতে পারলাম, আমার সন্তানদ্বয় বেশ অস্বস্তিকর চাপের মধ্যে পড়ে গেছে ব্যাপারটা নিয়ে। অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ এলে আমি দেখলাম চারদিনে আমার মেয়ে লিখেছে এগারোটি বাক্য, আর ছেলের লিখতে পেরেছে আটটি বাক্য। দু’জনেরই লেখায় বানানসহ ভাষাগত অনেক ভুল, অসমাপ্ত বাক্য আর মনের ভাব প্রকাশে অস্বস্ত্বির ছড়াছড়ি। বেশ কিছু বাংরেজির ব্যবহার দেখে বুঝলাম, ওই শব্দগুলো যে বাংলা নয়, সেটাও তারা জানে বা বোঝে না !

মনে মনে কিছুটা হতাশ আর তার চেয়ে অনেক বেশী প্রত্যয়ী হয়ে আমি কোনো সমালোচনা না-করে ওদের চেষ্টার প্রশংসা করলাম। তবে, ভুল জায়গাগুলো শুধরে দিতে ভুললাম না। এরপর থেকে ওদের মাতৃভাষা বাংলার সঠিক চর্চায় সহায়ক ভূমিকা পালনের অবিরাম প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি, আর প্রতিনিয়ত বেশ শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছি। এই ব্যাপারটা নিয়ে অন্য একদিন বিস্তারিত লিখব।

আজকাল ব্যাংক বা টেলিকম কোম্পানি কিংবা যেকোনো কল সেন্টারের নম্বরে কল করলে যে দাঁত কবচানো, জীভ উল্টানো উচ্চারণে কথা বলা হয়, তাতে মাঝে মধ্যে চিন্তার পড়ে যাই যে— এরা বাংলাদেশ থেকে কথা বলছে তো, নাকি বাকী বিশ্বের মতো আমাদের দেশের কল সেন্টার অপারেশনগুলোও ভারত কিংবা অন্যকোনো দেশে আউটসোর্স করা?

সকল ভাষার প্রতি অটুট সন্মান প্রদর্শনপূর্বক সকল বাঙালীর কাছে আমার সবিনয় প্রশ্ন হল, বাঙালীর এই রকম নিজের ভাষাকে পরিত্যাজ্য করে পরভাষা চর্চায় রীতিমত নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণ কী হতে পারে?

(১) বাংলা ভাষার অতিরিক্ত মধুরতা বা তথাকথিত কাঠিন্য?
(২) বাঙালীর কথিত সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতা?
(৩) বাঙালী জাতির চিরচেনা জীবনধারায় মানবিক, শৈল্পিক এবং দার্শনিক ঐশ্বর্যের প্রাধান্যকে পেছনে ফেলে বস্তুবাদী ঐশ্বর্যের প্রাধান্য বেড়ে যাওয়া? 
(৪) নাকি অন্য কিছু…?

শেষের কথা
যেকোনো সমস্যা নিয়ে অবিরাম নালিশ করতে পারাটা আমাদের বাঙালী জাতির মেধাস্বত্ব অধিকার হিসেবে পরিগণিত হলে আমি অন্তত অবাক হব না। আমিও তো প্রায় পুরো লেখাটা জুড়ে এই কাজটাই করে গেলাম এ পর্যন্ত ! তাই ভাবলাম, গতানুগতিক জাতীয় ধারার বাইরে গিয়ে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করব লেখাটির এই শেষ অংশটিতে।

মাতৃভাষা ব্যতিত যেকোনো ভাষা শেখায় কোনো দোষ নেই বরং তা প্রশংসনীয়ই বটে, কিন্তু মূল সমস্যাটা মাতৃভাষা ব্যতিত পরভাষায় চিন্তা করা শুরু করলে। এই ধরনের চর্চায়, প্রথমত কোনো বিষয়েই ভালো মতো শেখা বা জানা হয় না, এবং দ্বিতীয়ত সেই চিন্তার থেকে স্বকীয়, সেরা কিছু বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। অতএব, একটি জাতিকে যদি সৃষ্টিতে সেরা হতে হয়, তবে তার তরুণপ্রজন্মকে মাতৃভাষায় শুদ্ধ করে করে ভাবতে, চিন্তা করতে শিখতে হবে সবার আগে। এক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশের চেয়ে সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরা অনেক বেশী বেকায়দায় আছেন তাদের বহুভাষী ভারতীয় জাতি-স্বত্তার বেড়াজালে জড়িয়ে।

বাংলা ভাষার ও বাঙালী জাতির অন্তর্বস্তু এবং স্বকীয়তা রক্ষার্থে আমরা অন্তত বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইংরেজি ছাড়া অন্য সকল বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকসহ সকল পাঠদান কার্যক্রম বাংলায় পরিচালনা বাধ্যতামূলক করাটা কি খুব কঠিন সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে? আমার মনে হয় না। এক্ষেত্রে ইংরেজি, আররী বা সংস্কৃত ভাষার পাঠ্যক্রমে প্রচলিত গ্রামার-বেইজড শিক্ষার পাশাপাশি আরও বেশ ব্যবহারিক পাঠ্যসূচি, অনেকটা আইইএলটিএস-এর মতো করে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারলে মনে হয় ইংরেজির মতো গ্লোবাল ভাষা শিক্ষার মানও সর্বস্তরে বৃদ্ধি পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা পাওয়া যাবে।

পাশাপাশি, বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গান, নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহারে আরও অনেক বেশী সতর্কতা অবলম্বন নিশ্চিত করতে পারলে সমস্যার সমাধান অনেকটাই সহজতর হয়ে যাবে। সাংবাদিকতায়ও বাংরেজি কমিয়ে বাংলা শব্দের ব্যবহার বাড়ালে প্রথম প্রথম হয়তো কাটতিতে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে খবরের স্বকীয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি উপকৃত হবে সমগ্র জাতি।

সর্বোপরি, বাঙালী জাতির পরভাষা প্রেমে মশগুল বা মজবুর অংশটিকে বুঝতে হবে, নিজের মাতৃভাষাকে সন্মান দিতে না জানলে, অন্যকোনো ভাষাভাষীর কাছেই সন্মান পাওয়া যায় না, আর সৃষ্টিশীলতার দৈন্য তো বোনাস হিসেবে থাকছেই !

বাঙালীর স্বকীয় গৌরবের এই ভাষার মাসে, সকল ভাষা শহীদ ও তাদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

লেখক: কম্পিউটার প্রকৌশলী ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী

Nagad
Walton

সর্বশেষ