ফ্রান্সে বিচারকাজে সহায়তা করছে কুকুর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি:ফ্রান্সের আদালতে বিচারকাজের সহায়তা করছে লোল নামের কুকুর
ঢাকা (২৫ জুন): কুকুরের প্রভুভক্তির কথা আমাদের কারো অজানা নয়। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের নিরাপত্তা এবং সম্পদ রক্ষায় কুকুর বিশ্বস্ত প্রহরির ভূমিকা পালন করছে। মনিবের জীবন এবং সম্পদ রক্ষায় কুকুর প্রাণ দিতেও পিছ পা হয় না। বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা বাহিনীতেও প্রশিক্ষিত কুকুরের ব্যবহার রয়েছে।
এবার ফ্রান্সের আদালতে বিচারকাজের সহায়তা করতে কুকুরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দু বছর আগে ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সে আদালতে কর্মকর্তাদের সহায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো কুকুর ব্যবহার করা হয়। পারিবারিক নির্যাতন বা যৌণ নিপীড়নের ভিকটিমের সহায়ক হিসেবে আদালতে কুকুর তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
আইনজীবি ফেডেরিক আমেন্ডেরস যুক্তরাস্ট্রের সিয়াটলে এ ধরণের নিরাপত্তার কথা শুনে ফ্রান্সের আদালতেও সেটা প্রবর্তণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
আদালতে ল্যাবরাডর জাতের কুকুর লোলকে সহায়ক হিসেবে নেওয়ার আগে একে নতুন কেউ বা শিশুদের দেখে শান্ত থাকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আদালতে পাল্টাপাল্টি জেরার মতো উত্তেজনাকর, আবেগপূর্ণ পরিস্থিতিতেও লোল নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম।
ফেডেরিক আমেন্ডেরস বলেন, কোন মামলার বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর, আমার যদি মনে হয় কুকুরের উপস্থিতি ভিকটিমকে ন্যায় বিচার পেতে সহায়ক হবে, তাহলে আমি কুকুরের সাহায্য চেয়ে পাঠাই। ভিকটিমের পাশে কুকুর বসে থাকলে অনেক সময় পরিস্থিতি সামলে নিতে ভিকটিমের জন্য সহজ হয়।
লোল এখন পর্যন্ত ৮০টি অপরাধ তদন্তে তিন থেকে ৯০ বছর বয়সী ভিকটিমকে সহায়তা করেছে। একটি ঘটনার ক্ষেত্রে প্রবীন এক দম্পতি চুরি হওয়ার পর বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। কিছুতেই তারা পুলিশের কাছে ওই ঘটনার বিবরণ দিতে পারছিলেন না। কিন্তু পরে কুকুরের উপস্থিতিতে তারা বেশ স্বস্তির সঙ্গে ঘটনার বিস্তারিত পুলিশকে জানাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
ফ্রান্সের গড় বড় শহরের মতো গ্রামীন জনপদে মাদক সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা খুব বেশি নয়। সেখানে যৌণ নির্যাতন বা পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাই বেশি ঘটে থাকে।
প্রথম দিকে লোকাল বার এসোসিয়েশনের প্রধান এবং পারিবারিক আইনিজীবি মুস্তাফা ইয়াসফিকে আইনি সমস্যায় কুকুরকে সম্পৃক্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তার সহকর্মীরা এতে তাকে সমর্থক করতেন না। তবে এখন কোন মামলার অগ্রগতির প্রয়োজনে তারাই লোলের মতো কুকুরের সহায়তা নিচ্ছেন।
মুস্তাফা ইয়াসফি বলেছেন, এ ধরণের আইনি সমস্যার ক্ষেত্রে কুকুরের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মানবতাকে বিচার ব্যবস্থায় নিয়ে আসার জন্য সমগ্র বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গেই কুকুর সম্পৃক্ত থাকে।
গত দুই বছরে কুকুরের সহায়তার এ স্কিমটি বেশ সফলতার সঙ্গে এগিয়েছে। তাই ফ্রান্সের অন্যান্য আদালতেও এখন তাদের মামলা এগিয়ে নিতে লোলের সহায়তা নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্যারিসের শহরতলী বোবিগনির বিশাল আদালতেও কুকুরের সহায়তা নিতে নিজেরা কুকুর রাখার উদ্যোগ নিচ্ছে।
ফ্রান্সের ২০টি আদালতে এ বছরের শেষ নাগাদ কুকুর রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ল্যাবরাডরের সঙ্গে অন্য জাতের কুকুরও কাজে লাগানো হচ্ছে।
বর্তমানে আদালতে এসব কুকুরের কোন প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান নেই। তবে খুব শীঘ্রই এ অবস্থার পরিবর্তন হতে চলেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাকরনের ক্ষমতাসীন দলের এমপি হুগেট তিয়েগনা তার আরো ২০ সহকর্মীকে নিয়ে বিচার ব্যবস্থায় কুকুরের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে পার্লামেন্ট একটি বিল উত্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
হুগেট তিয়েগনা বলছেন, বিলটি যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে, আইন মন্ত্রণালয় থেকে কুকুরের প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। ১১ মাসের প্রশিক্ষণের জন্য এমন একটি কুকুরের পেছনে ১৪,৬০০ পাউন্ড থেকে ২০,৬০০ পাউন্ড পর্যন্ত খরচ হয়ে থাকে।