শুক্রবার

২৬ এপ্রিল ২০২৪


১৩ বৈশাখ ১৪৩১,

১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

নেই পরীক্ষা, স্কুলে শুধু খেলার মাধ্যমেই শিক্ষায় সেরা যে দেশ

ডেস্ক রিপোর্ট || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২  
নেই পরীক্ষা, স্কুলে শুধু খেলার মাধ্যমেই শিক্ষায় সেরা যে দেশ

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা (০৮ সেপ্টেম্বর): ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থাকে পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেছে ইউনেসকো। রিপোর্টে জানা গেছে, শিক্ষায় আমেরিকা, ব্রিটেনকেও অনেক ক্ষেত্রে হার মানায় ফিনল্যান্ড।

ফিনল্যান্ডের ছকভাঙা শিক্ষা ব্যবস্থায় ছোট থেকে শিশুরা স্কুলেই যায় না। ছোটবেলায় স্কুলে নেওয়া হয় না কোন পরীক্ষাও। স্কুলে গিয়ে বাচ্চারা খেলাধুলো করে সময় কাটায়। তাহলে কি করে পড়াশোনায় বিশে^ অন্যতম সেরা হিসেবে চিহ্নিত হলো ফিনল্যান্ড? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য।

ফিনল্যান্ডের শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় সাত বছর বয়স থেকে। এর আগে শিশুরা স্কুলেই যায় না। ছোটদের নার্সারি স্কুলের অস্তিত্ব অবশ্য ফিনল্যান্ডেও রয়েছে। তবে সে সব স্কুলে লেখাপড়া নয়, শিশুরা কেবল সেখানে খেলাধুলো করে।

ফিনল্যান্ডের মানুষ মনে করেন, সাত বছরের আগে শিশুদের মাথায় লেখাপড়া নিয়ে চাপ দেওয়া উচিত নয়। তাদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের সময় দেওয়া হয়। সাত বছর বয়সের আগে পরিবারের সদস্যদের কাছে শিশু লেখাপড়ার প্রাথমিক পাঠ পেতেই পারে, তবে স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ দেওয়া হয় না।

ফিনল্যান্ডে সাত বছরের কমবয়সি শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয় অন্য ভাবে। খেলাধুলোর মাধ্যমে তাদের ভেতরের সৃজনশীল সত্তার বিকাশ ঘটানো হয়। সমবয়সিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, সকলে মিলেমিশে থাকা, এক সঙ্গে কোনও গঠনমূলক কাজ করা- এ সবই শেখানো হয় ছোটদের নার্সারি স্কুলে।

ফিনল্যান্ডে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল কেবল ন’বছর বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ, সাত বছর বয়সে স্কুলে ঢুকে ১৬ বছরেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাট শেষ করা হয়। কেউ অবশ্য ইচ্ছা করলে ১৬ বছর বয়সের পরও স্কুলে বা কলেজে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে পারেন। তবে এটাই একেবারেই ঐচ্ছিক।

ফিনল্যান্ডে কোথাও কোনও স্কুলে প্রথম ছ’বছর পরীক্ষা হয় না। শিশুদের মধ্যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবকে প্রশ্রয় দেন না ফিনল্যান্ডের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ১৬ বছর বয়সে শিক্ষার্থীকে একটা মাত্র কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় বসতে হয়। তার নাম ন্যাশনাল ম্যাট্রিকুলেশন এক্সাম।

সংবাদ মাধ্যমের তথ্য বলছে, পৃথিবীর সমস্ত স্কুলের পড়ুয়াদের চেয়ে কম সময় ক্লাস করে ফিনল্যান্ডের পড়ুয়ারা। তবু তাদের শিক্ষাগত পারদর্শিতা অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। সেখানকার স্কুলে মাত্র পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা ক্লাস হয়। স্কুল শুরু হয় সকাল ৮টা-৯টার মধ্যে। দুপুর ২টার মধ্যেই স্কুল ছুটি।

স্কুলে প্রতি ৪৫ মিনিট পড়াশোনার পর ১৫ মিনিটের বিরতি দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলোর জন্য এই বিরতি।

ফিনল্যান্ডে কোনও স্কুলের মধ্যে কোনও প্রতিযোগিতা নেই। সব স্কুলই সমান। যে কোনও স্কুলে যে কোনও ছাত্রছাত্রীকেই সমান গুরুত্বের সঙ্গে পড়ানো হয়। সেখানকার সবাই মনে করেন, প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতাই সাফল্যের চাবিকাঠি। সেখানে বেসরকারি স্কুলের কোনও অস্তিত্বই নেই।

ইউনেসকোর রিপোর্ট বলছে, ফিনিশীয় শিক্ষকরা পৃথিবীর যোগ্যতম এবং দক্ষতম শিক্ষকদের মধ্যে প্রথম সারিতে। শিক্ষকের চাকরি পেতে সে দেশে যত মানুষ আবেদন জানান, তাঁদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ সুযোগ পান। ডাক্তার বা আইনজীবীর তুলনায়  সেখানে শিক্ষকদের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়।

স্কুলে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয়। দুপুরে স্কুলেই তারা পেট পুরে খাওয়াদাওয়া করে।

স্কুলে টানা ছ’বছর ধরে পড়ুয়ারা একই শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকে। শিক্ষক বদল হয় না। এতে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়। একে ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ মনে করা হয়।

স্কুলে প্রথমেই বাচ্চারা ফিনিশ ভাষা শেখে। তার পর শেখানো হয় সুইডিশ। তার পর তৃতীয় ভাষা হিসাবে বাচ্চারা ১১ বছর বয়স থেকে ইংরেজি শিখতে শুরু করে। স্কুল শেষের পরীক্ষায় ইংরেজি থাকেই না। প্রথম দুই ভাষার পরীক্ষা হয়।

এই শিক্ষাব্যবস্থাতে পড়াশোনায় সাফল্যের মুখ দেখেছে ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা। সেখানকার ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রতি বছর হাই স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে বের হয়। নিরক্ষর বলে সেখানে কেউ নেই বললেই চলে।

 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়