১০২ বছরে পা দিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ফাইল ছবি
ঢাকা (০১ জুলাই): স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অনন্য অবদান রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই ভূখণ্ডে সংঘটিত সকল গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এক কথায় বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রাম-অর্জন-গৌরবের সঙ্গে মিশে গেছে পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সে সময় ৩টি অনুষদ, ১২টি বিভাগ এবং ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এই দিনটি প্রতি বছর ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
অবশ্য, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসও বাঙালির অন্যসব অর্জনের মতো প্রতিকূলতার ইতিহাস। ১৮৪৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর সমস্ত ভারতবর্ষে নবজাগরণ সৃষ্টি হতে থাকে। আর এই নবজাগরণ তৈরি করে শিক্ষিত ও সচেতন সমাজ। তৎকালীন পূর্ব বাংলায়ও তৈরি হয় এমন সচেতন সমাজ। আর তাঁরাই অনুভব করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার।
এরপর, ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ওই বছরের ২৭ মে গঠিত হয় ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নাথান কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য এই নাথান কমিশন গঠিত হয়। এর পর ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইনসভায় 'দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯২০' পাস হয় এবং ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি দেন। ১৯২১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নিজস্ব স্বাধীন প্রতিবাদী চিন্তাধারা সূতিকাগার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মুসলিম লীগের ডাকে পাকিস্তান আন্দোলনে সাড়া দেয়। পাকিস্তান আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে। পাকিস্তান আদায়ের পর ১৯৪৮ সালে যখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কার্জন হল প্রাঙ্গণে উদ্যোগে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন তৎক্ষণাৎ ছাত্ররা এর বিরোধিতা করে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়। আর এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা ভাষার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারি। ভাষা আন্দোলন নয় শুধু, বাঙালির অধিকার আদায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা,৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৭১ সালের দুই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহুজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। স্বাধীনতার পরেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনও এর অংশ।