খুলনার সেই রহিমা বেগম যেভাবে উদ্ধার হলেন
খুলনা ব্যুরো || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
খুলনা (২৫ সেপ্টেম্বর): স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকা খুলনার বহুল আলোচিত রহিমা বেগমকে ফরিদপুরের একটি বাড়ি থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর ফলে, কথিত অপহরণ ও লাশ উদ্ধার নাটকের অবসান হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তিনি ২৮ দিন আত্মগোপনে ছিলেন। এ সময় তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এরপর রাত দুইটার দিকে তাকে নিয়ে আসা হয় দৌলতপুর থানায়।
এদিকে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, রহিমা বেগম ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুরে আব্দুল কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে রয়েছেন। আরও খোঁজ নিয়ে তারা বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এরপর দৌলতপুর জোনের এডিসি আব্দুর রহমান ও দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছায়। পুলিশ দেখে, রহিমা ওই বাড়িতে বসে দুই নারীর সঙ্গে গল্প করছেন।
তিনি আরও জানান, ওই বাড়িতে রহিমা বেগমকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। তবে ওই বাড়ির বাসিন্দারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, রহিমা তাদেরকে জানিয়েছেন তিনি বেশ কয়েকদিন চট্টগ্রাম ও মোকসেদপুরে ছিলেন। এরপর ১৭ আগস্ট বোয়ালমারীতে এ বাড়িতে যান। তখন তার একটি ব্যাগে ২ প্যাকেট বিস্কুট, কিছু কাগজপত্র ও পরনের কয়েকটি কাপড় ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রহিমা যে আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে ছিলেন, সেই ব্যক্তি বেশ কয়েক বছর আগে খুলনার সোনালি জুট মিলে চাকরি করতেন। তখন তিনি রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পরে তিনি বোয়ালমারীতের চলে যান। বেশ কিছুদিন আগে রহিমার ছেলে একবার আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে বেড়াতে যান।
মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা রহিমা বেগমকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। রহিমা বেগম কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। সে কারণে ট্রাকিং করা সম্ভব হয়নি। রহিমা অপহরণ মামলাটির তদন্ত দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে পিবিআইতে গেছে। তারপরও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ মামলাটির ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল। পিবিআই তদন্ত করে দেখবে রহিমা বেগম কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিল এবং কোথায় কোথায় ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আলামিন, আব্দুল কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে, ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা এলাকায় উদ্ধার হওয়া এক নারীর মরদেহ রহিমা বেগমের বলে ২২ আগস্ট ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। পরদিন ফুলপুর থানায় গিয়ে তিনি ছবি দেখে ও নিহতের পায়জামা দেখে ওই লাশ তার মায়ের বলে দাবি করেন। তিনি লাশের ডিএনএর সঙ্গে তার ডিএনএ মিলিয়ে দেখারও আবেদন করেন।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রহিমা ও তার মেয়েরা অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। তিনি মূলত স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন।