শুক্রবার

১৯ এপ্রিল ২০২৪


৬ বৈশাখ ১৪৩১,

১০ শাওয়াল ১৪৪৫

১৫ আগস্ট জাতির ললাটে বিশ্বাসঘাতকের কলঙ্ককালিমা লেপন করেছে: মোস্তাফা জব্বার

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ১৫ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ২১:৫১, ১৫ আগস্ট ২০২২
১৫ আগস্ট জাতির ললাটে বিশ্বাসঘাতকের কলঙ্ককালিমা লেপন করেছে: মোস্তাফা জব্বার

আলোচনা সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার

ঢাকা (১৫ আগস্ট): ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, পনেরই আগস্টের হৃদয় বিদারক ঘটনা বাঙালি জাতির ললাটে ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকের জাতির কলঙ্ককালিমা লেপন করেছে। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের সব সাধ-আহলাদকে বিসর্জন দিয়ে, বৈরী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কারাগারে অধিকাংশ জীবন কাটিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন একটি জাতি; সেই জাতিরই কিছু কুলাঙ্গারের হাতে সপরিবারে নিহত হওয়ার নজির বড়ই বেদনাদায়ক ও নির্মম! অকৃতজ্ঞই নয়, এ কৃতঘ্নতা।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিদেশে থাকার কারণে সৌভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে মৌলবাদী পাকিস্তানপন্থী তাঁবেদার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি আজ ১৫ আগস্ট (সোমবার) ঢাকায়  জিপিও মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস  ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  ৪৭তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আরও বলেন, এদিকে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্য ছিল ১৯৭৫ সালে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করে তাদের সেই অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট, তেশরা নভেম্বরের রক্তের প্রবাহ মাস্টার দা সুর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার. তিতুমীর আর হাজী শরিয়ত উল্লাহর রক্ত প্রবাহ এক হয়ে মিশে আছে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা ল্যাফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের দৃঢ়তার বিভিন্ন ঘটনাবলী তুলে ধরেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়েও  বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন, প্রাথমিক ও কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন, পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন, টিএন্ডটি বোর্ড স্থাপন করেছেন, উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষার আমূল পরিবর্তনের সূচনা করে ছিলেন। দেশের প্রায় প্রতিটি  সেক্টরকে যুগের চাহিদা মেটানোর উপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেন। বস্তুত পক্ষে একবিংশ শতাব্দির আজকের জীবনযাপন এবং ৪১ সালে যেখানে বাংলাদেশ পৌঁছাবে তার বীজ বপন করে গেছেন তিনি।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাড়ে আঠারো বছরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ বেয়ে তা অংকুরিত করে বৃক্ষে রূপান্তরিত করেছেন। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তুলে ধরে বলেন, ইয়াহিয়া খানের লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্কের অধীনে অভ্যন্তরিণ বিরোধীতা সত্ত্বেও সত্তরের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ ছিল বঙ্গবন্ধুর দৃরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তের ফসল। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে বিচ্ছিন্ন আন্দোলন বলার সুযোগ ছিল না। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নিরঙ্কুশ বিজয়ে পুরো দেশের সকল জনতা এক হবার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাঙালির এই যুদ্ধে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে।  

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা ক্ষমতা দখল করেই পাকিস্তানি প্রভুদের খুশি করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে এহেন কাজ নেই যা করেননি। একাত্তরের স্বীকৃত রাজাকার শাহ আজিজ, আব্দুল আলিম, মাওলানা মান্নানকে বানালেন মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাকারী রাজনৈতিক দল জামাতের আমির গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব প্রদান ও একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাতের রাজনীতিতে করা হয় পুনর্বাসিত। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া হয়। দালাল আইন বাতিল করে সাড়ে ৭ হাজার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্তি ও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আসামিদের দেয়া হয় দায়মুক্তি।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়কদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মুখথুবড়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার মাসকেই ষড়যন্ত্রকারীরা বেছে নেওয়া হয়। ১৫ আগস্ট ৭৫ সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা করে পরাজিত শক্তিরা প্রমাণ করেছে তারা কখনো বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারছে না। 

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর সভ্যসমাজের কাছে আমাদের নীতি-নৈতিকতা, সংস্কৃতি ও জাতীয় চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয় এ হত্যাকাণ্ডের পর। আজ ১৫ আগস্টকে মনে রেখে আমরা কেবল অশ্রু বিসর্জন করি না। এই শোক থেকে শক্তি অর্জন করেছি। আমাদের পিতার রক্তের ঋণ তখনই আমরা শোধ করতে পারব, যখন তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব, তার নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করতে পারব, তার অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নিতে তার রক্তের উত্তরাধিকার আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাহায্য করতে পারব।

মুখ্য আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর বন্দী অবস্থায় এবং সেখান থেকে মুক্তি লাভের নেপথ্যের বিভিন্ন হৃদয়স্পর্শী ঘটনাবলীসহ বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি জীবনের অজানা বর্ণাঢ্য বিভিন্ন ঘটনাবলী তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সত্যিই এ দেশের মানুষ অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছিল। যার যা ছিল তারা তাই দিয়ে যুদ্ধে সাহায্য করেছে। একজন বিধবা তার একমাত্র শিশু সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধ যোগ দেওয়ার জন্য তার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাবা আমি গরীব মানুষ, আমার দেওয়ার মতো কিছু নেই। আমার এই সন্তানটিকে তোমাদের সাথে যুদ্ধে নিয়ে নাও, আমার এই সম্পদটিকে তোমার হাতে তুলে দিলাম।’ মায়ের এই আকুতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের ভালবাসার এটি একটি ছোট্ট দৃষ্টান্তমাত্র।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে  বিটিআরসির'র চেয়াররম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, ডাক অধিদপ্তরের  মহাপরিচালক  মো. ফয়জুল আজিম এবং বিটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন  বক্তৃতা করেন। 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়