বৃহস্পতিবার

২৫ এপ্রিল ২০২৪


১২ বৈশাখ ১৪৩১,

১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিশ্বজয়ী শিশু হাফেজকে সংবর্ধনা

হাফেজ তাকরিমের সাফল্যে প্রধানমন্ত্রীও খুশি: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৭:৫৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
হাফেজ তাকরিমের সাফল্যে প্রধানমন্ত্রীও খুশি: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা (২৭ সেপ্টেম্বর): ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব তাকরিমকে সংবর্ধনা দিতে। তাই, আমরা আর দেরি করিনি। তাকরিমের সাফল্যে প্রধানমন্ত্রীও খুশি।’

মক্কায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ১১১টি দেশের ১৫৩ জন হাফেজের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী বাংলাদেশী প্রতিযোগী হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিমকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। 

আজ মঙ্গলবার সকালে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব পাশে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় হাফেজ তাকরিমকে বই ও ক্রেস্ট উপহার দেয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাকে ২ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়।

বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরিমকে অভিনন্দন জানিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, পবিত্র কোরআন মানবজাতির হেদায়েতের নির্দেশনা। আজকে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বজয়ী হাফেজ ও ক্বারীদের শুভেচ্ছা জানাই। আমরা এ পর্যন্ত প্রতিযোগিতার জন্য বিভিন্ন দেশে ১১৮ জন হাফেজকে পাঠিয়েছি। তাদের মধ্যে ৯৬ জন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করেছেন। হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরীম  আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন  প্রতিযোগিতায় বিজয়ী  হয়ে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে।

তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বিশ্বের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পবিত্র হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে বাংলার এই ক্ষুদে হাফেজ মাত্র ১৩ বছর বয়সে পৃথিবীর ১১১টি দেশের প্রতিযোগিদের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করে বাংলাদেশের জন্য যে সম্মান বয়ে এনেছেন তা এদেশের শিশু-কিশোরদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে।

প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেন, আজকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিছক কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়। এ সংবর্ধনার মাধ্যমে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আবেগ আর বিশ্বাসকে সম্মান জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই সংবর্ধনা হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরীমের মতো লক্ষ লক্ষ শিশুকে পবিত্র কুরআন শিক্ষার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করে তুলবে । 
  
ফরিদুল হক খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, জাতীয় পর্যায়ে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা) পালন, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন, বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে জায়গা বরাদ্দ, কারাইলের মারকাজ মসজিদ সম্প্রসারনের জন্য জমি বরাদ্দ, হজ পালনের জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা সহ  অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারও ইসলামের প্রচার ও প্রসারে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ, পবিত্র কুরআনের ডিজিটাইজেশান, ইসলামি আররী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, হজ্ব ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল সুবিধা চালু করণ, সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশেই সম্পন্ন করা, কওমী শিক্ষার্থীদের দাওরায়ে হাদীস সনদকে মাস্টার্স সমমান প্রদান, মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আলেম-ওলামাদের কর্মসংস্থান সহ ইসলামের খেদমতে বহুবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ঢাকা ২০২০ উপলক্ষে ‘ওআইসি আন্তর্জাতিক যুব ক্বিরাআত প্রতিযোগিতা-২০২০  আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আজকের অনুষ্ঠান থেকে আমি বিভিন্ন সময়ে বিশ্বজয়ী হাফেজ ও কারীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরিমকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। পাশাপাশি তার বাবা-মা ও শিক্ষকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে তাকরিমের বাবা হাফেজ আব্দুর রহমান বলেন, আমার মেঝো ছেলে তাকরিম বিশ্ব দরবারে বাংলার পতাকাকে সমুন্নত করেছে। ওস্তাদদের পরিশ্রম এবং দেশের মানুষের দোয়ায় সে এই সফলতা পেয়েছে। তার জন্য সবার দোয়া চাই।

হাফেজ তাকরীমের শিক্ষক ও তার মাদরাসার মুহতামীম মুরতাজা হাসান ফয়েজী বলেন, এই সংবর্ধনার জন্য আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাকরীমের প্রথম শিক্ষক তার বাবা। তিনি সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন এই সফলতায়। তিনি সঠিক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক নির্বাচন করতে পেরেছিলেন।

ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো. মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন  বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি রুহুল আমীন, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফী মিজানুর রহমান, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মু. আব্দুল আউয়াল হাওলাদার, হাফেজ তাকরীমের পিতা হাফেজ আব্দুর রহমান, হাফেজ তাকরীমের মাদ্রাসা মারকাজে ফায়জিল  কুরআনের মুহতামীম  মুফতী মুরতাজা হাসান ফয়েজী প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানে দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম এর খতিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর  আল্লামা মুফতী রুহুল আমীন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে সৌদি আরবের মক্কায় পবিত্র হারাম শরিফে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে তৃতীয় স্থান অর্জন করে তাকরিম। প্রতিযোগিতায় ৫টি শাখায় ১১১টি দেশের ১৫৩ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। প্রতিটি শাখায় ৩ জন করে মোট ১৫ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এর মধ্যে তাকরিম চতুর্থ শাখায় (শুদ্ধ উচ্চারণসহ ১৫ পারা কোরআন মুখস্থ) তৃতীয় হয় তাকরিম। পুরস্কার হিসেবে তাকরিম পেয়েছে ১ লাখ রিয়াল বা প্রায় ৩১ লাখ টাকা।

অনুষ্ঠানে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তার উপদেষ্টা ও মক্কা নগরীর গভর্নর খালেদ আল ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ, দেশটির ইসলাম ও দাওয়াহবিষয়ক মন্ত্রী ড. আবদুল লতিফ বিন আবদুল আজিজ আলে শেখ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার ভাদ্রা গ্রামের হাফেজ আব্দুর রহমানের ছেলে সালেহ আহমাদ তাকরিম। সে রাজধানী ঢাকার ‘মারকাযু ফয়জিল কোরআন আল ইসলামী মাদ্রাসা’র কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থী।

এর আগে গত মার্চে ইরানে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিল তাকরিম। এর পর,  গত ২৮ মে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পরীক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়।

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়