বৃহস্পতিবার

২৫ এপ্রিল ২০২৪


১২ বৈশাখ ১৪৩১,

১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সবার দৃষ্টি এখন নাসিক নির্বাচনে

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২০:০৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ২০:০৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২২
সবার দৃষ্টি এখন নাসিক নির্বাচনে

গ্রাফিক্স:বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (১৪ জানুয়ারি): আগামী রবিবার ঐতিহাসিক শহর নারায়ণগঞ্জে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেয়র নির্বাচন।

নারায়ণগঞ্জ দেশের অন্যতম প্রধান নদী বন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র। অসংখ্য পাটকলের জন্য নারায়ণগঞ্জ এক সময় প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে পরিচিত ছিল।

এ বছর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র ও ২৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩১৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী এবং সংরক্ষিত আসন থেকে ১৬২ জন কাউন্সিলর এবং ৩৫ জন মহিলা কাউন্সিলর এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এর আগে ২০১৬ সালে নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী জয়লাভ করেন। আইভী ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নাসিকের প্রথম নির্বাচনেও জয়ী হন এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।

নাসিক নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ: নাসিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে গেলে একাধিক বিষয় সামনে চলে আসে। মূলত রাজনৈতিক কারণেই নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন টক অব দ্য টাউন। রাজনৈতিক বিরোধ এবং তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তরাধিকারের কারণেই এ নির্বাচন দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

শিল্পগত গুরুত্ব: প্রথমত, দেশের শিল্পখাতের সমৃদ্ধির জন্য নারায়ণগঞ্জ বেশি পরিচিত। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থান এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এটি দেশের প্রধান ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। ঐতিহাসিকভাবেই এখানে কাপড়, পাটকল এবং নিট শিল্প গড়ে উঠেছে।

বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতিতে নারায়ণগঞ্জের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এখানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং পোশাক খাতে বিলিয়ন-ডলার-মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক সুযোগ সুবিধা এবং ভৌগোলিক অবস্থান একে নিটওয়্যার, তৈরি পোশাক (আরএমজি) এবং টেক্সটাইল শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করেছে।

রাজনৈতিক গুরুত্ব: রাজনৈতিক আধিপত্যই এখানে মতবিরোধের মূল কারণ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই শহর থেকে সুবিধা নিয়েছে।

রাজধানীর কাছাকাছি হওয়ায় একে ঢাকার একটি অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তাই এখানকার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এবং ঢাকার নেতৃবৃন্দ এখানে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে খুব সহজেই অংশগ্রহণ করতে পারেন। তাই নারায়ণগঞ্জকে যেকোনো রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এখন সেখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নগরীর টানা মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আলী আহমেদ চুনকার মেয়ে আইভিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্য।

শামীম ওসমানের ছোট ভাই সেলিম ওসমানও জাতীয় পার্টির মনোনীত সংসদ সদস্য। বড় ভাই নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর তিনি তার নির্বাচনী এলাকার এমপি হন।

বিএনপির সাবেক নেতা তৈমুর আলম খন্দকারও নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। দলের অবস্থান উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রাজনৈতিক উত্তরাধিকার: নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিতে আওয়ামী লীগের দুটি উপদল এখন সক্রিয় রয়েছে। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন শামীম ওসমান এবং অন্যটির নেতৃত্বে আছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

শামীম ওসমান হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য একেএম সামসুজ্জোহার ছেলে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আরেক রাজনীতিবিদ আলী আহমেদ চুনকার মেয়ে হচ্ছেন আইভী।

সামসুজ্জোহা এবং চুনকার মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্ব দুই পরিবারের মধ্যে এখনও বহাল রয়েছে। প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে এ দুই পরিবার সব সময়ই দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে।

আইভী ও শামীমের মধ্যে দীর্ঘ দ্বন্দ্ব এর আগেও বেশ কয়েকবার খবরের শিরোনামে এসেছে। এবার মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও দুজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।

বিএনপির সাবেক নেতা তৈমুরও স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানিয়েছেন। যেহেতু বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে, সেহেতু তিনি এখন নিজের মতো করে নির্বাচনের কাজ করছেন।

এ বছর নাসিক মেয়র নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিল না। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও বিএনপি নিষ্ক্রিয় ছিল। তৈমুর আলম খন্দকারও তখন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এবার তৈমুর পুরোদমে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন।

জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। মেয়র পদে জয়লাভ করা বিজয়ী দলকে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা দিতে পারে।

তবে বিভিন্ন কারণে এ নির্বাচনে পরাজিত হলে আওয়ামী লীগের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়